মহান বিজয় দিবস পালিত

Published: 16 December 2022

বিশেষ সংবাদদাতা :


যথাযথ মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালন করেছে জাতি। শুধু দেশ নয় ভারতের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশের বিজয় দিবস উদযাপণ করা হয়েছে।
এ উপলক্ষ্যে বিস্তারিত কর্মসূচি পালন করা হয়। সরকারী বেসকারী উদ্যোগে আলোচনা সভা থেকে শুরু করে সকল ধরণের কর্মসূচি পালন করা হয়।
সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ৫১তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বীর শহীদদের উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ শুক্রবার সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রবেশ করে মূল বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা।

প্রথমে রাষ্ট্রপতি জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।

এরপর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর একটি চৌকস দল এ উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে সই করেন রাষ্ট্রপতি ও সরকার প্রধান।

পরে রাষ্ট্রপতি স্মৃতিসৌধ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হলেও দলের সভাপতি হিসেবে দলীয় নেতাদের সঙ্গে আরো একবার জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, তিন বাহিনীর প্রধান, ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার এবং ঢাকা জেলার জেলা প্রশাসক উপস্থিত ছিলেন।

সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে সকাল ৬ টা ৪৫ মিনিটে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ থেকে ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরটি।

বিজয় দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে নামে লাখো জনতার ঢল। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা নিবেদনের পর সৌধ প্রাঙ্গণ উন্মুক্ত করা হলে বাড়তে থাকে জনতার স্রোত। শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে এসে এমন চিত্র দেখা যায়।

রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ, স্থানীয় ও দেশের দূর-দূরান্ত থেকে আসা জনতার ঢল নামে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে।
সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমেছিলে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে। শহীদবেদী ভরে ওঠে ফুলে ফুলে। লাল-সবুজের পতাকায় ছেয়ে গেছে সৌধ প্রাঙ্গণ। মানুষের হাতে হাতে ফুল। পরনে ছিল লাল সবুজের ছোঁয়া।

এ সময় স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রেসক্লাব, সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে এবং সব বয়সী মানুষকে স্মৃতিসৌধের বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে দেখা যায়। এছাড়া একে একে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, গণফোরাম, জাসদ, বাম দলসহ নানা রাজনৈতিক দলগুলো বীর শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

শীতের ভোরে ভিড় উপেক্ষা করে জাতির বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ। ভোরের রক্তিম সূর্যোদয়ের সাথে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় বাড়তে থাকে হাজার হাজার মানুষের। এসেছিলেন যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারাও। সবার চোখে-মুখে ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সোনার বাংলা বিনির্মাণের অবিচল আস্থার ছাপ। স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ ও উচ্ছ্বাসে স্মৃতিসৌধকে ঘিরে গোটা সাভার যেন পরিণত হয়েছে উৎসবের নগরীতে।

মাথায় বাঁধা বিজয় দিবসের ফিতা, হাতে লাল সবুজের পতাকা। বাবার কোলে করে বীর শহীদের বেদী ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে ছোট শিশুরাও।

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও এসেছিলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে। মাথায় লাল-সবুজের পতাকা, সারিবদ্ধভাবে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করে শহীদবেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তারা।

শহীদবেদীতে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন সাভারের বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হোসেন মন্ডল। তিনি বলেন, আজ স্মৃতিসৌধে গণমানুষের ঢল নেমেছে। সবাই একে একে নিবেদন করছেন শ্রদ্ধা। আমি আমার সহযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানিয়েছি। আমি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হয়ে বেঁচে আছি। কিন্তু আমার সহযোদ্ধারা এই স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে জীবন দিয়েছেন। তারা দেখে যেতে পারেননি স্বাধীনতা। আজ তারা সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধায় সিক্ত। এটাও আমার কাছে বড় পাওয়া।

স্থানীয় পোশাক শ্রমিক খলিল হোসেন বলেন, আমরা দিনভর কারখনায় কাজের চাপে থাকি। বছরে দুই বার আমরা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করা বীর শহীদদের স্মরণ করার সুযোগ পাই। আজ তাই পুরো পরিবার নিয়ে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। এখানে আসলেই গর্বে বুকটা ভরে যায়।

গাজীপুর থেকে শ্রদ্ধা জানাতে আসা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা যুদ্ধ করতে পারিনি। কিন্তু যারা যুদ্ধ করেছেন, দিয়েছেন দেশের জন্য প্রাণ তাদের কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করা প্রয়োজন। তাই শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। এখানে আমি প্রতিবারই আসি।

এদিকে, ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নিরাপত্তার কঠোর ব্যবস্থা। সিসি ক্যামেরাসহ সাদা পোশাকেও পুলিশের নজরদারি রাখা হয়েছে।