হামাস কি ইসরায়েলের ধারণার চেয়েও কৌশলী

Published: 11 October 2023

পোস্ট ডেস্ক :

সম্প্রতি ইসরায়েলে হামাসের হামলায় যে কৌশলগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, তা এ যাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে পরিশীলিত। ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠীটি স্থল, পানি ও বায়ু তিন মাধ্যমেই হামলা চালায়। শুরুতে ড্রোন ব্যবহার করে ইসরায়েলি পর্যবেক্ষণ পোস্টে হামলা এবং ব্যাপক রকেট হামলা করে আয়রন ডোম প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আচ্ছন্ন করে দেওয়া হয়। এরপর সীমান্ত পেরিয়ে একাধিক দিক থেকে আক্রমণ, সৈন্যদের বন্দি এবং সামরিক সরঞ্জাম দখল করা হয়। ইসরায়েলি সীমান্ত সম্প্রদায়গুলোয় আক্রমণ রেকর্ডিং ও সম্প্রচার, সৈন্য ও বেসামরিক নাগরিকদের বন্দি এবং তাদের গাজা উপত্যকায় নিয়ে আসার মতো মনস্তাত্ত্বিক উপাদানও ব্যবহার করা হয়েছে।

হামাস এমন সময়ে এ আক্রমণের পরিকল্পনা করে, যখন ইসরায়েল রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। ইসরায়েলিদের মধ্যে বিভক্তির কারণ প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ডানপন্থি সরকার। সর্বকালের সবচেয়ে কট্টরপন্থি এ প্রশাসন এমন কিছু আইন তৈরি করে, যেগুলো বিচার বিভাগকে দুর্বল করে দেবে। এর প্রতিবাদে বিরোধীরা বিক্ষোভ করছিল। গোয়েন্দাদের বিভ্রান্ত করতেই এই অস্থিরতার মধ্যে হামলার পরিকল্পনা করা হয়।

সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুসারে, হামাস টানেল অবকাঠামোয় প্রচুর বিনিয়োগ করেছে। ভূগর্ভস্থ চলাচলের একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে, যা ইসরায়েলি চেক পয়েন্টগুলো পাশ কাটিয়ে অবিশ্বাস্য হামলা চালাতে ব্যবহার করা যায়।

সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, হামাস বিভিন্ন উৎস থেকে রণকৌশল শিখেছে। ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে অতীতের সংঘর্ষ এবং ২০০২ সালে জেনিনে যোদ্ধাদের কৌশলগুলো নিয়ে তারা ব্যাপক অধ্যয়ন করেছে। পাশাপাশি নিজস্ব উদ্ভাবন অন্তর্ভুক্ত করেছে। অতীতের সংঘর্ষগুলো হামাসকে শহুরে যুদ্ধের মূল্য এবং ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি), টানেল নেটওয়ার্ক, মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ ও অসম যুদ্ধের সর্বাধিক ব্যবহার শিখিয়েছে।

জেনিনের যুদ্ধ থেকে হামাস যে মূল শিক্ষা নিয়েছে তার মধ্যে একটি হলো, ইসরায়েলি সামরিক অভিযানকে ব্যাহত করতে আইইডির কার্যকারিতা। এগুলো কম খরচে এবং সহজেই লুকিয়ে রাখা যায়, যা অসম যুদ্ধের জন্য একটি মূল্যবান হাতিয়ার। হামাস তার অস্ত্রাগারে আইইডি অন্তর্ভুক্ত করেছে। সেগুলোকে ইসরায়েলি সামরিক যান, টহল ও স্থাপনার মতো লক্ষ্যবস্তুতে ব্যবহার করছে। ইসরায়েল গাজায় স্থল আক্রমণ চালালে প্রায় নিশ্চিতভাবে এ কৌশলগুলোর ব্যবহার দেখা যাবে।

দিন শেষে হামাস এমন একটি সেনাবাহিনীর সঙ্গে লড়াই করছে, যাদের হাতে অত্যাধুনিক ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও যুদ্ধবিমান রয়েছে। অন্যদিকে হামাসের কাছে নিজস্ব প্রযুক্তির আইইডি, রকেট ও হালকা অস্ত্র ছাড়া কিছু নেই। এ কারণেই দলটি পুরোপুরি কৌশলের ওপর নির্ভর করছে। এ ক্ষেত্রে তারা নিজস্ব বাহিনীতে হতাহতের সংখ্যা কমাতে এবং সরাসরি সংঘর্ষ কমিয়ে তাদের অভিযানের প্রভাব সর্বাধিক করতে হিট-অ্যান্ড-রান আক্রমণ, অ্যাম্বুশ ও স্নাইপারের কৌশল ব্যবহার করছে।

সর্বশেষ এ হামলা থেকে হামাস কী আশা করছে তা স্পষ্ট নয়। কারণ ওই অঞ্চল থেকে তারা ব্যাপক সামরিক সহায়তা পাবে, এমন সম্ভাবনা নেই। ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে এবং ফিলিস্তিনি উপদলগুলোর মধ্যে আলোচনার জন্য স্থবির কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ওপর এর কী প্রভাব পড়ে তাও দেখার বিষয়। তবে যা স্পষ্ট তা হলো, এ কারণে গাজার নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের দুর্ভোগ পোহাতে হবে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শিগগিরই স্থলপথে হামলা চালাবে ইসরায়েলি সেনারা। এতে গাজাবাসীর দুর্ভোগ আরও বাড়বে। আবার ইসরায়েলের বেসামরিক লোকজনও স্বজনদের মৃত্যুশোক এবং নিখোঁজদের জন্য মরিয়া হয়ে অনুসন্ধান করছে। সব মিলিয়ে হামাসের অপারেশনাল চমক কি কৌশলগত ক্ষতির কারণ হবে? এর উত্তর দিতে পারে কেবল সময় এবং অসহায় মানুষের জীবন।