জগন্নাথপুরে মৃত চালকের বিরুদ্ধে ৩ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা

Published: 26 August 2023

বিশেষ সংবাদদাতা :


সুনামগঞ্জ জেলার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো ওপর নির্মিত ১৪টি বেইলি সেতু বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুগুলো ভেঙে যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। এসব সেতু দিয়ে অনেক সময় ধারণক্ষমতার বেশি মালামাল নিয়ে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরি চলাচল করে। ফলে সব সময় অস্বস্তিতে থাকেন এসব পথে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা।

প্রায় সময় এসব বেইলি সেতু ভেঙে যানমালের ক্ষতি হয়। সর্বশেষ মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) জগন্নাথপুর কাটাগাং বেইলি সেতু ভেঙে পড়ে ট্রাকের চালক ও হেলপারের মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার থেকে ওই পথে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকা যেতে সময় ও অর্থ সাশ্রয়ী পথটি বন্ধ হয়ে গেল। তবে এ পথের যাত্রীরা সিলেট হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করছেন আগের মতো। কাটাখাল বেইলি সেতুটি ভেঙে পড়ায় ওই রাতেই সড়ক ও জনপথ (সওজ) দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকের মালিক ও চালককে আসামি করে তিন কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেছেন সুনামগঞ্জ সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান।

তবে এ মামলার বিষয়ে স্থানীয়দের বক্তব্য, দুর্বল বেইলি সেতু দিয়ে ভারী ট্রাক চলতে দেওয়া ঠিক হয়নি। এখন উল্টো মৃত চালকের ওপর মামলার ঘটনাটি আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে।

এসব বিপজ্জনক বেইলি সেতুগুলো হচ্ছে মদনপুর-দিরাই-শাল্লা সড়কে তিনটি, সুনামগঞ্জ-কাছিরগাতি-বিশম্ভরপুর সড়কে ছয়, জামালগঞ্জ- সুনামগঞ্জ সড়কে তিন ও শান্তিগঞ্জ-জগন্নাথপুর অংশে দুটি বেইলি সেতু। সেতুগুলো দিয়ে যানবাহন চলাচলের সময়ে আতঙ্কে থাকেন যাত্রী ও চালকরা। কখন যে সেতু ভেঙে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে তা কে জানে।

প্রবাসী অধ্যুষিত জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ সদরসহ অন্তত সাতটি উপজেলার বাসিন্দারা মুখিয়ে ছিলেন সুনামগঞ্জ-পাগলা-জগন্নাথপুর-ঢাকা সড়ক চালুর জন্য। অবশেষে গত বছরের ৭ নভেম্বর ৭০২ মিটার দীর্ঘ ও ১২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কুশিয়ারা সেতুটি চালু হয়। সূত্র মতে, কুশিয়ারা সেতু ও পাগলা সড়কের কাজটি শেষ হতে ৩০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। এতে সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকার দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার কমে আসে। যানবাহনের জ্বালানিও সাশ্রয় ঘটে। এই পথের যাত্রীরাও উত্ফুল্ল হন।

দুটি বেইলি সেতু চার মাসে চার বার ভেঙে যায়

কিন্তু সড়কটি চালু হলেও স্বস্থি ছিল না বিপজ্জনক বেইলি সেতুর জন্য। শান্তিগঞ্জ-জগন্নাথপুর অংশে দুটি বেইলি সেতু চার মাসে চার বার ভেঙে যায়। জগন্নাপুরের কাটাগাং বেইলি সেতু ভেঙে পড়ে দুজনের মৃত্যুর আগে ১৬ জুলাই এই সেতুটি ভেঙেছিল। এ বছরের ২৮ মার্চ একটি তেলবাহী লরি শান্তিগঞ্জের বমবমি বেইলি সেতু পার হওয়ার সময় তিনটি পাঠাতন ভেঙে যায়। ৬ এপ্রিল একইভাবে আবারও এই সেতুর দুটি পাঠাতন ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। বারবার এভাবে সেতু ভেঙে জনভোগান্তিতে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

এলাকাবাসী বলেন, দীর্ঘদিনের দাবি বেইলি সেতু অপসারণ করে আরসিসি ব্রিজ স্থাপন। কিন্তু তা না করে মেরামত ও সংস্কারের নামে সরকারি টাকার অপচয় করা হচ্ছে। যান-মালের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে।

তিন কোটি টাকার মামলা

কাটাখাল বেইলি সেতু ভেঙে পড়ায় ওই রাতেই সড়ক ও জনপথ (সওজ) দুর্ঘটনাকবলিত ট্রাকের মালিক ও চালককে আসামি করে তিন কোটি টাকার ক্ষতি মামলা করেন সুনামগঞ্জ সওজের উপসহকারী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান। তবে এ মামলার বিষয়ে স্থানীয়রা বলেন, দুর্বল বেইলি সেতু দিয়ে ভারী ট্রাক চলতে দেওয়া সঠিক হয়নি। এখন উলটো মৃত চালকের ওপর মামলার বিষয়টি আমাদের অবাক করেছে।

পাগলা-জগন্নাথপুর সড়কের রানীগঞ্জ সেতুসহ ৩৬ কিলোমিটার অংশ সুনামগঞ্জ জেলার সীমানায়। বাকি ১০ কিলোমিটার হবিগঞ্জ জেলার সীমানায় পড়েছে।

কয়েক জন গাড়ির চালক বলেন, ৩০০ কোটি টাকা খরচ করে সড়ক ও সেতু নির্মাণ হয়েছে। এখন কয়েকটি বেইলি সেতুর কারণে এই সড়কে সুফল আটকে থাকতে পারে না।

এলাকাবাসী বলেন, আরসিসি সেতু না হওয়া পর্যন্ত মালবোঝাই ট্রাকসহ ভারী যানবাহনগুলোকে আগের মতো সিলেট-সুনামঞ্জ সড়ক পথে ঘুরিয়ে দিতে হবে।

সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বললেন, ‘বমবমি’ বেইলি সেতু অংশে আরসিসি সেতুর দরপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। শিগিগরই কাজ শুরু হবে। কাটাগাংয়ের বেইলি সেতুর পাশেও একটি আরসিসি সেতু নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এসব সেতু দিয়ে ১০ টনের অধিক মালামাল বহন না করার জন্য সাইনবোর্ড দেওয়া আছে। পুলিশকেও জানানো আছে। কিন্তু তারা নিষেধ শুনছেন না।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সুনামগঞ্জ-মদনপুর বেইলি সেতুটির পাঠাতন প্রায়ই ভেঙে পড়ে। দুর্ভোগে পড়েন দিরাই, শাল্লা, জামালগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ সদরের একাংশের মানুষ।