মাদক পাচারের অভিযোগে হন্ডুরাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট গ্রেপ্তার

Published: 16 February 2022

বিশেষ সংবাদদাতা :

মাদক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে হন্ডুরাসের সাবেক প্রেসিডেন্ট হুয়ান অরল্যান্ডো হার্নান্দেজকে। মাদক পাচারের অভিযোগে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়ার চাপ আছে। এ অবস্থায় একজন বিচারক তাকে গ্রেপ্তারের আদেশ দেন। ফলে তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ খবর দিয়ে অনলাইন আল জাজিরা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র তাকে তাদের হাতে তুলে দেয়ার অনুরোধ করার কয়েক ঘন্টার মধ্যে রাজধানী তেগুসিগালায় তার বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর বাড়িতেই আত্মসমর্পণ করেন হুয়ান অরল্যান্ডো। এ সময় তাকে হাতকড়া পরানো হয়। বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।

তিনি ২০১৪ সাল থেকে এ বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

মঙ্গলবার বিকেলে আদালতের মুখপাত্র মেলভিন দুয়ার্তে সাংবাদিকদের বলেন, হার্নান্দেজের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। এরপরই তাকে গ্রেপ্তার করে ২৪ ঘন্টার মধ্যে আদালতে উপস্থিত করার নির্দেশ দেয়া হয়। মঙ্গলবার টেলিভিশনে প্রচারিত ফুটেজে দেখা যায়, রাজধানীতে নিজের বাড়ি থেকে তিনি বেরিয়ে আসছেন। তাকে চারদিক থেকে প্রহরা দিয়ে রেখেছে সশস্ত্র পুলিশ। পুলিশ তাকে একটি বুলেটপ্রুফ বক্ষবন্ধনী পরিয়ে দিয়েছে। বাসা থেকে বের হওয়ামাত্রই তাকে হাতকড়া পরানো হয়েছে।

কয়েক মাস ধরেই গুজব শোনা যাচ্ছিল যে, তাকে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়ার দাবি জানানোর পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি যখন সরকারি দায়িত্ব ছাড়েন, তখন তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে মাদক পাচারে যোগসাজশের। গত মাসে তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন বামপন্থি নেতা সিওমারা ক্যাস্ত্রো। এর মধ্য দিয়ে তিনি হয়েছেন হন্ডুরাসের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট।

২০০৪ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে অস্ত্র ও মাদক পাচারের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে হার্নান্দেজকে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে মার্কিন দূতাবাসের ডকুমেন্টে বলা হয়েছে, কলম্বিয়া এবং ভেনিজুয়েলা থেকে হন্ডুরাসে টনকে টন কোকেন নেয়া হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হার্নান্দেজ। এসব মাদক এরপর যুক্তরাষ্ট্রে চালান দেয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক মিত্র ছিলেন হার্নান্দেজ অরল্যান্ডো। গত মাসে তিনি প্রেসিডেন্টের পদ হারান। তার বিরুদ্ধে মাদক পাচার অপারেশনে যুক্ত থাকার অভিযোগ এনেছেন নিউ ইয়র্কের প্রসিকিউটররা। তবে তিনি নিজে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তার ছোট ভাই টনি হার্নান্দেজ পাচার চক্রের একজন সদস্য। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের একটি আদালত তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। টনি হার্নান্দেজের বিচারের সময় প্রসিকিউটররা অভিযোগ তোলেন, মেক্সিকোর কুখ্যাত মাদকসম্রাট জোয়াকুইন ‘এল চাপো’ গুজম্যান ব্যক্তিগতভাবে টনি হার্নান্দেজকে ১০ লাখ ডলার দিয়েছিলেন। এই তথ্য অনুযায়ী টনি হার্নান্দেজকে এ অর্থ দিয়ে এল চাপো গুজম্যান বলেন, হুয়ান হার্নান্দেজকে এ অর্থ ঘুষ হিসেবে দিয়েছেন তিনি। হন্ডুরাস বছরের পর বছর ধরে লাতিন আমেরিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে চোরাচালানকৃত মাদকের একটি প্রধান ট্রানজিটে পরিণত হয়েছে। কোকেন উৎপাদিত হয়, সম্প্রতি এমন দেশগুলোর একটিতে পরিণত হয়েছে হন্ডুরাস।

হন্ডুরাসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার টুইটারে বলেছে, হন্ডুরাসের সাবেক এই রাজনীতিককে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস অনুরোধ করেছে। এ বিষয়টি তারা দেশের সুপ্রিম কোর্টকে অবহিত করেছে। হুয়ান অরল্যান্ডো হার্নান্দেজ সব সময় দাবি করে এসেছেন, তিনি মাদক পাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তার ক্ষমতা দিয়ে সবকিছু করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সমর্থনও পেয়েছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের অধীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে।