জনসমক্ষে বুশরা বিবি, পাকিস্তানে রাজনীতিতে কীসের ইঙ্গিত?

Published: 30 November 2024

পোস্ট ডেস্ক :


পাকিস্তানের রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের অবতারণা করলেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্ত্রী বুশরা বিবি। ইমরানের ডাকা বিক্ষোভে প্রথমবারের মতো জনসমক্ষে আসলেন দেশটির সাবেক এই ফার্স্টলেডি। দুর্নীতিসহ সরকারের দায়ের করা বিভিন্ন মামলায় বর্তমানে পাকিস্তানের আদিয়ালা কারাগারে বন্দি আছেন ইমরান খান। তার স্ত্রীও কারাগারে আটক ছিলেন। তবে তিনি গত মাসে মুক্তি পান। এরপরই নিজের মুক্তি ও সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভের চূড়ান্ত ডাক দেন কারাবন্দি ইমরান। যার ফলে রাজধানী ইসলামাবাদ সহ গোটা দেশেই আন্দোলনে নামে পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ পার্টির নেতাকর্মীরা। আর এই আন্দোলনে দেশটির রাজনীতির এক চমক হয়ে উঠেছেন বুশরা বিবি। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। এতে বলা হয়, ইমরানের মুক্তির দাবিতে জোরালো আন্দোলনে নামে তার দলের নেতাকর্মীরা। গত সোমবার রাতে এই আন্দোলনে যোগ দিতে ইসলামাবাদের ডি-চকে সমবেত হন ১০ হাজার দলীয় নেতাকর্মী। কিন্তু মঙ্গলবার মধ্যরাতের আগে তাদের হটিয়ে দেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় দুই পক্ষের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন বুশরাও। এবারই প্রথম জনসমক্ষে এসেছেন পাকিস্তানের সাবেক এই ফার্স্টলেডি। এ বিষয়ে লাহোর ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসমা ফাইজ বলেন, মনে করা হতো বুশরা একজন অরাজনৈতিক মানুষ। সে জন্য বিরোধীরা তাকে নিজেদের জন্য হুমকি বলে মনে করতেন না। তবে গত কয়েকদিনে আমরা বুশরার ভিন্নরূপ দেখতে পেয়েছি।

ইসলামাবাদে আন্দোলনের আগে পিটিআই সমর্থকদের সঙ্গে প্রথমবারের মতো দেখা করেছিলেন বুশরা। ইমরান খানকে রক্ষার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। এরপর ইসলামাবাদে যখন আন্দোলনকারী ও নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল, তখন হঠাৎই একটি ট্রাকের উপর দেখা যায় তাকে। এরপরই বুশরার দিকে সকলের নজর আসে। ট্রাকের পর থেকে পিটিআই সদস্যদের উদ্দেশ্যে চিৎকার করে বুশরা বিবি বলেন, আজ আপনাদের একটি প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। সেটি হলো ইমরান খান এখানে না আসা পর্যন্ত আপনারা চলে যাবেন না। ইসলামাবাদে আন্দোলন ঘিরে সংঘাতের জন্য বুশরার এ বক্তব্যকে দুষছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহসিন নাকভি। তিনি বলেছেন, এর জন্য শুধু বুশরা বিবিই দায়ী। রাজনৈতিক যাত্রাপথে আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনার জন্য বুশরা বিবি’র কাছে গিয়েছিলেন ইমরান খান। সে সূত্রে তারা ঘনিষ্ঠ হন। এরপর ২০১৮ সালে বিয়ে করেন। পাকিস্তানের রাজনীতিকে পরিবারতন্ত্র থেকে মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সে বছরই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন ইমরান খান। ২০২২ সালের এপ্রিলে পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটে হেরে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান। এরপর চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনের কয়েকদিন আগে তার তৃতীয় স্ত্রী বুশরা বিবিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ইসলামী আইন ভঙ্গ করে ইমরান খানকে বিয়ের অভিযোগ আনে পাকিস্তান সরকার। ওয়াশিংটনভিত্তিক নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ইমরান খানের সঙ্গে বুশরার সম্পর্কের কারণেই বিক্ষোভকারীদের কাছে তিনি বিশ্বাসযোগ্যতা পেয়েছেন। এই বিক্ষোভকারীরাই সেদিন ইমরানের মুক্তির দাবিতে ইসলামাবাদে বিক্ষোভ করেছেন। তবে বিক্ষোভে বুশরার ভূমিকার জেরে পিটিআইয়ের মধ্যে বিভেদ দেখা দিতে পারে বলে মনে করেন কুগেলম্যান। তিনি বলেন, বিক্ষোভে বুশরার উপস্থিতি বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে। কারণ, দলের অনেক নেতার সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব রয়েছে। এরপরও বুশরার এই ভূমিকা দলকে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে নিতে সহায়তা করবে। এটিই এখন দলটির কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার। এদিকে ইসলামাবাদে বিক্ষোভের আগে কারাগার থেকে নিজের দলের উদ্দেশ্যে একটি বার্তা দিয়েছিলেন ইমরান খান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি বলেছিলেন, রাজনীতির সঙ্গে বুশরা বিবির কোনো সম্পর্ক নেই। স্ত্রী হিসেবে তিনি শুধু আমার বার্তাগুলো পৌঁছে দেন। ইমরানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে আজ পিটিআইয়ের জনসংযোগ বিভাগও বলেছে, তিনি ইমরানের স্ত্রী হিসেবে বিক্ষোভের নেতৃত্ব দিয়েছেন, দলের কোনো রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নয়। পাকিস্তানে অনেক নারীই হঠাৎ রাজনীতিতে পা রেখেছেন। যেমন বলা চলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজীর ভুট্টোর কথা। বাবার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের সময় থেকে তিনি রাজনীতি শুরু করেন। রয়েছেন মরিয়ম নওয়াজ শরীফও। তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের ভাতিজি। বাবা নওয়াজ শরীফ কারাবন্দি হওয়ার পর তিনি রাজনীতিতে নাম লেখান। এই দু’জনের সঙ্গে বুশরা বিবিকে মিলিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে পাকিস্তানের এক বাসিন্দা লিখেছেন, ‘যখন দাবার সৈনিকেরা পরাজিত হয়, তখন (রাজাকে রক্ষা করতে) রানী এগিয়ে আসেন।’ বুশরা বিবির এই এগিয়ে আসাটা হয়তো কাজে লাগছে। বিক্ষোভে ট্রাকের উপর তার ছবিকে প্রশংসা করছেন অনেক পাকিস্তানি। এখন দেখার বিষয়, রাজনীতিতে ভুট্টো ও শরীফ পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলা ইমরান খানও এখন বুশরার ঘাড়ে ভর দিয়ে একই পথে হাঁটেন কিনা।