নৌকাই উন্নয়নের একমাত্র হাতিয়ার: শেখ হাসিনা
বিশেষ সংবাদদাতা :
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নৌকাই দেশের উন্নয়নের একমাত্র হাতিয়ার। এই নৌকা হলো নুহ (আ.) নবীর নৌকা। এই নৌকায় মানবজাতিকে রক্ষা করেছিলেন রাব্বুল আলামিন। এই নৌকায় ভোট দিয়ে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। আবার নৌকা যখন ক্ষমতায় এসেছে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে।এই নৌকা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছে। এই নৌকাই স্মার্ট সোনার বাংলা গড়ে তুলবে।
শনিবার বিকালে মাদারীপুরের কালকিনি সৈয়দ আবুল হোসেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ মাঠে নির্বাচনি জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দিচ্ছি, সেখানে বিনিয়োগ হবে, দেশি-বিদেশি। কারণ, আওয়ামী লীগ সরকার বিশ্বাস করে, তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের অগ্রগতি। এই তারুণ্যকে আমরা উপযুক্তভাবে তৈরি করতে চাই স্মার্ট তরুণ সমাজ হিসেবে। দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়তে চাই।
তিনি বলেন, যুব সমাজের জন্য কাজের ব্যবস্থা করেছি। কম্পিউটার ও ডিজিটাল ডিভাইস- এগুলোর ব্যবস্থা করে দিয়েছি। আমরা বলেছিলাম ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ব, দিন বদলের সনদ দিয়েছিলাম, বাংলাদেশ ১৫ বছরে বদলে গেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন থেকে শুরু করে অবকাঠামো উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা-স্বাস্থ্য সবদিকেই আজকে বাংলাদেশ উন্নয়ন করেছে। এই হলো বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। আমাদের লক্ষ্য হলো ২০৪১ সাল। এই ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলব।
পদ্মা সেতুতে কোনো দুর্নীতি হয়নি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আবুল হোসেন যখন যোগাযোগমন্ত্রী। তখন হঠাৎ বিশ্বব্যাংক একটা অভিযোগ নিয়ে আসল, পদ্মা সেতুর টাকায় দুর্নীতি হয়েছে। তখন পদ্মা সেতু নির্মাণ এই অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি, দক্ষিণাঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এখানে কেউ দুর্নীতি করবে, এটা কখনই বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হচ্ছিল, আমাদের একটি ব্যাংকের এমডি, সে পদ হারাতে চাচ্ছিল না। বয়স হয়েছে, তারপরও পদ হারাতে চাচ্ছিল না। বসে বসে সেই ব্যক্তিই এই ষড়যন্ত্র করেছিল। তখন বিশ্বব্যাংক বলল দুর্নীতি হয়েছে, ঠিক তখনই আমি চ্যালেঞ্জ দিলাম, এখানে কোনো দুর্নীতি হয়নি, তোমরা প্রমাণ করো। বিশ্বব্যাংক পরে কিন্তু প্রমাণ করতে পারে নাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দুর্নীতির অভিযোগে কানাডার আদালতে মামলা হয়েছিল। সেই আদালতে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছিল, পদ্মা সেতু নির্মাণে কোনো দুর্নীতি হয় নাই। আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম, এই সেতু করব নিজের টাকায়। এই ঘোষণা দিয়ে বেশি লোকের সমর্থনই পাইনি। তখন জেদ ধরে বসেছিলাম, নিজের টাকা ছাড়া পদ্মা সেতু করব না। আল্লাহর রহমতে নিজের টাকায় আজ পদ্মা সেতু করেছি। পদ্মা সেতুর সুফলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ খুব অল্পসময়ে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করতে পারে। নৌকা মার্কা জয়যুক্ত হয়েছে বলেই এই সম্ভব হয়েছে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, টানা ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় বাংলাদেশের ধারাবাহিক একটা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই এই উন্নয়ন হয়েছে। আওয়ামী লীগের উন্নয়ন প্রতিটি ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে ও জেলা পর্যায়ে এমনকি তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা, মানুষের যা যা প্রয়োজন। এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট চান শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা জনসভার সবাইকে হাত তুলে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকায় ভোট দেওয়ার ওয়াদা করতে বললে সবাই হাত তুলে নৌকায় ভোট দেওয়ার ওয়াদা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা সকাল সকাল ভোটকেন্দ্রে গিয়ে সবাই নৌকায় ভোট দেবেন। কারণ, এই নির্বাচন নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমাদের দেশকে নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমরা সেটি হতে দেব না।
এর আগে প্রধানমন্ত্রীকে একনজর দেখতে মাদারীপুরের কালকিনিতে জনসভায় হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে। এই উপস্থিতির বড় একটি অংশ নারী। টানা ১৫ বছর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় নারীদের সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে চাকরির সুযোগের পাশাপাশি সংসদেও কথা বলার সুযোগ করে দেওয়ায় আনন্দে আত্মহারা নারী নেত্রীরা। স্লোগান দিয়ে দলে দলে মাঠে যোগ দেন নেতাকর্মীরাও। সবার মুখেই উন্নয়নের সুর। আওয়ামী লীগ সভাপতিকে কাছে পেয়ে উৎফুল্ল সবাই। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন ছোটবোন শেখ রেহানাও।
জনসভাকে ঘিরে কড়া নিরাপত্তায় তৎপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্য।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল কালাম আজাদ। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ও মাদারীপুর-১ আসনের নৌকার প্রার্থী নূর-ই আলম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের নৌকার প্রার্থী শাজাহান খান, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের নৌকার প্রার্থী আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং মাদারীপুর-৩ আসনের নৌকার প্রার্থী ড. আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ।