রাইসির দাফন হবে মাশহাদে
পোস্ট ডেস্ক :
১৫ বছর বয়সে যে মাশহাদ ছেড়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি সেই মাটিতেই চিরনিদ্রায় শায়িত হবেন তিনি। তার আগে বুধবার ইরানের রাজধানী তেহরানে রাষ্ট্রীয় আয়োজনে তাকে চির বিদায় জানাবে ইসলামিক প্রজাতন্ত্র ইরান। তেহরানের দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্রে মানবজমিন এ তথ্য পেয়েছে। বর্তমানে রাইসির মরদেহ তাবরিজ শহরে রয়েছে। কাল তাবরিজে তাঁর প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে, যে শহরে তিনি রোববারই ভ্রমণ করেছিলেন। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ডস কর্পসের সাথে সংযুক্ত দেশটির আধাসরকারি বার্তাসংস্থা তাসনিম নিউজ তাবরিজ শহরে জানাজা করার প্রস্তুতির খবর আগেই প্রকাশ করেছিলো।
ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে তাসনিম নিউজ জানায়, ইরানের প্রেসিডেন্টের সাথে নিহত অন্যান্যদের জানাজাও সেখানে অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে মরদেহগুলো তাবরিজের একটি ফরেনসিক বিভাগে নিয়ে যাওয়া হবে। হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানের মৃত্যুতে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিও ইরানে পাঁচ দিনের শোক ঘোষণা করেছেন। ১৯৬০ সালে মাশহাদে জন্ম রাইসির। তার বাবা ছিলেন একজন ধর্মীয় নেতা।
পাঁচ বছর বয়সে রাইসির বাবা মারা যান। এরপর ১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের চার বছর আগে ১৫ বছর বয়সি রাইসি তার নিজের শহর মাশহাদ ছেড়ে কুমে যান।
১৯৮১ সালে রাইসি তেহরানের নিকটবর্তী ইরানের শহর কারাজের বিচার বিভাগে যোগ দেন। ১০ বছরেরও কম সময়ে তিনি বিচার বিভাগে উল্লেখযোগ্য পদোন্নতি পান। এরপর কনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে একটি ট্রাইবুন্যালের সদস্য হন যাকে বিরোধীরা ‘ঘাতক কমিটি’ হিসেবে অভিহিত করে। ১৯৮৮ সালে এই কমিটি দুই থেকে চার হাজারের মতো রাজনৈতিক বন্দিকে ফাঁসির আদেশ দেয়। এদের মধ্যে মার্কসবাদী, বামপন্থি রাজনীতিবিদ এবং পিপলস মুজাহিদিন অরগানাইজেশন অব ইরানের (এমইকে) বহু সদস্য ছিলেন। এ সংগঠনকে ইরান ও ইরাক উভয়েই সন্ত্রাসবাদী হিসেবে দেখে। এর পর ১৯৮৯ সালে রাইসি তেহরানের প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ পান। তখন আয়াতুল্লাহ আকবর হাশেমি রাফসানজানি রাইসিকে ‘মধ্যপন্থি’ ব্যক্তি হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। ১৯৯৪ সালে রাইসি জেনারেল ইনস্পেকশন অফিসের প্রধান হন। ৬০ বছর বয়সী ইব্রাহিম রাইসি তার কর্মজীবনের বেশিরভাগ সময় সরকারি কৌঁসুলি হিসেবে কাজ করেছেন। তাকে ২০১৯ সালে বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এর দুবছর আগে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি হাসান রুহানির কাছে বড় ব্যবধানে পরাজিত হন।
১৯৮০ এর দশকে রাজনৈতিক বন্দিদের যেভাবে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে তাতে রাইসির ভূমিকা নিয়ে বহু ইরানি এবং মানবাধিকার কর্মী উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ইরান কখনো এই গণ মৃত্যুদণ্ডের কথা স্বীকার করেনি। রাইসির ভূমিকা নিয়ে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে সে বিষয়ে তিনি কখনো কিছু বলেননি। ২০১৪ সালে ইরানের মহা কৌঁসুলি (প্রসিকিউটর জেনারেল) পদের দায়িত্ব পান রাইসি। এর দুই বছর পর আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইরানের অন্যতম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সম্পদশালী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আসতান-ই কুদস্-ই রাজাভি দেখাশোনার সব দায়িত্ব তুলে দেন রাইসির হাতে। এর পর রাইসি ইরানে বিশেষজ্ঞমণ্ডলীর সহ-সভাপতি হন। এই বিশেষজ্ঞমণ্ডলী দেশটির পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচন করে।
রাইসি ২০১৭ সালে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেই সময় তার সিদ্ধান্ত পর্যবেক্ষকদের বিস্মিত করেছিল। ওই নির্বাচনে আরেকজন ধর্মীয় নেতা হাসান রুহানি প্রথম দফার ভোটাভুটিতে ৫৭ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান। রাইসি ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে আসেন। তবে ওই পরাজয় তার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারেনি এবং ২০১৯ সালে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি তাকে দেশটির বিচার বিভাগের ক্ষমতাশালী পদে বসান। এর পরই তিনি অ্যাসেম্বলি অফ এক্সপার্টস বা বিশেষজ্ঞমণ্ডলীর ডেপুটি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে রাইসি কিছু সংস্কার করেছেন, যার ফলে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা কমেছে। এ ছাড়া অবৈধ মাদকসংক্রান্ত অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়েছে কম। তবে ভিন্নমতাবলম্বীদের দমনের জন্য বিচার বিভাগ নিরাপত্তা বিভাগের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কাজ করা অব্যাহত রেখেছেন। এর পর ২০২১ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন এবং ৬২ শতাংশ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন।