সংসদ-সদস্যের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক

Published: 19 January 2024

বিশেষ সংবাদদাতা :


দেশে ৬৪৮ সংসদ-সদস্য একই সঙ্গে বিদ্যমান-এ নিয়ে তুমুল বিতর্ক চলছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদের ২৯৯ এবং একাদশ সংসদে সংরক্ষিত আসনসহ ৩৪৯ জনসহ মোট ৬৪৮ সংসদ-সদস্য এখনো বহাল।

সরকারের পক্ষে বলা হচ্ছে, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণেই এটা হচ্ছে। এতে কোনো সমস্যা নেই। উদ্দেশ্যমূলকভাবে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য এ ধরনের কথা বলা হচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপিসহ বিরোধীরা বলছে, এটি সাংবিধানিকভাবে অবৈধ। ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত এ অরাজকতা থাকবে।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ-সদস্যদের শপথ নিয়ে সংবিধানে যে বাধ্যবাধকতা আছে, তা সম্পূর্ণভাবে অনুসরণ করা হয়নি।

রাজনৈতিক কারণে ভুল ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে: আইনমন্ত্রী

যারা বলছেন বর্তমানে সংসদ-সদস্য সংখ্যা ৬৪৮, তারা সংবিধানকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করছেন না বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি সংবিধানের ১২৩, ১৪৮ ও ৫৬ অনুচ্ছেদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিংবা রাজনৈতিক কারণে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার জন্য তারা এমন বক্তব্য দিচ্ছেন।

আর যদি সেটা না হয়, তাহলে তাদের সংবিধানের এসব অনুচ্ছেদ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান নেই। তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। নবনির্বাচিত সংসদ-সদস্যদের শপথ গ্রহণের পর জাতীয় সংসদের সদস্যসংখ্যা ৬৪৮ বলে কেউ কেউ ব্যাখ্যা দিচ্ছেন-সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে এসব কথা বলেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে যারা মন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন, তারা সংসদ-সদস্য হিসাবে কোনো কাজ করছেন না বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

আইনমন্ত্রী বলেন, ৩০ জানুয়ারি সংসদ অধিবেশনের মাধ্যমে নতুন সংসদ-সদস্যরা কার্যভার গ্রহণ করবেন। নতুন সংসদের অধিবেশন বসার পর বর্তমান সংসদ সদস্যদের মেয়াদ শেষ হবে। ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত একাদশ জাতীয় সংসদের মেয়াদ আছে। একাদশ সংসদের নির্বাচিত সংসদ-সদস্যরা ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত বেতনভাতাসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাবেন। দ্বাদশ সংসদের নির্বাচিত সংসদ-সদস্যদের হিসাব শুরু হবে ৩০ জানুয়ারি থেকে।

মন্ত্রী বলেন, দেশে একসঙ্গে ৬৪৮ জন সংসদ-সদস্য আছেন বলে যে বিতর্ক উঠেছে, তা ঠিক নয়। মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পর মন্ত্রীর কার্যক্রম চালাতে কোনো অসুবিধা নেই। কোনো মন্ত্রী সংসদ-সদস্য হিসাবে কোনো কাজ করছেন না। সংসদ-সদস্যের কার্যভার গ্রহণ করার পর মন্ত্রীরা সংসদ-সদস্যের কাজগুলো করবেন। রাজনৈতিক কারণে সারা দেশে এ নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

আনিসুল হক বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিতরা সংসদ-সদস্য হিসাবে শপথ নিলেও সংসদে তারা কার্যভার গ্রহণ করার পর থেকে সংসদ-সদস্য হিসাবে বিবেচিত হবেন। ৩০ জানুয়ারি সংসদ অধিবেশনের মাধ্যমে নতুন সংসদ-সদস্যরা কার্যভার গ্রহণ করবেন।

আইনমন্ত্রী বলেন, সংবিধানকে ঠিকভাবে ইন্টারপ্রেট না করে দেশে একসঙ্গে ৬৪৮ জন সংসদ-সদস্য রয়েছেন বলে বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক কারণে সারা দেশে একটি বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে এ বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ-সদস্যরা কীভাবে মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্বে বসলেন-এমন এক প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পর মন্ত্রীর কার্যক্রম চালাতে কোনো অসুবিধা নেই। কোনো মন্ত্রী সংসদ-সদস্য হিসাবে কোনো কাজ করছেন না। সংসদ-সদস্যের কার্যভার গ্রহণ করার পরই মন্ত্রীরা সংসদ-সদস্যের কাজগুলো করবেন।

অনুসরণ হয়নি সংবিধানের বাধ্যবাধকতা: শাহদীন মালিক

সংবিধান বিশেষজ্ঞ, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শাহদীন মালিক বলেছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ-সদস্যদের শপথ নিয়ে সংবিধানে যে বাধ্যবাধকতা আছে, তা সম্পূর্ণভাবে অনুসরণ করা হয়নি। তিনি বলেন, সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, মেয়াদ পূর্তির পর নতুন নির্বাচিতরা কার্যভার গ্রহণ করবেন। এখানে শপথ নিয়ে তো নির্বাচিতরা বসে থাকবেন না। কার্যভার গ্রহণ মানে শপথ নিবে। একাদশ সংসদের মেয়াদ পূর্তি হবে ২৯ জানুয়ারি। অতএব এখানে দুটি সংসদের সংসদ-সদস্যরা বিদ্যমান আছেন। বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে দেওয়া এক প্রতিক্রয়ায় এ কথা বলেন এই সংবিধান বিশেষজ্ঞ।

শাহদীন মালিক বলেন, সংবিধানের ১২৩-এর (খ) অনুচ্ছেদে বলা আছে, পাঁচ বছরের আগে সংসদ ভেঙে দিলে ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। আর সংসদ ভেঙে না দিলে, সংসদ যদি পূর্ণ মেয়াদ হয়, তাহলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। তারপর স্পষ্ট করে বলা আছে, তবে শর্ত থাকে যে, নতুন সংসদের সংসদ-সদস্যরা বর্তমান সংসদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর কার্যভার গ্রহণ করবেন। আমি মনে করি, এখানে সংবিধানের যে বাধ্যবাধকতা আছে, তা সম্পূর্ণভাবে অনুসরণ করা হয়নি।