গ্রেফতার হতে পারেন মমতা

Published: 22 November 2023

পোস্ট ডেস্ক :


ভারতের এক মুখ্যমন্ত্রীর মুখে অন্য মুখ্যমন্ত্রীর গ্রেপ্তারের আশঙ্কা। অভিযোগ বিরোধী নেতাদের জেলে পুরে ভোটে জিততে চায় বিজেপি।
সাম্প্রতিক অতীতে ভারতজুড়ে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে তদন্তের গতি বেড়েছে। রাজ্যে রাজ্যে অভিযান চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই, ইডি, আয়কর দপ্তর। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল, বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন।
একাধিক দুর্নীতির মামলার সূত্রে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় সংস্থার তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। এই পরিস্থিতিতে বোমা ফাটালেন কেজরিওয়াল। জনসভায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি এজেন্সি দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, হেমন্ত সোরেন, তেজস্বী যাদবের মতো বিরোধীদের নেতাদের গ্রেপ্তার করার ছক এঁটেছে, যাতে কেন্দ্রের শাসক দল নির্বাচনে জিততে পারে।’
আবগারি দুর্নীতির মামলায় জেলে রয়েছেন দিল্লির সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী, কেজরিওয়ালের ‘ডান হাত’ মণীশ। সমনের মুখে পড়া আম আদমি পার্টির শীর্ষ নেতা কেজরিও গ্রেপ্তার হতে পারেন, এমন দুশ্চিন্তা আছে আপ নেতৃত্বের। তারই মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তারির আশঙ্কা।
পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল মন্ত্রিসভার দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে কেন্দ্রীয় সংস্থা। এখন জেলে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তৃণমূলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার সিবিআই ও ইডি জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছেন।
মমতা ও অভিষেক একাধিকবার গ্রেপ্তার নিয়ে কথা বলেছেন। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য আগেই শোনা গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে। জ্যোতিপ্রিয়ের গ্রেপ্তারের পর মমতা বলেন, ‘বিজেপির লক্ষ্য হল সব বিরোধী নেতাদের জেলা পোরা। যাতে বিরোধীশূন্য দেশে বিনা বাধায় ভোটে জিততে পারে তারা।’ অভিষেক বলেছেন, ‘কেন্দ্রীয় সংস্থা দিয়ে আমাদের ধমকানো-চমকানো হচ্ছে। গ্রেপ্তার করলেও আমরা মাথা উঁচু করে থাকব।’
বিরোধী নেতারা বারবার বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছে। কেন্দ্রীয় সংস্থা দিয়ে হেনস্থা করার নালিশ জানিয়েছে। চলতি মাসেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই অরবিন্দ কেজরিওয়াল। ভাই জেলের পথে, দিদিও ভবিষ্যতে সেখানে যাবেন।’
তৃণমূলের প্রশ্ন, বিজেপি নেতারা কীভাবে ঠিক করে দিচ্ছেন কে জেলে যাবেন? তৃণমূল মুখপাত্র শান্তনু সেনের বক্তব্য, ‘বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে কেন তদন্ত হয় না? বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সারদা ও নারদ মামলায় অভিযুক্ত। তাকে কেন সিবিআই, ইডি একবারও ডাকে না?’ এই প্রসঙ্গে বারবার মমতা মুখে শোনা গিয়েছে ‘ওয়াশিং মেশিনের’ তত্ত্ব। তার দাবি, বিজেপিতে যোগ দিলে সব অভিযোগ ধুয়েমুছে যায়!
বিরোধী জোটে প্রশ্ন
বিজেপির বিরুদ্ধে ‘ইন্ডিয়া’ জোট গড়ে এক জোট হয়েছে কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম-সহ অনেকগুলি দল। কিন্তু কংগ্রেস বা বাম নেতৃত্ব কি কেজরিওয়ালের দাবির সঙ্গে একমত? পশ্চিমবঙ্গে তো নয়ই। দিল্লির প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব কেজরিওয়ালের বিরোধী। ফলে আপ সুপ্রিমোর বক্তব্য ঘিরে বিরোধী জোটে ফাটল আবার সামনে এসেছে।
বিজেপির সমালোচক বলেই বিরোধী নেতারা ‘হেনস্থার’ মুখে, এই তত্ত্ব নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। পশ্চিমবঙ্গে মন্ত্রী ঘনিষ্ঠের বাড়িতে মিলেছে কোটি কোটি টাকার নগদ। কোনো মন্ত্রীকন্যার সম্পত্তি বৃদ্ধি নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এক দাপুটে নেতা নেতা কোটি কোটি টাকার ফিক্সড ডিপোজিট করেছেন ব্যাংকে।
এমন নানা তথ্য ও দাবি শোনা যাচ্ছে সিবিআই ও ইডি-র তদন্তে। কোনো সরকার নয়, আদালত কেন্দ্রীয় সংস্থাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক দুর্নীতি মামলায়। এর পাশাপাশি আপ নেতা সিসোদিয়া বা অন্যান্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগকেও কি একই চোখে দেখা হবে?
সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য বলেন, ‘বিজেপি সব বিরোধী নেতাকে চাপে রাখতে চাইছে। এই কৌশলে গলদ আছে। যদি ধরে নিই, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে রেশন দুর্নীতির অভিযোগ সারবত্তা আছে, কিন্তু অন্যান্য রাজ্যে কেন্দ্রীয় সংস্থার ভূমিকা প্রকৃত অভিযোগের গুরুত্ব হালকা করে দিচ্ছে।’
উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘মহারাষ্ট্রে অভিযুক্ত এনসিপি নেতারা বিজেপির পাশে দাঁড়ালেন, তারপর তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভুলে গেল তদন্তকারী সংস্থা! শাসকের পক্ষে থাকলে অসুবিধা হচ্ছে না। তাই কে অপরাধী আর কাকে টার্গেট করা হচ্ছে, দুটো এক জায়গায় এসে দাঁড়াচ্ছে।’