ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন
তিবেতের হাতে ডান-বামের ভাগ্য

Published: 17 October 2022

পোস্ট ডেস্ক :


সিনেটর সিমন তিবেত। অখ্যাত এক নারী। জাতীয় রাজনীতিতে যার নামগন্ধও ছিল না এতদিন। দুই বছর আগেও যাকে কেউ চিনত না। সেই ‘নবাগতা’ই এখন ব্রাজিলের ‘শিরোমণি’। নিজের ঝুলিতে থাকা তার ৪.২ শতাংশ ভোটই ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের ‘ভাগ্যবিধাতা’। খুবই অল্প হলেও ভোটের হিসাবে তা ৪৯ লাখ। ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো ও বামপন্থি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা ডা সিলভা উভয়ের দৃষ্টিই এখন তিবেতের দিকে। দুই প্রতিন্দ্বীর ভোট দূরত্ব ৬.১ মিলিয়ন (৬১ লাখ)। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলে শেষপর্যন্ত তিবেতের সমর্থনই নতুন পথের সূচনা করবে ব্রাজিলে।

২৯ আগস্ট প্রথম জনগণের নজরে পড়েন ৫২ বছর বয়সি তিবেত। প্রচারণার অংশ হিসাবে এদিন এক টেলিভিশন বিতর্কে অংশ নেন তিনি। ডানপন্থি বলসোনারো ও বামপন্থি লুলার পাশে দাঁড়িয়ে সেদিনই পুরো ব্রাজিলকে চমকে দেন তিবেত। বিতর্কে বলসোনারো এক নারী সাংবাদিককে অপমান করলে তাৎক্ষণিক তার প্রতিবাদ করে বসেন। প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর দিকে তর্জনি উঁচিয়ে বলেন, ‘আমি তাকে ভয় পাই না।’ এই এক কথাতেই মানুষের মুখে মুখে শক্তিশালী ভাবমূর্তি তৈরি হলো তার। নির্বাচনের (২ অক্টোবর) প্রথম ধাপে ৪ দশমিক ২ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানও দখল করে নিলেন। যেখানে লুলা পায় ৪৮ শতাংশ। বলসোনারো ৪৩ শতাংশ। কিন্তু দেশটির সংবিধান অনুসারে কেউই ৫০ শতাংশ ভোট লাভ করতে পারেননি। এখন অপেক্ষা ৩০ অক্টোবরের দ্বিতীয় পর্বের ভোট। প্রাথমিকভাবে সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলাকেই সমর্থন করছেন তিবেত। আলোচিত এই ক্যাথলিক নারীর জন্ম ব্রাজিলের ট্রেস লাগোস শহরে। তিনি একই সাথে রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। এক লাখ ২৫ হাজার জনসমৃদ্ধ এ শহরে ২০০৫-২০১০ সাল পর্যন্ত মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ব্রাজিলের পশ্চিম-মধ্য রাষ্ট্র যা মাটো গ্রসো সুলে অবস্থিত। কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক অঞ্চল। দুই কন্যাসন্তানের জননী তিবেত এখানকারই এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। করোনা মহামারি দুর্নীতি তদন্তের দায়িত্বে থাকা কংগ্রেসনাল কমিটির অনুসন্ধানেও তিবেত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। নিজ প্যানেলে থাকা বলসোনারোর মিত্রদের জোরালো কণ্ঠে প্রতিহত করেন। তবে পরিচিতির তুঙ্গে উঠে যান এ বছর তার প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতার মাধ্যমে। আর প্রথম দফার ভোটের পর অবস্থা এমন যে, ডান-বামের জয়-পরাজয়ের নাটাই এখন তার হাতে। সাওপাওলো অঞ্চলের গেটুলিও ভার্গাস ফাউন্ডেশনের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের অধ্যাপক মার্কো অ্যান্তিনিও টেক্সিরা বলেন, ‘তিবেত একটি শূন্য উপহ্রদ পূরণ করেছেন। তিনি সাফল্য অর্জন করেছেন কারণ তিনি কেবল দ্বন্দ্বের খোঁজ না করে বলসোনারো ও ওয়ার্কার্স পার্টির মধ্যে ভারসাম্যপূর্ণ সমালোচনা করেছেন।’ রাষ্ট্রপতি বিতর্কে তিনি বলসোনারোকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন এবং নারীদের শ্রদ্ধা করতে অনুরোধ করেছিলেন। তিনি রাষ্ট্রপতির মন্তব্যে যৌনবাদীপ্রবণতা রয়েছে বলেও মনে করেছিলেন। এসবই তিবেতকে সহায়তা করেছিল সিরো কেন্দ্র বাম প্রার্থী সিরো গোমেজকে পেছনে ফেলে তৃতীয় স্থান দখল করতে। বলসেনারোর সঙ্গে তিবেত সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে মহামারি তদন্তকারী কংগ্রেসনাল কমিটিতে থাকাকালীন সময়ে, যখন মহামারিতে ব্রাজিলের ছয় লাখ ৮০ হাজার মানুষ মারা যায়। নির্বাচনি প্রচারণা চলাকালীন তিবেত কংগ্রেস দ্বারা পরিচালিত বিপুল পরিমাণ অর্থের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। এ ছাড়াও বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ব্যয় বৃদ্ধি, শিক্ষাবৃত্তি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দেন তিবেত। গত সপ্তাহে তিনি জানান, দ্বিতীয় দফায় লুলাকে সমর্থন করবেন। তবে তিনি ব্রাজিলের রাজনীতিতে তৃতীয় পথ তৈরির বিষয়কে অস্বীকার করেন। তিবেতের দল, ব্রাজিলিয়ান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট বলসোনারো ও লুলার প্রতিযোগিতায় নিরপেক্ষতাকেই বেছে নিয়েছে।