কাবাঘর কখন ধোয়া হয়, কারা অংশ নেন

Published: 3 August 2023

পোস্ট ডেস্ক :


প্রতি হিজরি সনের ১৫ মহররম পবিত্র কাবাঘর ধোয়ার কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। সেই ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার (২ জুলাই) অনুষ্ঠিত এ কার্যক্রমে অংশ নেন বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের পক্ষ থেকে মক্কার ডেপুটি গভর্নর প্রিন্স বাদর বিন সুলতান, শায়খ ড. আবদুর রহমান আল-সুদাইসসহ দেশটির উচ্চপদস্থ ব্যক্তিরা। অনেক সময় মুসলিম দেশের রাষ্ট্রদূতদেরও এতে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়।

কাবাঘর ধোয়ার কর্মসূচি কয়েক ধাপে সম্পন্ন হয়।

প্রথমে পবিত্র ঘরের বাইরে গিলাফ নিচের দিক থেকে কিছু অংশ ওপরে তোলা হয়। এরপর কাঠের তৈরি অত্যাধুনিক ইলেকট্রিক সিঁড়ি ব্যবহার করে সংশ্লিষ্টরা কাবাঘরের দরজায় গিয়ে উপস্থিত হন। সিঁড়িটির ওজন সাড়ে ছয় টন, উচ্চতা ৪.৮০ মিটার, প্রস্থ ১.৮৮, দৈর্ঘ্য ৫.৬৫ মিটার। এতে জমজমের পানির লকার, ২৪টি ব্যাটারি ও কাবার ভেতরের অংশ দেখার উজ্জ্বল বাতি রয়েছে।

অতঃপর পবিত্র কাবাঘরের দ্বাররক্ষী শায়খ সালেহ আল-শায়বা চাবি দিয়ে দরজা উন্মুক্ত করলে সবাই ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর গোলাপজল মিশ্রিত জমজম পানি দিয়ে তা ধোয়া হয়।

কয়েক ধাপে পবিত্র কাবাঘর ধোয়ার পর্ব সম্পন্ন হয়। তা হলো-

প্রাথমিক পর্ব : প্রথমে ২০ লিটার পবিত্র জমজম পানি জমা করা হয়।

অতঃপর তা ১০ লিটার করে রুপার দুই গ্যালনে ভাগ করে রাখা হয়। একটি গ্যালনে ৫৪০ মিলিলিটার তায়েফি গোলাপজল, ২৪ মিলিলিটার উন্নতমানের তায়েফি গোলাপের তেল, ২৪ মিলিলিটার বিশেষ উদ তেল ও তিন মিলিলিটার কস্তুরি মেশানো হয়। অতঃপর সবগুলো উপাদান ভালোভাবে মিশিয়ে ঘন করা হয়। অপর গ্যালনের জমজম পানিতে কোনো কিছু মেশানো হয় না। অতঃপর কাবাঘরের ভেতরে উন্নতমানের উদ নামক সুগন্ধি দিয়ে বাষ্পীভূত করা হয়।

এরপর কাবার মেঝেতে প্রায় আধা কেজি উচ্চমানের উদ ও পাঁচ লিটার বিশেষ সুগন্ধি মিশ্রিত জমজম পুরোপুরি ঢেলে ধুয়ে ফেলা হয়।

উপাদানের প্রস্তুতি : পবিত্র কাবাঘর ধোয়ার কার্যক্রমে বেশ কিছু সরঞ্জাম ব্যবহৃত হয়। তা হলো উন্নতজাতের সুতি কাপড়ের টুকরা ও তুলা, যাতে রয়েছে জেনারেল প্রেসিডেন্সির সেলাই লোগো। পবিত্র কাবার দেয়াল ও স্তম্ভগুলো পরিষ্কার ও সুগন্ধি দেওয়ার জন্য ওপরে উল্লিখিত প্রক্রিয়ায় টুকরাগুলো ভেজানো হয়। এরপর তাতে কয়েক ফোঁটা উদ দেওয়া হয় এবং পুরো মেঝে মোছা হয়।

শুকানোর পর্ব : পবিত্র কাবাঘরের মেঝেতে জমজম পানি দিয়ে মোছার পর বিশেষ প্রক্রিয়ায় তা শুকানো হয়। এতে রৌপ্যের তৈরি হাতলযুক্ত সরঞ্জাম ব্যবহৃত হয়। তাতে জেনারেল প্রেসিডেন্সির লোগো যুক্ত রয়েছে।

উল্লেখ্য, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সময় থেকে পবিত্র কাবাঘর ধোয়ার ঐতিহ্য চলে আসছে। অষ্টম হিজরিতে রাসুল (সা.) মক্কা বিজয়ের পর পবিত্র কাবাঘর ধৌত করেন। ইসলামের সম্মানিত খলিফারাও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এ কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন। তাঁদের পর থেকে আজ পর্যন্ত এ প্রথা চালু রয়েছে। প্রতিবছর শাবান মাসের শেষ মুহূর্তে ও জিলহজ মাসে কাবাঘর ধোয়া হতো। ২০১৬ সাল থেকে বছরে একবার ধোয়ার নিয়ম করা হয়। তখন থেকে প্রতি হিজরি সনের ১৫ মহররম কাবাঘর ধোয়ার রীতি চলছে।