বড়দিনের আগে বড় বিপদ যুক্তরাষ্ট্র-কানাডায়
পোস্ট ডেস্ক :
কনকনে ঠান্ডা আর তীব্র তুষারপাতে নাকাল যুক্তরাষ্ট্র-কানাডা এবার আরও বড় বিপদের মুখে পড়ছে।
খ্রিষ্টীয় ধর্মোৎসব বড়দিনের (২৫ ডিসেম্বর) আগেই ভয়ংকর তুষারঝড় বোম্ব সাইক্লোনের মুখে পড়ছে শীতপ্রধান দেশ দুটি।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের (এনডব্লিউএস) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় আজ থেকে শনিবার সকালের মধ্যেই বোম্ব সাইক্লোন আছড়ে পড়বে দেশে। এর দুদিন আগেই একই হুঁশিয়ারি দেন কানাডার আবহাওয়াবিদরাও। বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি, সিএনএন।
তাপমাত্রা খুব দ্রুত নামতে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র-কানাডায় মাত্র পাঁচ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে অনাবৃত ত্বকে ফ্রস্টবাইট হতে পারে বলে সতর্ক করছেন বিশেষজ্ঞরা। সাধারণত রক্ত প্রবাহ কমে গেলে, প্রায়শই নাক, গাল বা হাত পায়ের আঙুলে ফ্রস্টবাইট হতে পারে। শরীরে উষ্ণ রক্ত প্রবাহের অভাবে ত্বকের টিস্যু জমে গিয়ে ফেটে যেতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে অঙ্গহানি পর্যন্ত হতে পারে।
প্রতি বছরই এই সময় যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় তাণ্ডব চালায় এই বরফের ঘূর্ণিঝড়। তছনছ করে দেয় বিস্তীর্ণ এলাকা। এখনই তাপমাত্রার পারদ নেমে গেছে হিমাঙ্কের ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচে। কনকনে ঠান্ডায় তুমুল ঝড়ো হাওয়ায় বিধ্বস্ত স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
বরফ জমেছে রাস্তাঘাটে। যান চলাচল বিপর্যস্ত। বাতিল করা হয়েছে ৪৪শ’ উড়ান। শীতকালীন এই ঝড়ের প্রভাবে দেশটিতে গড় তাপমাত্রা নেমে যেতে পারে মাইনাস ৪০ থেকে ৫৬ ডিগ্রি সেলিয়াসে। আগামী কয়েক দিন দেশটির বেশির ভাগ অংশে বিপজ্জনক ঠান্ডা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে।
ফলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭টি অঙ্গরাজ্যে। কানাডার অন্টারিও প্রদেশের রাজধানী টরোন্টোতে শনিবার ঘণ্টায় ৯০ কিমি. বেগে তুষার ঝড় হতে পরে। বরফ জমতে পারে ৫-১৫ সেমি. পর্যন্ত। সতর্কতা জারি করা হয়েছে কুইবেক শহরেও। বোম্ব সাইক্লোন বলতে এমন এক ঝড়কে বোঝায় যার প্রকোপ খুব অল্প সময়ের মধ্যে তীব্র থেকে তীব্রতর হয়, এর কেন্দ্রীয় বায়ুচাপ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কমপক্ষে ২৪ মিলিবার কমে যায়। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজের ব্রিফিংয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ‘এটি আপনার ছোটবেলায় দেখা সাধারণ তুষার দিনের মতো নয়, এটি খুবই গুরুতর পরিস্থিতি।’
মার্কিন আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে এই তুষারঝড় শুরু হয়। ক্রমেই এই ঝড় এগিয়েছে পূর্ব দিকে। চলতি সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রে উত্তরদিকের হ্রদগুলো পুরোপুরি জমে যাবে। জীবনযাত্রার ঝুঁকিতে পড়বে প্রায় ১৪ কোটি মানুষ।
বড়দিন উপলক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় এই সময় শীতকালীন ছুটির মৌসুম। বড়দিনের সেলিব্রেশনের তোড়জোড় চলছে নানা জায়গায়। এর মধ্যেই তুষাঝড়ের সতর্কতা জারি হয়েছে। ফলে সবকিছুই ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। ঘরবন্দি হয়ে থাকতে হচ্ছে মানুষজনকে। অনেক জায়গা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন। এর প্রভাবে দেশটিতে বৃহস্পতি ও শুক্রবার চার হাজার ৪০০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এর মধ্যে কেবল শুক্রবারই বাতিল করা হয়েছে ২১০০টিরও বেশি ফ্লাইট। ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইট ‘ফ্লাইটঅ্যাওয়ার’ এর তথ্যানুযায়ী, স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রে দুই হাজার ৩৫০টিরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া শুক্রবারের নির্ধারিত আরও ২ হাজার ১২০টি ফ্লাইটও ইতোমধ্যেই বাতিল করা হয়েছে।অন্যদিকে রেলপথে যাত্রী সেবা দেওয়া অ্যামট্র্যাক ক্রিসমাসের আগে-পরে কয়েক ডজন ট্রেন বাতিল করেছে। এতে করে যুক্তরাষ্ট্রে ছুটির মধ্যে হাজার হাজার মানুষের ভ্রমণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
‘ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস’ (এনডব্লিউএস) জানাচ্ছে, প্রায় দুই ফুটের উপর বরফ জমে রয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। তা ছাড়া শীতল থেকে শীতলতর হাওয়ার পূর্বাভাস বোস্টন, ম্যাসাচুসেটস, নিউ ইয়র্ক ইত্যাদি বিভিন্ন এলাকায়।
গাছপালা, রাস্তা, রাস্তার পাশে দাঁড়ানো গাড়ি, সবই সাদা বরফে ঢাকা। পাল্লা দিয়ে চলছে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। হাওয়া অফিসের সতর্কতা, তাপমাত্রা আরও নিচে নামবে। ঠান্ডায় তীব্র সমস্যায় পড়েছেন মানুষজন।