বৃটেনের রাজনৈতিক ‘উন্মাদনার’ জন্য ব্রেক্সিটকে দায়ী করেছে ইউরোপিয়ান প্রেস
পোস্ট ডেস্ক :
বৃটেনে রাজনৈতিক ‘উন্মাদনার’ জন্য ব্রেক্সিটকে দায়ী করেছে ইউরোপিয়ান প্রেস। ব্রেক্সিট গণভোটের ৬ বছরে ইউরোপ মহাদেশীয় পর্যবেক্ষকরা দেখতে পাচ্ছেন ওয়েস্টমিনস্টার গলে (মেল্টডাউন) যাচ্ছে। কিন্তু অনেকেই সর্বশেষ বিপর্যয়ের মধ্যে একটি চূড়ান্ত অনিবার্যতা দেখেছেন, যা বাস্তবতা থেকে সব সময় পাশে সরিয়ে রাখা হয়েছিল। লিজ ট্রাসের পদত্যাগের খবরে লা মন্ডে পত্রিকা লিখেছে, শুনেছেন বোঝার জন্য, কিন্তু বাস্তবতার জন্য নয়। একজন ভয়াবহ প্রবক্তা যিনি শুধু বার বার ‘প্রবৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি, প্রবৃদ্ধি’ বলার চেয়ে বড় কিছু করতে পারেন না। সমালোচনার জন্য আপাতত তিনি দুর্ভেদ্য। কিন্তু তিনি জনগণ এবং তার নিজের দলের কাছ থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান। এতে বলা হয়, রাজনৈতিক নেতারা ভদ্রতার সঙ্গে তাদের অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন। ব্রাসেলসে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের এক সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন বলেছেন, দ্রুততার সঙ্গে বৃটেন রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে পাক- এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বৃটেনকে বন্ধু উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, সব সময় তার একজন সহকর্মীকে হারানোতে তিনি বেদনাবোধ করেন। আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ও সরকারপ্রধান মিশেল মার্টিন বলেছেন, বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীর জন্য খুব কঠিন সময়ে তিনি লিজ ট্রাসের প্রতি সমব্যথী। তিনি আরও বলেন, বৃটেন এবং বৃটেনের রাজনৈতিক ব্যবস্থার জন্য বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে সেখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলো স্থিতিশীলতা। তবে এতটা ভদ্রতা দেখায়নি রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা বলেছে, একজন প্রধানমন্ত্রীর এমন অসম্মানের বিষয় কখনোই জানতো না বৃটেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভ বলেন, লিজ ট্রাস তার বিপর্যয়মুলক নিরক্ষরতার জন্য সবচেয়ে বেশি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
ওদিকে মহাদেশীয় মিডিয়াগুলো মনে করছে বৃটেনের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর সমস্যা রয়েছে অন্য জায়গা। লিবারেশন পত্রিকা বলেছে, সুনির্দিষ্টভাবে টরিদের টায়ে কিছু দুর্গন্ধ ছিল। সোনিয়া ডেলেসালে-স্টোলপার বলেছে, বৃটিশ সরকার এবং কনজার্ভেটিভ পার্টি দৃশ্যত পুরোপুরি নিজেরা ধ্বংসের পথে রয়েছে। ইউরোপের অনেক রাজনৈতিক ভাষ্যকারের সঙ্গে এই পত্রিকাটির লন্ডনের সাবেক এই প্রতিনিধি ভাসা ভাসা দৃশ্যের বাইরে তাকিয়েছেন। তিনি পর্যবেক্ষণ করেছেন, মাত্র চার মাসের মধ্যে বৃটেন পাবে চারজন অর্থমন্ত্রী, দু’জন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং দ্রুত পাবে দু’জন প্রধানমন্ত্রী।
পার্লামেন্টে অকল্পনীয় দৃশ্য এবং ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের ঘটনার পর পত্রিকাটি প্রশ্ন তুলেছে, কে হতে যাবেন লিজ ট্রাসের উত্তরসুরি? এটা বাস্তবেই একটি বড় প্রশ্ন। ব্রেক্সিটের কারণে এবং এর প্রধান আর্কিটেক্ট বরিস জনসন কনজার্ভেটিভ পার্টির সব মালমসলা নিঃশেষ করে দিয়ে একে সারশূন্য করে দিয়েছেন। বৃটেন এখন যে সংকট মোকাবিলা করছে এর মূল নিহিত আছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ত্যাগের সিদ্ধান্তের মধ্যে- এমনটা মনে করছে লা মন্ডে পত্রিকা। এতে সিলভেইন কাহন লিখেছেন, ব্রেক্সিট গণভোট থেকে বৃটিশ সরকারগুলো বিরাট মেধা দিয়ে এটাই প্রদর্শন করেছে যে, বৃটেনের সার্বভৌমত্বের প্রতিশ্রুতিকে আরও দূরে নিয়ে যেতে পারে শুধু ব্রেক্সিট। এনে দিতে পারে অবিকৃত স্বাধীনতা। তারা সবাই বলেছে- নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাও। কিন্তু তা করা থেকে অনেক দূরে বৃটিশরা। ব্রেক্সিটের পর ইউরোপিয়ান অন্য কোনো সদস্য দেশের এমন অবস্থা হয়নি। বৃটেনের কনজার্ভেটিভ দলের নেতারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন এটা প্রমাণ করতে যে, সমস্যা থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যপদ অনেক দূরে।
জার্মানির সরকার সম্প্রচার মাধ্যম এআরডিতে লন্ডনের প্রতিনিধি অ্যানেত্তি ডিতের্ত। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বৃটেনের বেরিয় যাওয়ার সদ্ধিান্তকে তিনি নিজের দৃষ্টিতে দেখেছেন। তিনি বলেছেন, ব্রেক্সিট প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন তেরেসা মে, বরিস জনসন। আর একই কাজ করেছেন কনজার্ভেটিভ তৃতীয় নেতা লিজ ট্রাস। ডিতের্ত বলেছেন, ভবিষ্যত ইতিহাসবেত্তারা যখনই বৃটেনের রাজনীতির শিকড় খুঁজবেন, তখনই তাদেরকে আসতে হবে বর্তমান উন্মাদনার কাছে। প্রথমত, এর কারণ ব্রেক্সিট বৃটেনের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তা এতটাই টেকসই হয়েছে যে, আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বাড়তি মার্কেট সুবিধাকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। দ্বিতীয়ত, ব্রেক্সিটের কারণে এবং বৃটেনের উত্তরাধিকার সূত্রে সার্বভৌমত্বের ম্যাজিক্যাল চিন্তাভাবনার ফলে পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট থেকে অন্য দিকে চলে গেছে। ডিতের্ত বলেছেন, লিজ ট্রাসের নাটকীয় ব্যর্থতা এখন সেই চিন্তাভাবনার ইতি ঘটাতে পারে। বৃটেনের জন্য হতে পারে টার্নিং পয়েন্ট।