সৌদিতে ভ্যালেন্টাইনস ডে : দম্পতিদের পাশাপাশি প্রকাশ্যে অবিবাহিতরাও

Published: 13 February 2023

পোস্ট ডেস্ক :


ভ্যালেন্টাইনস ডে বা ভালোবাসা দিবস, অর্থাৎ ১৪ ফেব্রুয়ারি যত এগিয়ে আসে সৌদি আরবের ফুলের দোকান এবং রেস্তোরাঁগুলো উপলক্ষটি স্মরণীয় করতে হরেক রকমের তোড়া ও মেন্যু দিয়ে দম্পতি ও অবিবাহিতদের প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করে।

সাত বছর আগে প্রেমিক-প্রেমিকারা সঙ্গীকে উপহার দেওয়ার জন্য এক সপ্তাহ আগে থেকেই পরিকল্পনা করত। কারণ সে সময় দেশটির পুণ্য প্রচার ও পাপ প্রতিরোধ কমিটির কাছে ধরা পড়ার ভয় ছিল তাদের। কমিটিটি বর্তমানে বিলুপ্ত। তারা ওই সময় লাল গোলাপ বিক্রি নিষিদ্ধ করেছিল। শুধু তা-ই নয়, ১৪ ফেব্রুয়ারি ও তার আগের দিনগুলোতে কোনো লাল রঙের জিনিস দোকানগুলোতে প্রদর্শন করা নিষিদ্ধ ছিল। ফলে ফুলের তোড়া এবং হৃদয় আকৃতির সজ্জিত পণ্যগুলো দম্পতিদের কাছে উচ্চ মূল্যে গোপনে বিক্রি করা হতো।

কিন্তু সৌদি আরব সারা দেশে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য সংস্কার প্রণয়ন করে চলেছে। বর্তমানে নাগরিক এবং বাসিন্দারা প্রতিবছর এই উদযাপনকে আরো বেশি করে প্রকাশ্যে আলিঙ্গন করছে।

ইউসেফ মুসা বলেন, ‘আমার স্ত্রী এবং আমি ১০ বছর ধরে বিবাহিত। আগে আমরা বাড়িতে ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন করতাম। এক সপ্তাহ আগে থেকে একে অপরকে ছোট ছোট উপহার কিনে দিতাম। আমি ফুল অর্ডার করতাম, যেগুলোর দাম দ্বিগুণ হয়ে যেত। কিন্তু এ বছর আমরা একসঙ্গে রেসোরাঁয় একটি সুন্দর নৈশভোজ উপভোগ করার পরিকল্পনা করেছি। জনসমক্ষে আমাদের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পেরে ভালো লাগছে।’ সৌদি আরবে ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপন করা বিশেষ কিছু বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে দেশটির রিয়াদে মেরাকি নামে একটি গ্রিক রেস্তোরাঁ দম্পতিদের জন্য পেনেলোপ ও ওডিসিয়াসের প্রেমের গল্পে অনুপ্রাণিত আবেগপ্রবণ নৈশভোজের অভিজ্ঞতার আয়োজন করছে। অন্যদিকে যেসব দম্পতি বিশেষভাবে তৈরি করা মেন্যু থেকে খাবার খেতে চান তাদের জন্য জেদ্দার বিশ্ববিখ্যাত জাপানি রেস্তোরাঁ নোবু একটি লাইভ ডিজে পরিবেশন করবে।

অনলাইনে ফুল বিক্রির কম্পানি ফ্লোওয়ার্ড জানায়, তাদের জন্য ভ্যালেন্টাইনস ডে হলো বছরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন। গত বছর কম্পানিটি সৌদির একজনের কাছ থেকে তাদের সবচেয়ে ব্যয়বহুল অর্ডার পেয়েছিল। তিনি তিন হাজার মার্কিন ডলারের ফুল এবং অন্যান্য জিনিসপত্র উপহার কিনেছিলেন।

ফ্লোয়ার্ডের প্রধান নির্বাহী এবং চেয়ারম্যান আবদুল আজিজ আল-লোঘনি বলেন, ‘প্রতিবছর ভ্যালেন্টাইনস ডেতে অন্যান্য দিন এবং অনুষ্ঠানের তুলনায় বিক্রি কয়েক গুণ বৃদ্ধি পায়। প্রতিবছর আমরা এই দিনে একটি ক্রমবর্ধমান চাহিদা লক্ষ্য করছি এবং আরো বেশি লোক এই বিশেষ মুহূর্তটি উদযাপন করছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমরা মনে করি, মানুষের এই মনোভাব এবং আচরণ আগে থেকেই তাদের মধ্যে বিদ্যমান ছিল। কিন্তু এখন তারা এগুলো প্রকাশ্যে আনা শুরু করেছে।’

দেশটিতে বর্তমানে বিধি-নিষেধ কমে গেছে, যার ফলে দম্পতি এবং অবিবাহিতরা আর প্রকাশ্যে ভালোবাসা দিবস উদযাপন করতে লজ্জা পাবে না। রানিয়া হাসান বলেন, ‘আমার বন্ধুদের গ্রুপ এবং আমি অফিসে একে অপরের হাতে গোলাপ এবং চকলেট তুলে দেব। এই দিনে একে অপরকে ভালোবাসা দেখানোর এটি একটি সুন্দর উপায়।’

রিয়াদের একটি ফুলের দোকানের ব্যবস্থাপক সোনিয়েল বলেন, মানুষ এখন আর ফুলের তোড়ার কার্ডে তাদের অনুভূতি লেখার সময় দ্বিতীয়বার ভাবেন না। আগে তারা তিন-চার দিন আগে এসে ফুল অর্ডার দিত। অনেকেই কার্ডে কিছু লিখতেন না। কিন্তু সৌদির মানুষ এখন সরাসরি ফুল অর্ডার করছে। আগের মতো কেউ গোপনে বা বেনামী বার্তা পাঠিয়ে আর ফুল অর্ডার করে না।