জীবনে সফল হতে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া জরুরি নয়: ঋষি সুনাক
পোস্ট ডেস্ক :
সম্প্রতি জীবনদর্শন এবং বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য নিয়ে বহুল ব্যবহৃদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। এ নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা। বাংলাদেশের অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী সুনাকের পক্ষে-বিপক্ষে বাহারী ক্যাপশনে সেই পোস্ট শেয়ার করছেন।
ওই পোস্টে ঋষি সুনাক লিখেছেন, জীবনে সফল হওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া জরুরি নয়।
সাধারণ কোনো মানুষ এ কথা বললে মেনে নেওয়া যায় সহজেই। কিন্তু খোদ যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী কোনো ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মুখে এ কথা কতটা মানানসই তাই নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।
বাংলাদেশ সময় বুধবার রাত নয়টায় ঋষি সুনাক পোস্টটি করেছেন। বৃহস্পতিবার বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত ১১ হাজারের বেশি মানুষ ওই পোস্টটি শেয়ার করেছেন। একই সময়ে পোস্টটিতে কমেন্ট করেছেন আট হাজারের বেশি মানুষ।
মূলত ব্যক্তিগত দর্শন থেকেই ঋষি সুনাক পোস্টটি করেছেন। মন্তব্যকারীদের মধ্যে কেউ কেউ ঋষি সুনাকের এ কথার সমালোচনা করেছেন। আবার কেউ কেউ তাকে প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। একজন লিখেছেন, আমি আপনার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। আরেকজন লিখেছেন, জরুরি ভিত্তিতে আপনি ওষুধ নিন ।
অন্য একজন লিখেছেন, জীবনে সফল হওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির প্রয়োজন নেই এ ধারণাটি বেশ বিভ্রান্তিকর। সফলতা বলতে আমরা কী বুঝি? যদি আমরা আর্থিক সাফল্যের কথা বলি, তবে যুক্তরাজ্যের বাকি জনসংখ্যার তুলনায় কতজন ড্রপআউট শিক্ষার্থী ধনী হতে পেরেছেন?
ঋষি সুনাকের ওই পোস্টে একজন লিখেছেন, অথচ আপনি নিজেই চারটি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আরেকজন লিখেছেন, আপনার এ উপদেশ সবার জন্য প্রযোজ্য নয়, এটি বিভ্রান্তিকর। আরেকজন লিখেছেন, শিক্ষা সর্বদা সফল হওয়ার প্রথম চাবিকাঠি, অন্য যেকোনো কিছু প্রতারণামূলক।
ঋষি সুনাক নিজেও যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ডিগ্রিধারী। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সুনাক ব্রিটেনের চ্যান্সেলর অব এক্সচেকার (অর্থমন্ত্রী) হন। সুনাকের আর একটা পরিচয় হল, তিনি ভারতের বিখ্যাত শিল্পপতি ও ইনফোসিসের প্রতিষ্ঠাতা এন আর নারায়ণমূর্তির জামাতা। নারায়ণমূর্তির কন্যা অক্ষতার সঙ্গে তার আলাপ স্ট্যানফোর্ডেই, পরে তারা দু’জনে বিয়ে করেন।
ধনী পরিবারের মেয়ে অক্ষতাকে বিয়ে করেছেন ঋষি সুনাক। তার এই পারিবারিক ব্যাপারে খোঁচা দিয়ে আরেকজন মন্তব্য করেছেন, সাফল্য আপনার সংজ্ঞার উপর নির্ভর করে। এটি ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হয়। আপনি শিক্ষার মাধ্যমে, ব্যবসা করে, এমনকি কোনও ধনী মহিলাকে বিয়ে করেও সাফল্য পেতে পারেন।
তবে ঋষি সুনাক ওই পোস্টে কারও মন্তব্যেরই উত্তর দেননি।
২০২২ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কনজারভেটিভ পার্টির এই নেতা। তিনি প্রথম ব্রিটিশ এশিয়ান প্রধানমন্ত্রী।
গত ২ মে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে হেরে যায় তার দল। এর দুই সপ্তাহের মাথায় দেশটিতে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন সুনাক। ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট থেকে ২২ মে তিনি ঘোষণা দেন, আগামী ৪ জুলাই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ছয় সপ্তাহ আগে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন সুনাক।
ঋষি সুনাক ২০১৫ সালে প্রথম উত্তর ইংল্যান্ডের ইয়র্কশায়ার কাউন্টির রিচমন্ড এলাকার এমপি হন। রাজনীতিতে দ্রুত উত্থান ঘটে তার। তেরেসা মে’র সরকারে ঋষি সুনাক স্থানীয় সরকার বিভাগে জুনিয়র মন্ত্রী হন। পরে বরিস জনসন ক্ষমতা নেওয়ার পর তাকে পদোন্নতি দিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের চিফ সেক্রেটারি নিয়োগ করেন। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে অর্থমন্ত্রী হন ঋষি সুনাক।