গাজায় ৯ দেশের সহায়তা স্থগিত, জাতিসংঘের নিন্দা

Published: 28 January 2024

পোস্ট ডেস্ক :


গাজার যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের অর্থ সহায়তা স্থগিত করে দিয়েছে ৯টি দেশ। এর নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘের এজেন্সি ইউএনআরডব্লিউএ। দেশগুলোর এমন সিদ্ধান্তকে তারা হতাশাজনক বলে অভিহিত করেছে। ইউএনআরডব্লিউএ’র প্রধান ফিলিপ্পে লাজারিনি বলেছেন, গাজায় প্রাথমিক মানবিক সহায়তা দানকারী এজেন্সি ইউএনআরডব্লিউএ। কমপক্ষে ২০ লাখ মানুষের বেঁচে থাকার জন্য সহায়তার ওপর নির্ভরশীল। গত ৭ই অক্টোবর ইসরাইলে রকেট হামলা চালায় হামাস। কিন্তু ইসরাইলের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয় এই হামলায় হামাসের সঙ্গে ইউএনআরডব্লিউএ’র কিছু স্টাফও জড়িত। ফলে বৃটেনসহ ৯টি দেশ গাজায় শরণার্থীদের জন্য যে অর্থ সহায়তা দিতো তা স্থগিত করেছে। এই সহায়তা যেতো ইউএনআরডব্লিউএ’র মাধ্যমে। যাদের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ এসেছে তাদেরকে পরে বরখাস্ত করেছে ইউএনআরডব্লিউএ।

কিন্তু সহায়তা বন্ধ হয়ে আছে। সহায়তা বন্ধ করা দেশগুলো হলো অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ফিনল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্র।
১৯৪৯ সালে সৃষ্টি করা হয় ইউনাইটেড রিলিফ অ্যান্ড ওয়ার্কস এজেন্সি (সংক্ষেপে যা ইউএনআরডব্লিউএ)। গাজায় কর্মকাণ্ড পরিচালনাকারী এটিই জাতিসংঘের সবচেয়ে বড় এজেন্সি। তারা গাজা, পশ্চিমতীর, জর্ডান, লেবানন এবং সিরিয়ায় ফিলিস্তিনিদেরকে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও অন্য মানবিক সহায়তা দিয়ে থাকে। গাজার ভিতরে আছে তাদের ১৩ হাজার কর্মী। হামাসের রকেট হামলার জবাবে ইসরাইল ভয়াবহ যুদ্ধ শুরু করলে ইউএনআরডব্লিউএ গাজাজুড়ে তাদের বিভিন্ন স্থাপনায় আশ্রয় দেয় বাস্তুচ্যুত হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে। ইউএনআরডব্লিউএ’র কিছু কর্মী হামাসের হামলার সঙ্গে যুক্ত, এই অভিযোগ করে ইসরাইল। তাদের অভিযোগ জাতিসংঘের বিভিন্ন শাখা সেখানে পক্ষপাতিত্ব করছে।

এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে শনিবার লাজারিনি বলেন, অল্প কিছু স্টাফের বিরুদ্ধে অভিযোগের জবাবে এজেন্সির তহবিল সরবরাহ স্থগিত করা হতাশাজনক। অভিযুক্ত স্টাফদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট বাতিল করা হয়েছে। একই সঙ্গে নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত দাবি করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে একটি এজেন্সির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়া দায়িত্বহীনের কাজ। অল্প কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগে এমনটা করা হয়েছে। বিশেষ করে তা করা হয়েছে যুদ্ধের সময়, যখন বাস্তুচ্যুত এবং রাজনৈতিক সঙ্কটে অঞ্চলটি ভুগছে। তিনি আরও বলেন, ইসরাইল সহ যেসব দেশ তহবিল দেয় তাদের কাছে প্রতি বছর স্টাফদের তালিকা সরবরাহ করে থাকে ইউএনআরডব্লিউএ। কোনো নির্দিষ্ট সদস্যের বিষয়ে কখনোই কোনো অভিযোগ পায়নি এজেন্সি। লাজারিনি বলেন, জাতিসংঘের অফিস অব ইন্টারনাল ওভারসাইট সার্ভিসেসের তদন্তে এ অভিযোগের সত্যতা বেরিয়ে আসবে।

শুক্রবার বিবিসিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর একজন উপদেষ্টা মার্ক রেগেভ বলেছেন, ৭ই অক্টোবর হামাসের হামলায় এমন কিছু ব্যক্তি জড়িত, যারা ইউএনআরডব্লিউএ’র বেতন পেয়ে থাকে। ইউএনআরডব্লিউএ পরিচালিত স্কুলগুলোতে যেসব শিক্ষক কাজ করেন, হামাসের হামলার পর তাদেরকে প্রকাশ্যে দেখা গেছে তা সেলিব্রেট করতে। হামাসের হামলায় ইসরাইলে নিহত হয়েছেন প্রায় ১৩০০ মানুষ। তার বেশির ভাগই সাধারণ মানুষ। হামাস জিম্মি করে ২৫০ জনকে। রেগেভ বলেন, ইসরাইলি একজন জিম্মি মুক্ত হয়ে বলেছেন, তাকে আটকে রাখা হয়েছিল এমন একজনের বাড়িতে, যিনি ইউএনআরডব্লিউএ’র জন্য কাজ করেন। এসব ব্যক্তির ইউনিয়ন আছে। তা নিয়ন্ত্রণ করে হামাস। আমি মনে করি হামাস এবং ইউএনআরডব্লিউএর মধ্যে যোগসূত্র থাকার বিষয়টি জাতিসংঘের তদন্তের জন্য এটাই উত্তম সময়।