ইরানি প্রেসিডেন্টের হুঁশিয়ারি
পোস্ট ডেস্ক :
গাজার খান ইউনুস শহরের পশ্চিম, দক্ষিণ এবং পূর্বদিকে ইসরাইলি সেনাদের বিরুদ্ধে তীব্র যুদ্ধ হচ্ছে যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাসের। ওই শহরে ইসরাইলের হামলা থেকে রক্ষার জন্য নিজেরাই প্রতিরোধ দেয়াল গড়ে তুলেছেন হামাস সদস্যরা। যুদ্ধ পর্যবেক্ষকরা বলছেন, তিনটি ফ্রন্টে ইসরাইলি সেনাদের মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে হামাস। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইন্সটিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার এবং ক্রিটিক্যাল থ্রেটস প্রজেক্ট রিপোর্ট করছে যে, গাজার উপত্যকার উত্তর দিয়ে ফিলিস্তিনি এই যোদ্ধাগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আকাশপথে বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। ওদিকে খান ইউনুসে নাসের হাসপাতালের চত্বরে স্টাফরা কবর খুঁড়ছেন। কারণ, ওই হাসপাতালে কেউ প্রবেশ করতে বা বের হতে পারছেন না। সেখানে হামলায় বিপুল পরিমাণ মানুষ নিহত হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। খান ইউনুসে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘ পরিচালিত একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ইসরাইল বোমা হামলা করেছে। তাতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৯ জন।
এর নিন্দা জানিয়েছে বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক এজেন্সি। ফিলিস্তিনের রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি রিপোর্টে বলছে, খান ইউনুসে ইসরাইলের অব্যাহত হামলার অংশ হিসেবে আল আমাল হাসপাতালের চারপাশে পুরোপুরি কারফিউ দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। ওদিকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) যে মামলা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, সে বিষয়ে শুক্রবার সিদ্ধান্ত দেবে ওই আদালত। ৭ই অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইলের হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ২৫ হাজার ৭০০।
ওদিকে ইসরাইলের ‘লাইফলাইন’ বা জীবন ধারণের সব সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রইছি। তিনি বলেছেন, গাজা যুদ্ধ দেখিয়ে দিয়েছে জাতিসংঘ ও বিশ্বের অন্য যেসব সংগঠন আছে তারা কার্যকারিতা হারিয়েছে। নতুন একটি সুস্থ বিশ্ব ব্যবস্থার জন্য মুসলিম দেশগুলো এবং অন্য দেশগুলোর প্রতি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তার দাবি ইসরাইলকে রাজনৈতিকভাবে এবং অর্থনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হবে। তাদের লাইফলাইন কেটে দিতে হবে। এটা হবে নিষ্পেষক এবং খুনিদের থামানোর কার্যকর পথ। গাজায় ইসরাইল হবে একটি পরাজিত দল।
ওদিকে সীমান্ত বেড়া থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে থাকা গাজার শত শত ভবনকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরাইল। সেখানে তারা বাফার জোন বানাবে। হিব্রু ইউনিভার্সিটির এক গবেষণাকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। স্যাটেলাইটে পাওয়া ছবি বিশ্লেষণ করে এই গবেষণা করা হয়েছে। তাতে দেখা যায়, ৭ই অক্টোবরের পর থেকে গাজার ভিতরে সীমান্ত বেড়ার এক কিলোমিটারের মধ্যে থাকা ২৮২৪টি ভবনের মধ্যে শতকরা ৪০ ভাগই ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। একজন সেনা সদস্য বলেছেন, সবকিছু ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগই কৃষিবিষয়ক। এখন এটা সামরিক এলাকা। পুরোপুরি একটি ‘নো ম্যান্স ল্যান্ড’। দক্ষিণ গাজায় খান ইউনুসের কাছে এক কিলোমিটারের মধ্যে থাকা ৬৭ ভাগ ভবন ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইলিরা। এতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইসরাইলের সম্পর্কে আরও টান ধরতে পারে। কারণ, বার বার যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে সতর্ক করেছে। তারা বলেছে, গাজার ভিতরে যেকোনো ভূখণ্ডগত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তারা।
এ পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। গাজায় ইসরাইলি যুদ্ধ এবং দখলিকৃত পশ্চিম তীর নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি একটি রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে পাওয়ার জন্য এতে একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন ক্যামেরন। তিনি এক্সে লিখেছেন, যুদ্ধবিরতির জন্য, জিম্মিদের মুক্তির জন্য এবং একটি টেকসই যুদ্ধবিরতির জন্য- যাতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র সহ দীর্ঘমেয়াদি সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়, এমন একটি পরিকল্পনা নিয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি।
স্থানীয় মিডিয়ায় বলা হয়েছে, দখলিকৃত পশ্চিমতীরের জেনিন শহরে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাগোষ্ঠী এবং ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মধ্যে বুধবার দিবাগত রাতভর সংঘর্ষ হয়েছে। শহরের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। এ সময় তারা এক ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে। ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ওয়াফা বলছে, নিহত ফিলিস্তিনের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। ওই এলাকায় সংঘর্ষের সময় ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা বিস্ফোরণ দ্রব্য এবং বন্দুকের গুলি দিয়ে ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে।
গাজাজুড়ে দ্রুত, নিরাপদ, বিস্তৃত ও টেকসই মানবাধিকার সুবিধা নিশ্চিত করার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরাঁ। তিনি বলেছেন, গাজা দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। সেখানে দ্রুত সাহায্য পাঠানোর আহ্বান জানান তিনি।