যেভাবে নারী ক্রিকেটারকে বিয়ে করলেন চোর

Published: 1 February 2024

বিশেষ সংবাদদাতা :


বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার স্বর্ণা আক্তারের বাসায় চুরির ঘটনায় জড়িত মো. আল-আমিন দেওয়ান ওরফে আযান (২৯)কে দিনাজপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। এ সময় চুরি যাওয়া আইফোনসহ অন্যান্য মালামাল উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার আল আমিন নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা পরিচয়ে একজন নারী ক্রিকেটারের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয়ের ১৭ দিনের মাথায় বিয়ে করে। বিয়ের পর তার বাসায় চুরি করে পালিয়ে যায়। গতকাল বিকালে কাওরান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান বাহিনীটির লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ২৯শে জানুয়ারি তেজকুনীপাড়া খেলাঘর মাঠে বাংলাদেশ জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার স্বর্ণা আক্তার তার সতীর্থ খেলোয়াড়দের সঙ্গে অনুশীলনকালে তার ব্যবহৃত দুটি আইফোন চুরি হয়। একইদিনে তার বাসা থেকে সাড়ে ৩ হাজার ডলার, ব্যাংকের চেক বই ও ভিসা কার্ডসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরির ঘটনাও ঘটে। এ ঘটনায় ক্রিকেটার স্বর্ণা আক্তার শেরেবাংলা নগর থানায় চুরির মামলা করেন। ঘটনাটি ব্যাপক আলোচিত হয়। চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র‌্যাব।

এরই ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রাতে র‌্যাব-১৩ ও র‌্যাব-২ এর একটি আভিযানিক দল দিনাজপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে চুরির ঘটনার সঙ্গে জড়িত এবং একমাত্র আসামি মো. আল-আমিন দেওয়ান ওরফে আযানকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ৪টি আইফোনসহ ৫টি মোবাইল ফোন, প্রাইম ব্যাংকের একটি চেক বইয়ের পাতা, প্রাইম ব্যাংকের একটি মাস্টার কার্ড, বেশকিছু বৈদেশিক মুদ্রা, ৩টি হাতঘড়ি, ৪টি চেইন, একটি নোজপিন, একটি ব্রেসলেট, দুটি আংটি ও একটি হ্যান্ড ব্যাগ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আল আমিন র‌্যাবকে জানিয়েছে, সে প্রতারণার টার্গেট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন আইডি খুলে নিজেকে বড় ব্যবসায়ী পরিচয় দিতো এবং সুন্দরী নারীদের আকৃষ্ট করতে নিয়মিত বিভিন্ন স্টাইলে ছবি পোস্ট করতো। এ ছাড়াও নিজেকে প্রদর্শনের জন্য টিকটক ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করতো। এভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুন্দরী নারীদের সঙ্গে কৌশলে সম্পর্ক গড়ে তুলতো। পরে গ্রেপ্তার আল আমিন ওই নারীদের বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের আস্থা অর্জন করে নিয়মিত তাদের সঙ্গে দেখা করতো। অনেক ক্ষেত্রে কোনো নারীকে বিয়ে করে বা বিয়ে না করে সুবিধাজনক সময়ে তাদের নগদ অর্থসহ মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে আত্মগোপনে চলে যেত। এ সময় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে তার সংশ্লিষ্ট ফেসবুক আইডি ডিলিট করে দিতো। পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কিছুদিন পরে আবার সে কারও সঙ্গে প্রতারণার জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আরেকটি আইডি খুলে একই কাজ করতো। মঈন বলেন, একই টার্গেট নিয়ে গ্রেপ্তার আল আমিন নিজেকে গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে এবং বর্তমানে সে ছুটিতে আছে তাই কাপড়ের ব্যবসা করছে বলে একজন নারী ক্রিকেটারের সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচিত হয়। পরে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়। একপর্যায়ে পরিচয়ের ১৭ দিনের মাথায় গত ১২ই জানুয়ারি গ্রেপ্তার আল আমিন ওই নারী ক্রিকেটারকে বিয়ে করে। ক্রিকেটার স্বর্ণা আক্তারের সঙ্গে ভুক্তভোগী নারী ক্রিকেটারসহ ৪ জন প্রায় ৩ বছর ধরে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারে একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করে আসছিলেন। কৌশলে ওই নারী ক্রিকেটারকে বিয়ের সূত্র ধরে আল আমিন ওই ফ্ল্যাটে নতুন স্ত্রীকে নিয়ে একটি আলাদা রুমে বসবাস করতে থাকে। এ সময় প্রতারণার জন্য সে তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলে এবং ব্যবসায়িকসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কৌশলে বিভিন্ন সময় তাদের কাছ থেকে পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে প্রায় দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। গত ২৯শে জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে স্বর্ণা ও তার ৩ জন রুমমেটসহ সতীর্থ খেলোয়াড়দের নিয়ে রাজধানীর তেজকুনীপাড়া খেলাঘর মাঠে অনুশীলনে যান। এ সময় আল-আমিন বাসায় অবস্থান করছিল। পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বর্ণার রুমের ওয়ারড্রবের ড্রয়ারের তালা ভেঙে ডলার, ১টি চেক বই, ভিসা কার্ড, তার রুমমেট অন্য নারী ক্রিকেটারের ব্যাগ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা ও তাদের ব্যবহৃত ব্যাগ নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে তেজকুনীপাড়া খেলাঘর মাঠে আসে। এ সময় তাদের অনুশীলনের ভিডিও করার কথা বলে অলরাউন্ডার স্বর্ণা আক্তারের ব্যবহৃত আইফোন দুইটি ব্যাগ থেকে নিয়ে কিছুক্ষণ ছবি তুলে কৌশলে মাঠ থেকে পালিয়ে যায়। স্বর্ণার ব্যবহৃত একটি আইফোন রাজধানীর পুরাতন মালামাল বিক্রির মার্কেটে ১১ হাজার টাকায় বিক্রি করে বাসযোগে দিনাজপুরের উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে প্রথমে রংপুর গিয়ে রাতে হোটেলে অবস্থান করে। পরের দিন রংপুর থেকে দিনাজপুরে হোটেলে অবস্থান করে। অনুশীলন শেষে স্বর্ণা আক্তার আল আমিনকে দেখতে না পেয়ে অন্য নারী ক্রিকেটারের মোবাইল থেকে তার মোবাইল দুটিতে ফোন করলে ফোন দুইটি বন্ধ পান। পরে তারা বাসায় ফিরে ফ্ল্যাটের মূল দরজা লক করা অবস্থায় খেতে পান। এ সময় বাসার দারোয়ানের সহযোগিতায় তালা ভেঙে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে রুমের সমস্ত জিনিসপত্র এলামেলো অবস্থায় দেখতে পান।

 

র‍্যাব জানায়, আল-আমিন ২০১১ সালে রাজধানীর একটি স্কুল থেকে এসএসসি সম্পন্ন করেছে। সে ইতিপূর্বে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে কাপড়ের দোকানে চাকরি করতো। ২০১৬-২০১৭ সাল থেকে নারীদের সঙ্গে প্রতারণাসহ অনৈতিক সম্পর্ক তৈরি করা ও বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা করতে থাকে।