সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা
সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা
৯ রমজান চ্যানেল এস-এ জাস্ট হেল্প ফাউণ্ডেশনের চ্যারিটি আপিল
লণ্ডন, ১৮ ফেব্রুয়ারী :
আর্ত-মানবতার সেবায় ব্রিটেন ভিত্তিক চ্যারিটি সংস্থা জাস্ট হেল্প ফাউণ্ডেশন ১৬ বছর পূর্ণ করেছে। দীর্ঘ পথচলায় এই চ্যারিটি সংস্থাটি ‘অন্ধজনে দেহ আলো’- মানবিক এই আহবানে উজ্জীবিত হয়ে সিলেটে আই হসপিটাল নির্মাণ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সিডর ও সাইক্লোনে আক্রান্তদের সাহায্য, মসজিদ, মাদ্রাসায় অনুদান, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ, অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের আর্থিক সাহায্য প্রদান, বিধবাদের কল্যাণে উদ্যোগ গ্রহণসহ বেকার গরীব মানুষের রোজগারের ব্যবস্থা, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত অভাবগ্রস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসা সহায়তায় তহবিল সংগ্রহ এবং শীতবস্ত্র বিতরণের মতো মানবিক কাজ করে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
বিশেষ করে সংস্থাটির নির্মিত চক্ষু হাসপাতালের নিজস্ব ভবন ও যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে চিকিৎসক ও কর্মচারীদের বেতন এবং প্রতিদিনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অর্থ সংকটে পড়েছে। এ সংকট থেকে উত্তরণের জন্য আগামী ৯ রমজানে চ্যানেল এস টেলিভিশনে একটি চ্যারিটি আপিলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। উক্ত চ্যারিটি আপিলেসবার স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া এবং সার্বিক সহযোগিতার অনুরোধ জানান জাস্ট হেল্প ফাউণ্ডেশনের চেয়ারম্যান সাংবাদিক মিজান রহমান ও অন্যান্য বক্তারা।
উল্লেখ্য, সংস্থাটির আরেকটি প্রশংসনীয় দিক হলো যে, উক্ত সংস্থ্রা ফাণ্ডে যে কেউ বিনা দ্বিধায় দান করতে পারেন এবং তাদের দানের অর্থ পুরোটাই মানসেবায় ব্যয় হওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে। কারণ মানুষের দানের ১০০% অর্থ সেবা কার্যক্রমে ব্যয় করা হয়। প্রশাসনিক খরচ কিংবা যাতায়াত লিফলেট বা অন্যান্য খরচ দানের অর্থ থেকে ব্যয় না করে ট্রাস্টিরা তাদের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ব্যয় করে থাকেন।
জাস্ট হেল্প ফাউণ্ডেশনের মানবসেবার ১৬তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সংস্থাটির বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজের বিস্তারিত তুলে ধরে আগামীতে তা অব্যাহত রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করা হয়। জাস্ট হেল্প ফাউণ্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাংবাদিক মিজান রহমান এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আগামী দিনে আরো ব্যাপকভাবে ফাউণ্ডেশনের কার্যক্রম চালিয়ে নিতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন।
১৬ ফেব্রুয়ারী, বুধবার পূর্ব লণ্ডনে বিবিসিসিআই অফিসে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে মানবকল্যাণে জাস্ট হেল্প ফাউণ্ডেশনের ইতোমধ্যে নেয়া বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসা করে ভবিষ্যত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবার সহযোগিতা কামনা করে অন্যান্যে মধ্যে বক্তব্য রাখেন চ্যানেল এস‘র এমডি তাজ চৌধুরী, লিভারপুল বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি শেখ সুরত মিয়া আছাব, সাংবাদিক মো. আজাদ, সাংবাদিক আবু সাঈদ চৌধুরী সাদী ও শেখ শামসুল আলম পারভেজ। এছাড়া উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সাংবাদিক উদয় শঙ্কর দাস, জনমত সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা, চ্যানেল এস‘র চীপ রিপোর্টার মুহাম্মদ জুবায়ের, সাপ্তাহিক জনমতের সহকারী সম্পাদক মুসলেহ উদ্দিন আহমদ।
মিজান রহমান তাঁর দীর্ঘ বক্তব্যে বলেন, ২০০৬ সালে জাষ্ট হেল্প ফাউণ্ডেশনের যাত্রা শুরু এযাবত কালে সংস্থাটির মাধ্যমে করা বিভিন্ন মানবিক ও আর্থ-সামাজিক কাজের বিবরণ তুলে ধরেন। একই সাথে সংস্থাটির এগিয়ে যাওয়ার পথে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিদের অবদানের কথাও তিনি শ্রদ্ধার সাথে তাঁর বক্তব্যে স্মরণ করেন। মিজান রহমান বিভিন্ন কল্যাণ কার্যক্রমের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ২০০৭ সালে সিলেটের মিরাবাজারের আগ পাড়া জামে মসজিদের জন্য আমরা সর্বপ্রথম সার্থকভাবে ২৭ লক্ষ টাকা অনুদান সংগ্রহ করে দিতে সমর্থ হই, যেটা ছিল যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের জন্য কোনো মসজিদের তহবিল সংগ্রহের জন্য প্রথম টিভিতে চ্যারিটি আপিল। ২০০৮ সালে বাংলাদেশে সিডর ও সাইক্লোনে আক্রান্ত মানুষদের জন্য আমরা খাদ্য, নগদ অর্থ সাহায্য ও বিশুদ্ধ পানির জন্য টিউবওয়েল প্রদান করি, যাতে বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরী সহায়তা করেন।
২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত আমাদের উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের মধ্যে ছিল অসহায় মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ, ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু শিহাব শাহরিয়ার ও কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত হাফেজ ইকবালের চিকিৎসা তহবিল সংগ্রহ, সিলেট জল্লারপাড় মসজিদ ও বোরহানউদ্দিন মাদ্রাসার জন্য তহবিল হস্তান্তর।
এছাড়াও আমাদের চলমান সাহায্য হিসেবে অসচ্ছল ছাত্রদের আর্থিক অনুদান, বিধবাদের সেলাই মেশিন ও অসহায় পুরুষদের রিকশা প্রদান, রমজান মাসে খাবার ও শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত ছিলো উল্লেখযোগ্য। আর ২০২০ সালে সাংবাদিক ইকবাল মনসুরের চিকিৎসা সহযোগিতায়ও আমরা এগিয়ে এসেছিলাম।
তিনি জাস্ট হেল্প ফাউণ্ডেশনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ চক্ষু হাসপাতাল নির্মাণের ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ২০১২ সালে আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিলো সুন্দর এই পৃথিবীতে মানুষের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেওয়া। এই উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে আমরা সিলেট শহর থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার অদূরে শিক্ষা ও অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর এলাকা গোয়াইনঘাটে নিজস্ব ভূমি ক্রয় করি। সেখানে আমরা নিজস্ব ভবনে একটি চক্ষু হাসপাতাল স্থাপনের জন্য চ্যারিটি ডিনার, টিভিতে আপিল ও ব্যক্তিগত চেষ্টায় তহবিল সংগ্রহ শুরু করা হয়। অবশেষে ২০১৩ সালে ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে কাজ শুরু করা হয়। ২০১৪ সালে হাসপাতালের প্রথম তলা ও ২০১৬ সালে দ্বিতীয় তলা নির্মাণ সম্পন্ন হয়। ২০১৭ সালের শুরুতে নিজস্ব ভবন থেকেই বিনামূল্যে সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা ও স্বনামধন্য বার্ড হাসপাতালের সহযোগিতায় চক্ষু শিবির এর কার্যক্রম শুরু করা হয়।
মিজান রহমান বিভিন্ন রোটারি সংস্থার সহায়তার বিতরণ তুলে ধরে বলেন, ২০১৭ সালে টেইমসাইড রোটারি ও গ্লোবাল সলিউশন এর ৪জন ডেলিগেট আমাদের হাসপাতাল ও কার্যক্রম পরিদর্শন করে অত্যন্ত খুশি হন। তাদের সাহায্যে ২০১৯ সালে আমরা উত্তর আমেরিকার রোটারি গ্লোবাল গ্র্যান্ট এর জন্য আবেদন করি। ৪টি ধাপে পর্যালোচনার মাধ্যমে অবশেষে ২০২১ সালে আমরা হাসপাতালের যন্ত্রপাতি ক্রয়, স্থাপনা ও প্রশিক্ষণ বাবদ ১৪৩ হাজার ডলার অর্থ অনুদান পেতে সমর্থ হই। তাদের বরাদ্দের শর্ত অনুযায়ী হাসপাতালের নামকরণ করা হয় ‘জাস্ট হেল্প সিলেট প্রাইড রোটারি আই হসপিটাল’। বর্তমানে হাসপাতলে তিন দিন সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা ও দুই তিন মাস অন্তর অন্তর চক্ষু শিবির কার্যক্রম চালু রয়েছে। ২০১৭ সাল থেকে প্রায় ছয় বছরে আনুমানিক ছয় হাজারের বেশী রোগীর স্বাস্থ্যসেবা ও ১,৫৬০ জনের অন্ধত্ব দূরীকরণে আমরা সমর্থ হয়েছি।