ব্রিটেনের বিরোধী দলীয় নেতা স্যার কিয়ের স্টারমার এর উপর হামলার চেষ্টা : গ্রেফতার ২

Published: 8 February 2022

এম কে জিলানী , লন্ডন :

সোমবার স্যার কিয়ের স্টারমার এবং ছায়া পররাষ্ট্র সচিব ডেভিড ল্যামিকে অ্যান্টি-ভ্যাক্স বিক্ষোভকারীরা “বিশ্বাসঘাতক” এবং “জিমি স্যাভিল” বলে চিৎকার দিয়ে সংসদের কাছে বেশ কয়েকজন উগ্র পন্থি তাঁদের ঘিরে ফেলে হামলা করার চেষ্টা চালায় এ সময় তারা একটি পুলিেশর গাড়িতে আশ্রয় নেন । যদিও পুলিশ তাদের বাঁচাতে তক্ষনাৎ এগিয়ে আসে এবং হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সমর্থ হয়।

একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, যে একজন প্রতিবাদকারী একজন জল্লাদের ফাঁসের মতো কাপড় পরেছিলো এবং অন্য একজন প্রতিবাদকারী স্যার স্টারমার কে “জিমি স্যাভিল” বলে চিৎকার করেছিলেন। ল্যামি বলেন, ব্রিটিশ গণতন্ত্রে ভয়ভীতি, হয়রানি ও মিথ্যার কোনো স্থান নেই এবং কোনো শক্তিই কখনই কোনো গনতান্ত্রিক কাজে বাধা দিতে পারবে না।

ব্রিটিশ প্রধান মন্ত্রী বরিস জনসন গত সপ্তাহে ব্যাপক ক্ষোভ উস্কে দিয়েছিলেন যখন তিনি সংসদে বলেছিলেন যে স্যার কিয়ের স্টারমার ( লেবার বিরোধি নেতা ) পাবলিক প্রসিকিউশনের পরিচালক হিসাবে কাজ করার সময়ে জিমি স্যাভিলকে রক্ষা করেছিলেন। এই বক্তব্য প্রাক্তন টোরি চিফ হুইপদের কাছ থেকেও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে এবং দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারীর পদত্যাগের জন্য বিশেষ প্ররোচনা দিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে বরিসের প্রধানমন্ত্রিত্বের সময় খুব কমে আসছে এবং খুব অল্প সময়ের মধ্যে পরিবর্তন হতে পারে, যদিও বরিস এই সম্ভাবনা একেবারেই নাকচ করে দিয়েছেন।

জিমি স্যাভিল ছিলেন একজন ব্রিটিশ মিডিয়া ব্যক্তিত্ব যিনি তার দাতব্য কাজের জন্য জনপ্রিয় ছিলেন।২০১২ সালের শেষের দিকে তার মৃত্যুর প্রায় এক বছর পরে রিপোর্ট প্রকাশিত হয় যে স্যাভিল তার সারাজীবনে শত শত লোককে যৌন নির্যাতন করেছে, স্যাভিল প্রায়ই এই কথিত ভুক্তভোগীদের সংস্পর্শে আসেন বিবিসির জন্য তার সৃজনশীল প্রকল্প এবং জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য তার দাতব্য কাজের মাধ্যমে।
এই জিমি স্যাভিল কে বিরোধী দলীয় নেতা স্যার স্টারমার এক সময় বাঁচিয়েছেন বলে বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

প্রাক্তন চিফ হুইপ জুলিয়ান স্মিথ জনসনের সমালোচনা করা সাতজন টোরি এমপিদের মধ্যে একজন এবং তিনি ঘটনাটিকে ভয়ঙ্কর বলে বর্ণনা করেন । তিনি টুইট করে জানান ,”আমাদের গণতন্ত্রের জন্য এবং নিরাপত্তার জন্য এটি সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ যে স্টারমার এর বিরুদ্ধে করা মিথ্যা ‘স্যাভিল এর সাথে সমৃক্তততা”সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করা হবে ।

স্যার রজার গ্যাল, অ্যান্থনি ম্যাঙ্গনাল এবং টোবিয়াস এলউড এই সকল টোরি এমপিরা যারা জনসনের প্রতি অনাস্থার চিঠি পাঠিয়েছেন – সেইসাথে স্টিফেন হ্যামন্ড, যিনি প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তাদের কাছ থেকেও ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান করেছেন ।তারা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী যেন ক্ষমা চান স্যার স্টারমার এর কাছে বক্তব্যের জন্য।

টোরি এমপি রব লারগানও বলেছেন পরিস্থিতি শান্ত করার সময় এসেছে। সবসময় এটি গুরুত্বপূর্ণ আমরা যা বলি এবং কীভাবে বলি তা সংসদের বাইরেও প্রতিধ্বনিত হয়। এটা একটি ভয়ঙ্কর বাস্তব বিশ্বের পরিণতি হতে পারে, নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দায়িত্ব আছে বিতর্কের উত্তাপ কমিয়ে আনা, আগুনে জ্বালানি যোগ করা নয়।”

সোমবার রাতে ঘটনাটি সংসদ সদস্যদের মধ্যে নতুন করে ক্ষোভের জন্ম দেয়। লেবার-এর ক্রিস ব্রায়ান্ট টুইট করেছেন যে জনসনের মন্তব্যগুলি স্টারমার এবং স্যাভিলের মধ্যে সংযোগগুলি প্রচারের জন্য সরাসরি দায়ী।এটা আশকংকাজনক যখন একজন দায়িত্বশীল প্রধানমন্ত্রী এতো নিচে নেমে পড়েন এবং কট্টর-দক্ষিণ পন্থী অনুসরণকারীদের মিথ্যাকে পুনর্ব্যবহার করেন তখন এমন ঘটনা ঘটে। রাজনৈতিক অবক্ষয়ের প্রভাব আছে। জনসনের কোন নৈতিক মানদণ্ড নেই বলে মত প্রকাশ করেছেন এই এম পি।

ছায়ামন্ত্রী ইয়াসমিন কোরেশি বলেছেন: “প্রধানমন্ত্রী এটিকে আবারো সামনে আনছেন এবং বারবার উত্সাহিত করেছেন।” এমপি এবং প্রাক্তন মেয়র প্রার্থী লিয়াম বাইর্ন বলেছেন: “এই দেশের সেরারা সবসময় খারাপকে পরাজিত করবে। কিন্তু এখন আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি যে বরিস জনসন কী ধরনের আচরণ উসকে দিতে প্রস্তুত।

লন্ডনের লেবার মেয়র সাদিক খানও বরিস জনসনকে মিথ্যা বলার জন্য দায়ী করেছেন। “মিথ্যা খবর যখন আরও ভালভাবে জেনে সবসময় মন্তব্য করা উচিত এবং এমন লোকেদের দ্বারা ছড়িয়ে দেয়া হলে এবং বিশ্বাসযোগ্যতা দেওয়া হলে এমনটাই ঘটে। স্যার কিয়ার স্টারমার এবং ডেভিড ল্যামির সাথে একাত্মতা জানিয়েছেন লেবার সমর্থিত এই লন্ডন মেয়র। দ্রুত হস্তক্ষেপের জন্য পুলিশ অফিসারদের ধন্যবাদ ও জানান লন্ডন এর এই মেয়র।

স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড বলেছে যে স্টারমারকে নিরাপদে নিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশ ভ্যান এ উঠানোর পরে ভিক্টোরিয়া নামিক স্থানে পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একটি মেট পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে: সোমবার, ৭ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৫ টার কিছু পরে, নিউ স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের কাছে একদল বিক্ষোভকারী দ্বারা ঘিরে থাকা একজন ব্যক্তিকে একটি পুলিশ গাড়ি ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিয়ে যায়।একজন পুলিশ অফিসারকে ট্র্যাফিক কোন নিক্ষেপ করার পরে এনং একজন জরুরী কর্মীকে লাঞ্ছিত করার জন্য ঘটনাস্থলে একজন পুরুষ এবং একজন মহিলাকে গ্রেপ্তার করা হয় । তাদের পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
ব্রিটিশ রাজনীতিতে একের পর এক ঘটনা বরিস এর প্রধানমন্ত্রিত্বের স্থায়িত্বকে আরো নড়বড়ে করে দিচ্ছে
তার উপর নিজের দলের এম পি দের অনাস্থা জ্ঞাপন হলো আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়া , কফিনে শেষ পেরেক কত দিন হতে বাকি সেইটাই এখন দেখার বিষয় !
তবে কি কেয়ার স্টারমারকে আক্রমণের মধ্যে দিয়ে আরো তরান্নিত হতে চললো বরিস এর প্রধানমন্ত্রিত্বের অবসান। ব্রিটিশ রাজনীতিতে এই হাওয়া বরিস এর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে কিছুদিন আগে হওয়া জরিপে বরিসের জনপ্রিয়তা তলানীতে ঠেকেছে এর পর নিজ দলের এম পিদের জনসমর্থন হারানো তার জন্য অশনি সংকট বটে , তবে ডান পন্থী দের উস্কানি মূলক বক্তব্য দিয়ে আঁকড়ে থাকতে চাইছেন তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদ।