৯/১১-র প্রেক্ষাপট, পরিণতি ও বর্তমান বাস্তবতা

Published: 11 September 2022

মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আলী শিকদার (অব.)

বছর ঘুরে আবার ১১ সেপ্টেম্বর এসেছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সংঘটিত প্রলয়ংকরী ঘটনাটি এখনো বিশ্বের বিবেকবান মানুষকে তাড়া করে ফিরছে। কেন, কার স্বার্থে এবং যারা করেছে তাদের কী উপকার হয়েছে? এমন অনেক প্রশ্নের পরিপূর্ণ উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়, যারা করেছে তাদের কোনো উপকার হয়নি, বরং লাখ লাখ মানুষের জীবন গেছে এবং অগণিত জনপদ পুড়ে ছারখার হয়েছে।

ধর্মের নামে এত বড় অধর্মজনিত কাজের দায় যাঁরা স্বীকার করেছেন সেই আল-কায়েদার দুই শীর্ষ নেতাও প্রতিপক্ষের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন।
একজনের লাশ সাগরে নিমজ্জিত হয়েছে, আরেকজন সম্প্রতি ড্রোন আক্রমণে নিহত হওয়ার পর তাঁর জানাজা হয়েছে কী হয়নি তার কিছু জানা যায়নি।

লেখাপড়া, বিদ্যাবুদ্ধি মানুষকে মানবতার সেবায় যেমন নিবেদিত করে তোলে, তেমনি একই লেখাপড়া বিদ্যাবুদ্ধি যখন ধর্মান্ধত্বের কবলে পড়ে, তখন তার পরিণতিতে তিনি বা তারা শুধু নিজেরা নয়, সারা বিশ্বের মানুষকে করে অনিরাপদ এবং মানবতা হয় পর্যুদস্ত্ত। ৯/১১ হঠাৎ করে অথবা কোনো রকম পূর্বাভাস ব্যতিরেকেই ঘটে গেছে, এমনটি বলার সুযোগ কম। প্রেক্ষাপটের সামগ্রিকতার লিগ্যাসি অনেক পুরনো ও দীর্ঘ।

আলেকজান্ডারের এশিয়া অভিযান, রোমান সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন, রোমান সম্রাট কনস্টানটাইন কর্তৃক চতুর্থ শতাব্দীর শুরুতে খ্রিস্ট ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণা, ৮০০ সালে ইউরোপব্যাপী হোলি রোমান এম্পায়ার প্রতিষ্ঠা, আরবের উমাইয়া ও আব্বাসীয় শাসক কর্তৃক ইউরোপ পর্যন্ত খেলাফতের বিস্তার, একাদশ শতাব্দীতে হোলি রোমান এম্পায়ার ও আরব খেলাফতের মধ্যে সংঘটিত ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধ, তুরস্কের অটোমানদের ইউরোপ অভিযান, অষ্টাদশ শতাব্দীতে ওয়াহাবি মতবাদ নামে ইসলামের চরম কট্টর ধর্মীয় মতবাদের জন্ম, মধ্যপ্রাচ্যসহ প্রায় সব মুসলিমপ্রধান দেশে ইউরোপের ঔপনিবেশিক শাসক-শোষণ, অন্যায়ভাবে একটা প্রতিষ্ঠিত মুসলিম জাতিগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক উত্খাত করে ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতিষ্ঠা, পুঁজিবাদী ও কমিউনিস্টের মধ্যে শীতল ও প্রক্সি যুদ্ধ এবং বৈশ্বিক পরাশক্তিগুলোর ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের দ্বন্দ্ব ইত্যাদি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৯/১১-র প্রেক্ষাপট তৈরিতে ভূমিকা রেখেছে। বিশাল প্রেক্ষাপট। আর বিশাল প্রেক্ষাপট রয়েছে বলেই ৯/১১-র পরিণতিতে বিশ্বব্যবস্থা আজ চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে।

প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আরো কথা আছে। তবে তার আগে একটা বই থেকে একটা উদ্ধৃতি উল্লেখ করব, যেটি আজ সব সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। ‘দ্য ডিক্লাইন অ্যান্ড ফল অব দ্য রোমান এম্পায়ার’ নামের বইটি লিখেছেন এডওয়ার্ড গিবন। ছয় খণ্ডের বইটির প্রকাশকাল ১৭৭৬-৮৮। গিবনের কনক্লুসিভ মন্তব্য, ‘প্রাচীন গ্রিক ও রোমানদের ধর্মনিরপেক্ষ আলোকিত মূল্যবোধ ত্যাগ করে অন্ধত্ব, অসহিষ্ণুতা এবং খ্রিস্ট ধর্মবাদী দর্শনকে রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক উপাদান হিসেবে গ্রহণ করায় রোমান সাম্রাজ্যের পতনের সূত্রপাত হয়। ’ উদ্ধৃতিটি খুবই ছোট। কিন্তু এর ব্যাপক ও বিশাল তাৎপর্য রয়েছে। কারণ এর পর থেকে এ পর্যন্ত সংঘটিত যুদ্ধবিগ্রহ, সংঘাত-সংঘর্ষ, ধ্বংসযজ্ঞ ইত্যাদির এক নম্বর কারণ হিসেবে কাজ করেছে ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি, যেখানে ধর্মের অপব্যবহার করে রাজনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার এবং সম্পদ কুক্ষিগত করার অপচেষ্টা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। ঠিক এ কারণেই সত্তর-আশির দশকে আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে ৯/১১-র নতুন প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। তখন আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়নের স্নায়ুযুদ্ধ ছিল তুঙ্গে।

অ্যাকশন-রি-অ্যাকশন মডেলের সূত্রেই ১৯৭৯ সালের ডিসেম্বর মাসে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান দখল করে নেয়। পাকিস্তানে তখন সদ্য ক্ষমতা দখল করা সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউল হক নিজের অবৈধ ক্ষমতাকে সুসংহত করার মোক্ষম অস্ত্র হাতে পেয়ে যান। স্লোগান তুললেন, নাস্তিক কমিউনিস্ট দোরগোড়ায়, ইসলাম ধর্ম আর থাকবে না। সৌদি আরবের সমর্থনে জিয়াউল হক ইসলাম রক্ষার জন্য মাঠে নেমে পড়েন। আমেরিকার অস্ত্র, সৌদির অর্থ আর পাকিস্তানের তত্ত্বাবধানে সারা বিশ্ব থেকে হাজার হাজার উগ্রবাদী মুসলমান যুবক কথিত জিহাদি মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়ে আফগানিস্তানে সোভিয়েতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যোগ দেয়। এভাবেই আফগানিস্তান হয়ে পড়ে জঙ্গি ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টির সর্বোত্তম ভূমি এবং শুরু হয় সশস্ত্র জঙ্গিবাদের বিশ্বায়ন। এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই ওসামা বিন লাদেনের উত্থান এবং আল-কায়েদার জন্ম হয়। ইসলামিস্ট সন্ত্রাসের জন্য পাকিস্তানই মূল কালপ্রিট এবং ৯/১১-র জন্য প্রত্যক্ষভাবে দায়ী।

ওসামা বিন লাদেন ও আল-কায়েদা তৈরির প্রধান কারিগর পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। আশির দশকে আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত বাহিনীকে হটাতে সৌদি আরব ও আমেরিকার হিসাবহীন অর্থ ও অস্ত্র পেয়েছে আইএসআই, যার বড় অংশ তারা ব্যবহার করেছে ভারতের বিরুদ্ধে জিহাদি তৈরিতে এবং বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস বিস্তারের কাজে। ১৯৮৪ সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল জিয়াউল হক পৃথিবীর সব প্রান্ত, পশ্চিমে মরক্কো থেকে পূর্বে ফিলিপাইনের মিন্দানাও পর্যন্ত যত উগ্রপন্থী ওয়াহাবিবাদী ইসলামিস্ট সংগঠন আছে সবাইকে করাচিতে আসার আহবান জানান এবং সবার জন্য অর্থসহ অফিস প্রদান ও মাদরাসা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুযোগ করে দেন, সঙ্গে সশস্ত্র জিহাদি প্রশিক্ষণ (হুসেন হাক্কানি পাকিস্তান বিটুইন মস্ক অ্যান্ড মিলিটারি, পৃ. ১৯১)। সে সময় ফিলিস্তিনের ওয়াহাবিবাদী ইসলামিক পণ্ডিত আবদুল্লাহ আযম মুসলিম যুবকদের জিহাদে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিশাল এক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন করাচিতে, যার নাম মক্তব আল খিদমত (MAK)। সৌদি আরব থেকে ধনাঢ্য ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান লাদেন এসে মক্তব আল খিদমতে যোগ দেন এবং দ্রুতই আইএসআইয়ের প্রধান সেনাপতি হয়ে ওঠেন।

আফগান থেকে সোভিয়েত বাহিনী চলে যাওয়ার পর নব্বইয়ের দশকের শুরুতে আমেরিকার বিরুদ্ধে নতুন জিহাদ করার জন্য লাদেন সোমালিয়ায় চলে যান এবং আল শাবাব নামের জঙ্গি সংগঠন তৈরি করেন। ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ সহায়তায় উগ্রবাদী তালেবান ক্ষমতায় এলে লাদেন আফগানিস্তানে আশ্রয় নেন। আমেরিকান ও ইহুদিদের হত্যা করা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব, ১৯৯৮ সালে এই মর্মে ফতোয়া দেন লাদেন (প্রাগুক্ত পৃ. ৩০৭)। সে বছরই ৭ আগস্ট লাদেনের নির্দেশে আল শাবাব জঙ্গিগোষ্ঠী কেনিয়া ও তানজানিয়ায় আমেরিকান দূতাবাসে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায় এবং তাতে নিহত হয় স্থানীয় লোকজনসহ কয়েক শ আমেরিকান। পাল্টা হিসেবে আমেরিকা পারস্য উপসাগরের যুদ্ধজাহাজ থেকে আফগানিস্তানে লাদেনের অবস্থানকে পিন পয়েন্ট টার্গেট ঠিক করে মিসাইল আক্রমণ চালায়। কিন্তু মিসাইল আঘাত করার আগ মুহূর্তে আইএসআই টের পেয়ে যায় এবং জরুরি বেতার বার্তায় খবর দিলে সেখান থেকে লাদেন সরে যান এবং বেঁচে যান (প্রাগুক্ত পৃ. ২৯৯)।

১৯৯৯ সালে ভারতের সঙ্গে কারগিল যুদ্ধ বন্ধের তদবিরে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের দ্বারস্থ হন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। নওয়াজ শরিফের মুখের ওপর ক্লিনটন বলেন, ওসামা বিন লাদেনের আল-কায়েদা ও তালেবানের মতো জঙ্গি সংগঠনকে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই সব ধরনের সমর্থন ও আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে এবং একই সঙ্গে আফগানিস্তান ও ভারতের অভ্যন্তরে জঙ্গি তৎপরতায় লিপ্ত আছে, যার পরিণতি হবে ভয়াবহ (প্রাগুক্ত পৃ. ২৫৩)। সুতরাং পাকিস্তান যদি ওসামা বিন লাদেনকে সব রকম সমর্থন না দিত, তাহলে ১৯৯৮ সালেই আমেরিকার মিসাইল আক্রমণে লাদেন নিহত হতেন এবং হয়তো ৯/১১ ঘটত না। সেই সময়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি নিজ নিজ ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের দিকে না তাকিয়ে পাকিস্তানকে জবাবদিহির মধ্যে আনত, তাহলে বৈশ্বিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন হতো এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠী তালেবান বাহিনী নতুন করে ২০২১ সালে আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখল করতে পারত না।

আইএস, আল-কায়েদা, তালেবানসহ বিশ্বের সব প্রান্তের জিহাদি সংগঠন যে এক ও অভিন্ন তার ছোট একটি উদাহরণ দিই। দারুল উলুম হাক্কানি নামে পেশোয়ারে এক বিশাল মাদরাসা আছে, যাকে জিহাদি বিশ্ববিদ্যালয় বলা হয়। ২০০১ সালের ৯ জানুয়ারি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উগ্রপন্থী ওয়াহাবিবাদী ইসলামিস্টদের একটি বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়। তাতে চীনের উইঘুর, মধ্য এশিয়া, চেচনিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনসহ ৩০টি দেশের জিহাদি সংগঠনের নেতারা যোগ দেন। সে সময়ের তালেবান সরকারের প্রায় অর্ধডজন মন্ত্রী ওই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের সাবেক সেনাপ্রধান আসলাম বেগ ও সাবেক আইএসআইপ্রধান জেনারেল হামিদ গুল। সম্মেলনে ঘোষণা দেওয়া হয়, মুসলিম বিশ্বের সেরা সেনাপতি ওসামা বিন লাদেনকে রক্ষা করা প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব (জাহিদ হুসেন-ফ্রন্টলাইন পাকিস্তান, পৃ. ৮৩-৮৪)।

একবিংশ শতাব্দীর একেবারে শুরুতে ৯/১১-র মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী যে ইসলামিস্ট সন্ত্রাসের শুরু এবং গত ২২ বছর সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ফল বা পরিণতির দিকে তাকালে স্পষ্ট হয়, এর মধ্য দিয়ে সংঘটিত ঘটনাবলির মাধ্যমে কোনো পক্ষের জন্যই শুভকর কিছু হয়নি। ধর্মের নামে দেশে দেশে যত সন্ত্রাসী আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে তার মধ্য দিয়ে ইসলাম ধর্মের পবিত্রতা বিনষ্ট হয়েছে এবং সব মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ বিশ্বের অন্য সব ধর্মের মানুষের কাছে হেয়প্রতিপন্ন হয়েছে; অসম্মানিত হয়েছে। ইসলাম ধর্ম এবং তার অনুসারী বৃহত্তর মুসলিম সম্প্রদায়ের কোনো লাভ হয়নি। মুসলিমপ্রধান ইয়েমেন, সিরিয়া, লিবিয়া ও ইরাকের মতো ধনী ও সমৃদ্ধ দেশ গৃহযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, প্রতিটি দেশ এখন একেকটি ভঙ্গুর রাষ্ট্র।

যুক্তি, তর্ক, বিজ্ঞান নয়, উগ্রবাদী ওয়াহাবিতন্ত্রের তথাকথিত জিহাদিমন্ত্রের ভ্রান্ত তত্ত্ব ও দর্শনে উদ্বুদ্ধ এক শ্রেণির মুসলমান সংঘাত ও যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে নিজেদের ধ্বংসই শুধু ডেকে এনেছে, কোথাও ভালো কিছু হয়নি। এর মধ্যে ২০২১ সালের আগস্ট মাসে আফগানিস্তানে তালেবান বাহিনী আবার ক্ষমতা দখল করায় বিশ্বের প্রান্তের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আবার কিছুটা উজ্জীবিত ও উদ্ধুব্ধ হয়েছে। আমেরিকান সেনাবাহিনী সরে যাওয়ার পর ভূ-রাজনৈতিক কারণে চীন ও রাশিয়া তালেবানের পাশে দাঁড়ানোর কথা বললেও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো স্বীকৃতি দেয়নি। তালেবান সরকারের শক্তি-সামর্থ্য আগের মতো নেই। একটি দেশের স্বীকৃতিও পায়নি। অভ্যন্তরীণ অবস্থার ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। ৩০ থেকে ৩৫ লাখ মানুষ শরণার্থী হয়ে বিদেশে সীমাহীন দুর্দশার মধ্যে আছে। প্রায় অর্ধকোটি মানুষ দেশের ভেতরে বাস্তুচ্যুত হয়ে ভাসমান অবস্থায় অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। বিশ্বসম্প্রদায় ও সংস্থা থেকে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের পূর্বাভাস দিচ্ছে। নারী সম্প্রদায় আগের মতো ঘরে বন্দি হয়ে পড়েছে। ক্রীড়াঙ্গনে আফগান নারীরা উজ্জ্বল ভূমিকা রাখতে শুরু করেছিল। কিন্তু তালেবান আসার পর সব ক্রীড়াঙ্গন নারীদের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছে। উচ্চশিক্ষার দ্বার নারীদের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। এই করুণ ও অমানবিক অবস্থার মূলে রয়েছে ধর্মাবন্ধতা এবং সেই সূত্রে ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতি।

সব দেশের সব মানুষ, সমাজ এবং রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে সব ধরনের অন্ধত্ব ও উগ্রবাদ পরিহার করা মানবসভ্যতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য অপরিহার্য। ৯/১১-র প্রেক্ষাপট, পরিণতি ও আজকের আফগানিস্তানের করুণ দৃশ্যই বলে দিচ্ছে রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে উগ্রবাদের কোনো স্থান নেই।

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক