সাংবাদিক আফসার উদ্দিনকে চোখের জলে শেষ বিদায় জানালেন ব্রিটেনের গনমাধ্যমকর্মীরা

Published: 13 April 2024

ইব্রাহিম খলিল : 

ব্রিটেনের বাংলাভাষী গণমাধ্যমের অত্যন্ত পরিচিত ও প্রিয়মুখ, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, চ্যানেল এস-এর সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার সৈয়দ আফসার উদ্দিনকে চোখের জলে শেষ বিদায় জানালেন ব্রিটেনের গনমাধ্যমকর্মীরা।

শনিবার ইস্ট লন্ডন মসজিদে তার জানাজায় শরিক হন কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষ। এ সময় অনেকে আবেগ আপ্লুত হয়ে যান। এর আগে সকাল ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মরহুমের মরদেহ শেষবারের মতো দেখার জন্য ব্রিকলেন জামে মসজিদের মেইন হলে রাখা হলে সেখানে উপস্থিত হন গনমাধ্যম কর্মী, স্বজন ও শুভাকাঙ্খীরা। পরে ইস্ট লন্ডন মসজিদে জানাজা শেষে মরদেহ হ্যানল্টের গার্ডেন অব পিসে সমাহিত করা হয়।

সৈয়দ আফসার উদ্দিন এমবিই চ্যানেল এস‘র সিনিয়র নিউজ প্রেজেন্টার। কাজ করেছেন বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস, ভয়েস অব আমেরিকা, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অসংখ্য বিখ্যাত গনমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে। সাংবাদিকতা ছাড়াও তিনি লন্ডনে একজন সফল ভাষা শিক্ষক। আমাদের প্রিয় সহকর্মী। অত্যন্ত বিনয়ী, গুনি এবং ধর্মপ্রান মানুষ ছিলেন আফসার উদ্দিন । ছিলেন চ্যানেল এস‘র সবচেয়ে স্টাইলিস্ট নিউজ প্রেজেন্টার। তার সংবাদ উপস্থাপনায় ছিলো আলাদা এক বৈচিত্র।

চ্যানেল এস-এ আমার কাজের বয়স প্রায় ১০ বছর হলো। সপ্তাহের প্রতি শুক্রবারে থাকতো আমার নিউজ রিপোর্টিং ডে। আফসার ভাইয়েরও নিউজ পড়ার ডে হচ্ছে শুক্রবার। এই সুবাদে তার সাথে দেখা হতো গল্প হতো। তিনি সব সময় আমার রিপোর্টিংয়ের প্রশংসা করতেন। আরো ভালো নিউজ স্টোরি করতে পরামর্শ দিতেন।

২০১৬ সালে একদিন আফসার ভাই বললেন, তার কর্মক্ষেত্র ওকল্যান্ড স্কুলে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বৈশাখী অনুষ্ঠান হবে। চ্যানেল এস থেকে আমি যেনো যাই এবং সংবাদটি কাভার করি। যথারিতি আমরা তার দাওয়াতে স্কুলে যাই। সেখানে গিয়ে ওকল্যান্ড স্কুলের বৈশাখী আয়োজন দেখে আমরা বিমোহিত হই। অনুষ্ঠান দেখে যেনো মনে হয়েছে, আমরা বাংলাদেশের কোথাও আসছি বৈশাখী অনুষ্ঠান কাভার করতে। বাংলাদেশী নানা জাতের পিঠা, স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থীদের পড়নে বৈশাখী পোষাক। সব মিলিয়ে মেইনস্ট্রিম স্কুলটি যেনো পরিনত হয়েছিলো বৈশাখী উৎসব মঞ্চে। এমনকি স্কুলের হেড টিচার প্রেট্রিস ক্যানাভান ওবিইকেও তিনি বাংলাদেশের লাল-সবুজের পোষাক পড়তে উৎসাহ যোগান। আফসার ভাইও সবুজ পাঞ্জাবী, লাল স্কার্ফ পড়ে আসেন। তাদের সাথে ছবিটি তুলে রাখি। পড়ে একদিন আমাদের সাগর ভাই, (শহিদুল ইসলাম সাগর),চ্যানেল এস‘র আরেক নিউজ প্রেজেন্টার আমার ফেইসবুক ম্যাসেঞ্জারে ছবিটি পোষ্ট করে বলেন, হেড টিচার, আফসার ভাই এবং তোমার ছবিটি আমাদের ল্যাঙ্গুয়েজ ওয়ালে শোভা পাচ্ছে। ছবিটির ক্যাপশনে শিক্ষার্থীদের জন্য বাঙালীদের বৈশাখী উৎসব সম্পর্কে কিছু তথ্য দেওয়া রয়েছে।

লাল সবুজ হৃদয়ের এই মানুষ, আমাদের প্রিয় আফসার ভাই রাণীর দেওয়া খেতাব এমবিই পেয়েছেন। আমরা গর্বিত হই। চ্যানেল এস পরিবারও তার অর্জনে গর্বিত।

আফসার ভাই, মেইনস্ট্রিম স্কুল টাওয়ার হ্যামলেটসের ওকল্যান্ড স্কুলের দীর্ঘকালীন ল্যাঙ্গুয়েজ টিচার তথা বাংলা শিক্ষক। কমিউনিটির বাংলা শিক্ষায় অবদানের স্বীকৃতি এই এমবিই। এই জয় শুধু আফসার ভাইয়ের নয়। বাংলা ভাষারও।

আফসার ভাই ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ দিন অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন। আমরা দোয়া করি আল্লাহ যেনো তাঁকে দ্রুত জান্নাতের সুউচ্চ মর্যাদা দান করেন।

উল্লেখ্য, সৈয়দ আফসার উদ্দিন ১২ এপ্রিল, শুক্রবার রাত ২টা ২০ মিনিটে লন্ডনের একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন । মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৫৯ বছর। স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে সহ বহু আত্মীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি।
সাংবাদিক সৈয়দ আফসার উদ্দিন কয়েক বছর থেকে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলেও স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলেন।

সৈয়দ আফসার উদ্দিন এমবিই’র মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান, চ্যানেল এস’র চেয়ারম্যান আহমেদ উস সামাদ চৌধুরী জেপি, চ্যানেল এস’র ফাউন্ডার মাহি ফেরদৌস জলিল, চীফ এক্সিকিউটিভ তাজ চৌধুরী, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ জুবায়ের ও সাধারণ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ এক শোকবার্তায় মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সহানুভূতি ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। নেতৃবৃন্দ মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনার পাশাপাশি তাঁর স্বজনদের ধৈর্য্য ধারণের শক্তি দানের জন্য মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে দোয়া করেন।