পাকিস্তানে এক কোটির বেশি মানুষ দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে রয়েছে: বিশ্বব্যাংক

Published: 4 April 2024

পোস্ট ডেস্ক :


বিশ্বব্যাংক তার দ্বি-বার্ষিক প্রতিবেদনে পাকিস্তানের একটি ভয়াবহ অর্থনৈতিক চিত্র তুলে ধরেছে। সতর্ক করে দিয়েছে যে নগদ সংকটে থাকা দেশটিতে আরও এক কোটি বা ১০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে রয়েছে। চলতি অর্থবছরে পাকিস্তানে মুদ্রাস্ফীতির হার ২৬ শতাংশে পৌঁছেছে। তাতেই সিঁদুরে মেঘ দেখছে বিশ্ব ব্যাংক। পূরণ হচ্ছে না বাজেটের লক্ষ্যমাত্রাও।

এদিকে বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি খুবই মন্থর। ১.৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি দেখা গিয়েছে সে দেশে। বিশ্বব্যাংকের দ্বি-বার্ষিক পাকিস্তান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক রিপোর্টে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে দেশটি প্রায় সমস্ত বড় সামষ্টিক অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। টানা তিন বছর বড় লোকসানের মুখে পড়তে পারে ইসলামাবাদ। সে ক্ষেত্রে আবার আইএমএফের থেকে অর্থ সাহায্য পাওয়ার ক্ষেত্রে তৈরি হতে পারে নতুন চাপ। কারণ আইএমএফের অর্থ পাওয়ার ক্ষেত্রে যে শর্ত মেনে চলা প্রয়োজন তা পাকিস্তান নাও পূরণ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞ মহলের একটা বড় অংশ।

প্রতিবেদনের প্রধান লেখক সাইয়েদ মুর্তজা মুজাফফরি বলেন, সরকারের তরফে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দারিদ্র্য বিমোচনের প্রচেষ্টা অপর্যাপ্ত।

৯.৮ কোটি পাকিস্তানি ইতিমধ্যেই দারিদ্র্যসীমার নিচে রয়েছেন। দারিদ্র্যের হার প্রায় ৪০ শতাংশ। তাতেই বাড়ছে উদ্বেগ। বর্তমানে যে খাতে দেশ বইছে তাতে এই হার শিগগিরই আরও বেশ খানিকটা বেড়ে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, দরিদ্র এবং দুর্বলরা সম্ভবত কৃষি উৎপাদনের ফলে লাভবান হতে পারে। তবে এই লাভগুলো ক্রমাগত উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং অন্যান্য খাতে সীমিত মজুরি বৃদ্ধির দ্বারা ধাক্কা খেয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে দিনমজুরদের মজুরি বেড়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। কিন্তু মুদ্রাস্ফীতি ৩০ শতাংশের ওপরে। ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের।

খাইবার পাখতুনখোয়া, সিন্ধু এবং বেলুচিস্তান জুড়ে ৪৩টি গ্রামীণ এলাকা যেগুলো ২০২২ সালের বন্যা দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল, সেখানে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা দেখা দিয়েছে।

বিশ্বব্যাংক বলেছে, কিছুটা পুনরুদ্ধার সত্ত্বেও কম বৈদেশিক রিজার্ভ এবং উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে পাকিস্তানের অর্থনীতি চাপের মধ্যে রয়েছে। নীতির অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্তব্ধ হয়ে গেছে, যা কঠোর রাজস্ব ও মুদ্রানীতি এবং আমদানি নিয়ন্ত্রণ প্রতিফলিত করে।

এদিকে বছরের শুরুতে বিনিময় হারের অনমনীয়তার কারণে চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে অফিসিয়াল রেমিট্যান্স বছরের তুলনায় ৬.৮ শতাংশ কমেছে। ওয়াশিংটন-ভিত্তিক ঋণদাতা বলেছে যে উচ্চতর সামাজিক দুর্বলতা এবং মধ্যমেয়াদে সীমিত দারিদ্র্য হ্রাসের সঙ্গে প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনার নিচে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর্থিক খাতের ঝুঁকি, নীতির অনিশ্চয়তা এবং শক্তিশালী বহিরাগত হেডওয়াইন্ডগুলো দৃষ্টিভঙ্গির জন্য উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।