আল শিফা হাসপাতাল প্রায় গোরস্থান, লাশ পচছে, পশুতে খাচ্ছে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

Published: 14 November 2023

পোস্ট ডেস্ক :


গাজায় আল শিফা হাসপাতাল প্রায় গোরস্থানে পরিণত হয়েছে। এমন সতর্কতা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। পুরো হাসপাতাল এখন অবরুদ্ধ। ফলে সেখানে যেসব মানুষ মারা গেছেন, তাদের দেহে পচন ধরেছে। চারদিকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। হাসপাতালের ম্যানেজার বলেছেন, আশপাশের মৃতদেহ এখন কুকুরে খাচ্ছে। ইসরাইলের স্নাইপাররা কাউকে বাইরে দেখলেই গুলি ছুড়ছে। ফলে মৃতদেহ দাফন করতে পারছে না হাসপাতালগুলো। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

হাসপাতালের চারদিকে বোমা হামলা চালানোর ফলে কয়েক হাজার মানুষ আটকে আছেন গাজার সবচেয়ে বড় এই হাসপাতালে। কর্মকর্তারা বলছেন, মৃতদেহগুলো একটির পর একটি স্তূপ করে রাখা হয়েছে।

তাতে পচন ধরেছে। এ অবস্থায় আল শিফা হাসপাতালে বিদ্যুৎ নেই। জ্বালানি নেই। এ জন্য অপরিণত নবজাতকদেরকে ইউকিউবেটর থেকে বের করে আনা হয়েছে। এমন অবস্থায় এই হাসপাতাল প্রায় গোরস্থানে পরিণত হয়েছে বলে সতর্কতা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কয়েক দিনে এই হাসপাতালের চারদিকে ভয়াবহ যুদ্ধ চলছে। কোনো কোনো রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই হাসপাতালেও হামলা হয়েছে। আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, হাসপাতালগুলো সুরক্ষিত থাকতে হবে। সেখানে আগ্রাসী হস্তক্ষেপ হবে না বলে তিনি আশা করেছিলেন। কিন্তু আগ্রাসী ইসরাইল কারো কোনো কথায় পাত্তা দিচ্ছে না। কয়েকদিনে গাজার যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাস ও ইসরাইলি বাহিনীর মধ্যে গাজা সিটিতে তীব্র লড়াই হচ্ছে। হামাস কৌশলী অবস্থান নিয়ে ইসরাইলি সেনাদের বিরুদ্ধে হামলা করছে। এর বেশির ভাগই ঘটছে এই হাসপাতালটির কাছাকাছি রাস্তাগুলোতে। আল শিফা হাসপাতালের গেটের কয়েক মিটারের মধ্যে অবস্থান নিয়েছে ইসরাইলি ট্যাংক ও সমরযান।
ইসরাইলের অভিযোগ এই হাসপাতালের নিচ দিয়ে আছে হামাসের টানেল। সেই টানেল দিয়ে তারা মাটির নিচে যুদ্ধকৌশল নির্ধারণ করে। অস্ত্র জমা রাখে। তবে এ অভিযোগ হামাস যেমন প্রত্যাখ্যান করেছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও প্রত্যাখ্যান করেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইসরাইলি সেনাদের হাসপাতাল পরিদর্শন করার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু তাতে তারা সায় দিচ্ছে না। ইসরাইলের অভিযোগ মানবিক সমাধানে বাধা দিচ্ছে হামাস। তাদের আরও অভিযোগ সাধারণ মানুষকে মানবঢাল হিসেবে ওই হাসপাতালে আটকে রেখেছে হামাস। ইসরাইলি সেনারা বলছে, আল শিফার খুব কাছে যুদ্ধ চলছে। তবে তারা হাসপাতালে কোনো গুলিও চালায়নি, অবরোধও দেয়নি। যদি কেউ চান তাহলে তারা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যেতে পারেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র ক্রিস্টিয়ান লিন্ডমায়ার বলেছেন, এই হাসপাতালে অবস্থান করছেন প্রায় ৬০০ মানুষ। অন্যরা এর বিভিন্ন অংশে অবস্থান করছেন। তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের চারদিকে মৃতদেহ। এসব মৃতদেহের কোনো ব্যবস্থা করা যায়নি। দাফন করা যায়নি। আনা যায়নি হাসপাতালের মর্গে। হাসপাতালটির যতটা কাজ করা উচিত, তারা আর তা করতে পারছে না। এ হাসপাতাল এখন প্রায় একটি গোরস্থানে পরিণত হয়েছে।

ওদিকে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, হাসপাতালটির ভিতরে এখনও অবস্থান করছেন কমপক্ষে ২৩০০ মানুষ। এর মধ্যে ৬৫০ জন রোগী, ২০০ থেকে ৫০০ স্টাফ এবং প্রায় ১৫০০ আশ্রয়প্রার্থী। আল শিফা হাসপাতালের ম্যানেজার ডা. মোহামেদ আবু সেলমিয়া বলেছেন, প্রায় ১৫০টি মৃতদেহ পচে গলে যাচ্ছে। এ থেকে মারাত্মক দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মৃতদেহের স্তূপ পড়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, এসব মৃতদেহকে বাইরে নিয়ে দাফন করার অনুমতি এখন পর্যন্ত দেয়নি ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল চত্বরে এখন কুকুর প্রবেশ করে এসব মৃতদেহ খাচ্ছে।

ওদিকে বিদ্যুৎ না থাকার কারণে ইনকিউবেটরে থাকা কয়েক ডজন অপরিণত নবজাতকের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ডা. সেলমিয়া বলেন, এরই মধ্যে অক্সিজেনের সংকটে মারা গেছে এসব শিশুর মধ্যে সাতজন। এসব শিশুকে উদ্ধারের বিষয়ে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি। তবে এখনও কোনো চুক্তিতে আসা যায়নি। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সিনিয়র উপদেষ্টা মার্ক রেগেভ বলেছেন, শিশুদের উদ্ধারে ‘প্রাকটিক্যাল সমাধান’ প্রস্তাব করেছে ইসরাইল। কিন্তু সেই প্রস্তাব মেনে নিচ্ছে না হামাস। জেনারেটর চালানোর জন্য জ্বালানি দিতে চাইলেও তারা তা নিচ্ছে না। তারা অ্যাম্বুলেন্সে করে এসব বাচ্চাকে সরিয়ে নেয়ার প্রস্তাব সমর্থন করছে না। এ কারণে বাচ্চাগুলো সেখানে আটকে আছে। হাসপাতালটিকে যুদ্ধক্ষেত্র বানিয়ে ফেলার জন্য হামাসকে অভিযুক্ত করেছেন মার্ক রেগেভ। তিনি অভিযোগ করেন এই হাসপাতালের নিচে আছে টানেল। তবে তাদের সব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে হামাস ও হাসপাতালটির চিকিৎসকরা। আল শিফার মতো গাজা উপত্যকার অন্য হাসপাতালগুলোরও প্রায় একই অবস্থা। তাদের কোনো সরবরাহ নেই। বিদ্যুৎ নেই।