ওসমানীনগরে ধর্ষক পুত্রের বাবা-মা কারাগারে

Published: 5 October 2020

ওসমানীনগর সংবাদদাতা: সিলেটের ওসমানীনগরে বিয়ের প্রলোভনে কিশোরীকে ধর্ষণ ও তার গর্ভের সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবিতে দায়েরকৃত মামলায় ধর্ষকের বাবা-মা ও চাচাকে কারাগারে প্রেরণ করেছে আদালত।

সোমবার সিলেট চিপ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ১ম আদালতে অভিযুক্তরা জামিনের আবেদন করলে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক তাদের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরনের নির্দেশ দেন।

মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী হুসাইনুর রহমান লায়েছ ধর্ষকের পিতা-মাতা ও চাচাকে কারাগারে প্রেরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তবে এর পূর্বে ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ধর্ষিতা কিশোরীর মামাতো ভাই উপজেলার উসমানপুর ইউনিয়নের রাতখাঁই গ্রামের মজনু মিয়ার পুত্র রায়হান মিয়া বয়স অপ্রাপ্ত দেখিয়ে নারী ও শিশু আদালতে জামিন চাইলে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক তার জামিন মঞ্জুর করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

সোমবার কারাগারে প্রেরিত অভিযুক্তরা হলো ধর্ষক রায়হানের পিতা রাতখাই গ্রামের মজনু মিয়া, মাতা হামিদা বেগম ও চাচা কামরু মিয়া।

মামলার বাদি পক্ষের আইনজীবী হুসাইনুর রহমান লায়েছ ধর্ষকের পিতা-মাতা ও চাচাকে কারাগারে প্রেরণের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওই মামলার প্রধান অভিযুক্ত রায়হান বয়সে শিশু দেখিয়ে শিশু আদালতে জামিনের আবেদন করলেও সংশ্লিষ্ট আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মানবিক দিক বিবেচনা করে চূড়ান্ত পুলিশ রির্পোট আদালতে আসার পূর্ব পর্যন্ত তার জামিন মঞ্জুর করেছেন। হতদরিদ্র পরিবারের নির্যাতিতা কিশোরীটির স্বামী ও তার গর্ভের সন্তানের পিতৃপরিচয়ের স্বীকৃতির জন্য আইনি লড়াই অব্যাহত রয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার উসমানপুর ইউনিয়নের রাতখাই গ্রামের নির্যাতিতা কিশোরীর পিতা পেশায় একজন রিকশা চালক। নিজের সংসার চালাতে কষ্ট হওয়ায় ছোট বেলা থেকে একই গ্রামের মামা মজনু মিয়ার বাড়িতে বড় হতে হয়েছে ধর্ষিতা কিশোরীকে। কিশোরী মামার বাড়িতে থাকার সুবাদে তারই মামাতো ভাই রায়হান গত বছরের ১০ অক্টোবর রাতে প্রথমে ওই কিশোরীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে কিশোরীকে রায়হান বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে পর্যায়ক্রমে শারিরিক সম্পর্ক চালিয়ে যায়। এক পর্যায়ে কিশোরী তার পিতা-মাতাকে ঘটনাটি জানালে তারা রায়হানের পিতা মজনু মিয়া ও মাতা হামিদা বেগমের স্বরণাপূর্ন হন। এক পর্যায়ে রায়হানের বাবা-মা শিগ্রই নির্যাতিতা কিশোরীকে তাদের পুত্রবধূ হিসাবে ঘরে তুলার প্রতিশ্রুতি দেন। নিজ পরিবার থেকে এমন প্রতিশ্রুতির কথা জানতে পেরে রায়হান আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে বিয়ের প্রলোভনে কিশোরীর সাথে চালিয়ে যেতে থাকে শারীরিক সম্পর্ক। এক পর্যায়ে কিশোরী অন্তসত্তা হওয়ার বিষয়টি জানাজানির পর কয়েক দিনের মধ্যে রায়হানের ন্ত্রী করে ঘরে তুলা হবে এমন প্রতিশ্রুতিতে তাকে একই গ্রামে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন রায়হানের বাবা মজনু মিয়া। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় একাধিক সালিশ ব্যক্তি বর্গের সহায়তায় ধর্ষকের পরিবারের লোকজন কিশোরীকে ৫০ হাজার টাকা প্রদানের আশ্বাসসহ কিশোরীর গর্ভপাত করার প্রস্তাব প্রদান করে। এতে কিশোরীর পরিবার রাজি না হওয়ায় শুরু হয় গ্রাম্য শালিশ। কিশোরীকে রায়হানের ঘরে তুলা হবে এমন প্রতিশ্রুতিতে কিশোরীর পিতার একমাত্র সম্বল রিকশাটিও বিক্রি করতে হয়। নিজের সহায় সম্বল বিক্রি করে শালিশানদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন সুহারা পাননি রিকশাচালক কিশোরীর পিতা। অবশেষে ওই কিশোরী গত ৯ আগস্ট একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়। বর্তমানে কিশোরী দেড় মাসের কন্যা শিশুকে নিয়ে পিতার স্বীকৃতির দাবিতে একাধিকবার রায়হানের পরিবারের কাছে গেলে তাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে কিশোরীর পিতা বাদি হয়ে ওসমানীনগর থানায় ধর্ষণসহ নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন। ওই মামালায় ধর্ষক রায়হান (১৯),তার পিতা মজনু মিয়া,মাতা হামিদা বেগম ও চাচা কামরু মিয়ার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরোও ২-৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়।