পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পিটিয়ে হত্যা

Published: 14 February 2022

পোস্ট ডেস্ক :


ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পাকিস্তানের খানেওয়ালে গ্রামে পিটিয়ে ‘মানসিক ভারসাম্যহীন’ এক ব্যক্তিকে হত্যার পর দুটি মামলা হয়েছে। এ অভিযোগে আটক করা হয়েছে ৮৫ জনকে। মৃত্যুর পর নিহতকে দাফন করা হয়েছে স্থানীয় কবরস্তানে। এ ঘটনায় শূন্য সহনশীলতার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পিটিয়ে হত্যার সময় কাছেই নিষ্ক্রিয় অবস্থানে থাকা পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় কমপক্ষে ১২০টি স্থানে তল্লাশি চালানো হয়েছে। ওদিকে একইদিনে ফয়সালাবাদে একই রকম আরও একটি ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। তবে সেখানে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।

এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডন।

খানেওয়াল ট্রাজেডিতে সরকার ও বিরোধী দল নিন্দা জানিয়েছে। এ ঘটনায় পুরো পাকিস্তানি জাতিকে অবমাননা করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ঘটনার পর দ্রুত খালেওয়ালে ছুটে যান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ধর্মীয় সম্প্রীতি বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি আল্লামা তাহির আশরাফি। সেখানে তিনি প্রকাশ্যে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে বক্তব্য রাখেন। রোববার বিকেলে স্থানীয় পুলিশ ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পাকিস্তানের দ-বিধির অধীনে একটি এফআইআর দাখিল করেছে। আরেকটি এফআইআর হয়েছে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে।

নিহতের দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর তার বড়ভাই মিয়া চানু বলেছেন, তার ভাই ১৭ বা ১৮ বছর ধরে মানসিকভাবে অসুস্থ। তিনি গত মাস পর্যন্ত করাচিতে অন্য এক ভাইয়ের সঙ্গে বসবাস করতেন। এরপর গ্রামে ফিরে যান। কয়েক বছর হাসপাতালে রাখা হয়েছিল তাকে। কিন্তু সুস্থ হননি তার ওই ভাই। দুটি ছেলে এবং একটি মেয়ে থাকার পরও এই একই ইস্যুতে স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে তার।

মিয়া চানু বলেন, শেষদিন তার ভাই কিছু সিগারেট কিনতে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু রাত পর্যন্ত তিনি ফিরে আসেননি। পরে জানতে পারেন, ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তাকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, যেখানে তাকে হত্যা করা হয়েছে, ওই এলাকার মানুষ তার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে জানতো। তার ভাইকে পুলিশের উপস্থিতিতে লোকজন পাথর মেরে হত্যা করেছে। কিন্তু তাকে রক্ষায় পুলিশ কোনো চেষ্টাই করেনি। তার ভাইয়ের আঙ্গুল পর্যন্ত কেটে নেয়া হয়েছে।

নিহত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে মামলা করেছেন মোহাম্মদ রমজান। পুলিশ বলেছে, এই মামলাটি করা হয় দু’দিন আগে। মামলায় বলা হয়েছে, আজহার আব্বাস ও মুখতার হোসেন নামে দু’ব্যক্তি দ্রুত শাহ মুকিম মসজিদে গিয়ে দেখতে পান সেখান থেকে ধোয়া উঠছে। অজ্ঞাত এক ব্যক্তিকে তারা দেখতে পান মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থে আগুন দিচ্ছেন। এ অবস্থায় লোকজন জমায়েত হয় সেখানে এবং ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি তুলতে থাকে।

তুলাম্বা পুলিশ বলেছে, জাঙ্গল দেরাওয়ালার এক ব্যক্তি শনিবার রাতে তাদেরকে ফোন করেন। তিনি জানান, তারা এক ব্যক্তিকে আটক করেছে। সে একটি মসজিদে পবিত্র ধর্মগ্রন্থের কিছু পৃষ্ঠা ছিড়ে ফেলেছে। এ খবরে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় পুলিশের একটি টিম এবং অভিযুক্ত ব্যক্তিকে তাদের হেফাজতে নেয়।

কয়েক শত মানুষ তাৎক্ষণিকভাবে জমায়েত হয় সেখানে এবং তারা পুলিশের কাছ থেকে তাকে কেড়ে নেয় এবং তার দিকে ইটপাথর ছোড়া শুরু করে। এরপর উত্তেজিত জনতা তাকে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলে। ইট নিক্ষেপ করে তাকে হত্যা করে। এরই মধ্যে সেখানে উপস্থিত হয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ। তারা দেখতে পায় সন্দেহজনক ওই ব্যক্তি ততক্ষণে মারা গেছে। তারা মৃতদেহ উদ্ধার করে পোস্টমর্টেম পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করে। পরে তা দাফনের জন্য হস্তান্তর করা হয় পরিবারের সদস্যদের কাছে।

এ খবর পাওয়ার পর পাঞ্জাব পুলিশ প্রধানের কাছ থেকে রিপোর্ট চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এক্ষেত্রে জড়িতদের বিরুদ্ধে শূন্য সহনশীলতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে যেসব পুলিশ কর্মকর্তা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইমরান খান। তবে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তুলাম্বা পুলিশ স্টেশনের কোন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

মানবাধিকার বিষয়ক মন্ত্রী শিরিন মাজারি এ ঘটনাকে নিন্দনীয় বলে উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, এর সঙ্গে যারাই জড়িত তাদেরকে শাস্তি না দিয়ে ছাড়া যাবে না। এতে জড়িতদের বিরুদ্ধে পাঞ্জাব সরকারকে অবিলম্বে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

রোববার পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী উসমান বুজদারের কাছে একটি প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিয়েছেন আইজিপি রাও সরদার আলী খান। এতে বলা হয়েছে, সন্দেহভাজন ৩৩ এবং অজ্ঞাত ৩০০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে।