জগন্নাথপুরে প্রবাসীর স্ত্রীকে হত্যা : যেভাবে পালায় ঘাতক জিতেশ

Published: 19 February 2022

বিশেষ সংবাদদাতা :


সবার চোখে ধুলো দিয়ে জগন্নাথপুর থেকে পালায় ঘাতক জিতেশ। ভোর পর্যন্ত সে বাসাতেই ছিল। শেষ রাতের দিকে স্বজনরা জানতে পারেন জিতেশের ফার্মেসিতে যান জ্যোৎস্না। এ কারণে রাত ৩টার দিকেই তারা ‘হাতুড়ে’ ডাক্তার জিতেশের বাসায় ছুটে গিয়েছিলেন। তখনো বাসাতে মানুষ ছিল। লাইট অন ছিল। ভেতর থেকে মহিলা কণ্ঠ শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু কেউ সাড়া দিচ্ছিল না।

ভোররাতে জ্যোৎস্নার ভাই কমলা মিয়ার ফোনও ধরেছিল। জানিয়েছিল, ভবের বাজারে আসেন, জ্যোৎস্নাকে পেয়ে যাবেন। এভাবে সকাল ৬টা থেকে ৮টা পর্যন্ত তাদের ভবের বাজারে নিয়ে রাখে। আর ওই ফাঁকে জগন্নাথপুর পৌরশহর থেকে সিএনজি অটোরিকশা পাঠিয়ে তার স্ত্রীসহ পরিবারের স্বজনদের রানীগঞ্জে নিয়ে যায়।
নিহত জ্যোৎস্নার ভাইয়েরা জানিয়েছেন- জিতেশ খুব চালাক। সে পালিয়ে যেতে তাদের ভবের বাজার পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল। তার আগে ভোর রাতের দিকে জিতেশ রানীগঞ্জ চলে গিয়েছিল। স্ত্রী সন্তানদের শ্বশুরবাড়িতে রেখে ঢাকায় পালিয়ে যায়। আর ওখান থেকে গতকাল দুপুরে সিআইডি কর্মকর্তা গ্রেপ্তার করেন জিতেশ গোপকে। আলোচিত ও লোমহর্ষক এমন ঘটনা জগন্নাথপুরে এর আগে কখনও ঘটেনি। প্রবাসী বধূ জ্যোৎস্নাকে খুনের পর লাশ ৬ টুকরো করে বস্তাবন্দি করে রাখা হয়েছিল। পৌরসভা কার্যালয়ের পাশেই জিতেশের ফার্মেসি। নাম অভি ফার্মেসি। খুন হওয়া সৌদি প্রবাসী তুরুক মিয়ার স্ত্রী শাহনাজ পারভীন জ্যোৎস্নার বাড়িও একই এলাকায়। বুধবার বিকালে নিজ বাসা থেকে বের হয়ে জিতেশের ফার্মেসিতে এসেছিলেন জ্যোৎস্না। তার আগের দিন জিতেশ গোপ গিয়েছিল জ্যোৎস্নার বাসায়। তাকে ফার্মেসিতে যাওয়ার কথা বলেছিল। স্বজনরা জানিয়েছেন, বুধবার বিকালে বাসা থেকে বের হন জ্যোৎস্না। এরপর ব্যাংক থেকে ৩০ হাজার টাকা তুলেছিলেন। গিয়েছিলেন অভি ফার্মেসিতে। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত জ্যোৎস্নার মোবাইলে ফোন ঢুকেছে। এরপর থেকে ফোন বন্ধ। জ্যোৎস্নার ভাই হেলাল জানিয়েছেন, বাসার গেট না খোলায় আমরা জিতেশের বাসার সামনেই বসে ছিলাম। সকাল হলেই খবর নিয়ে জানবো- জ্যোৎস্না কোথায় আছে। কিন্তু চতুর জিতেশ কৌশলে তাদের অন্য জায়গায় পাঠিয়ে বাসা থেকে পালিয়ে গেছে। যে সিএনজি অটোরিকশা যোগে পালিয়েছিল সেই সিএনজি অটোরিকশার চালকও পরে তাদের জানিয়েছে সে কথা। বৃহস্পতিবার দুপুরে অভি ফার্মেসির ভেতরের কক্ষ থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। একটি ছুরি উদ্ধার করেছে পুলিশ। ওই চুরি দিয়ে জ্যোৎস্নার মরদেহ ৬ টুকরো করে কাটা হয়েছে। এমন ঘটনায় ক্ষুব্ধ জগন্নাথপুরের মানুষ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ২০১৩ সাল থেকে পৌর শহরের নিজ মালিকানাধীন বাসায় সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী তার তিন সন্তান নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। বাসার নিকটবর্তী ব্যারিস্টার মির্জা আবদুল মতিন মার্কেটে অভি মেডিকেল ফার্সেমিতে ওষুধ ক্রয় সূত্রে জ্যোৎস্না পারভিন যাতায়াত করতেন। ঘাতক জিতেশ গোপ কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার সইলা গ্রামের যাদব গোপের ছেলে। সে পৌর শহরে বাসা ভাড়া করে বসবাস করে আসছে। এর আগে জিতেশ ৭-৮ বছর পৌর শহরে তার মামার ফার্মেসিতে থাকতো। পুলিশ জানায়, ঘটনার পর থেকে তারা ঘটনার মূল হোতা হিসেবে জিতেশ গোপকেই চিহ্নিত করে। কারণ জিতেশ গোপ জ্যোৎস্নার ভাইদের কাছে স্বীকার করেছিল জ্যোৎস্না তার কাছেই রয়েছে। এরপর সকাল থেকে মোবাইল ফোন বন্ধ করে ফেলে। জগন্নাথপুরের রানীগঞ্জ এলাকার শ্বশুরবাড়িতে স্ত্রী সন্তানদের রেখে জিতেশ চলে গিয়েছিল ঢাকায়। পুলিশ শ্বশুরবাড়ির সূত্র ধরে ঢাকা থেকে গতকাল দুপুরে তাকে গ্রেপ্তার করে। আলোচিত ঘটনা এটি। ফলে পুলিশও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। প্রধান আসামি জিতেশ গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি গতকাল শুক্রবার জানিয়েছেন সুনামগঞ্জের এসপি মিজানুর রহমান। সিআইডি ঢাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। রাতের মধ্যে তাকে সুনামগঞ্জ নিয়ে আসার কথা। কেন এই হত্যাকাণ্ড সেটি এখনো জানা যায়নি। ঘাতক জিতেশকে সুনামগঞ্জে নিয়ে আসার পর পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করবে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, জিতেশ গোপের অভি ফার্মেসি অনেক আগে থেকেই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত। এর আগে এক যুবতীকে ফার্মেসির রোগী দেখার ভেতরের কক্ষে নিয়ে অজ্ঞান করে স্বর্ণ, টাকা লুট করা হয়েছিল। পরে মান-সম্মানের ভয়ে ওই যুবতীর পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ করা হয়নি।