কিশোরগঞ্জের ‘আবুরা সড়ক’ উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ সংবাদদাতা, ঢাকা : হাওরের বুকে দিগন্তে হারিয়ে যাওয়া পিচঢালা পথ। কেবল রাস্তা নয়, এ যেনো আরো বেশি কিছু। দ্বীপের মতো ভেসে থাকা গ্রাম, হিজল বন। তার পাশ দিয়ে যেন একেঁ বেঁকে চলে গেছে এক কালোরেখা। সেখানে ঢেউয়ের আছড়ে পড়ার শব্দ।
সব মিলিয়ে সৌন্দের্যের এক মহা-আয়োজন। এই অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক ভিড় করছে হাওরে।
অনিন্দ্যসুন্দর সড়কটি উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আজ বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে এটি উদ্বোধন করেছেন তিনি।
গণভবন থেকে মিঠামইনের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ অডিটরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে উদ্বোধন করা হয় অলওয়েদার সড়কটি। অনুষ্ঠানে মিঠামইন প্রান্তে স্থানীয় সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরীসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় গণ্যমান্য লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধন করা সড়টির হাত ধরে বদলে গেছে কিশোরগঞ্জের হাওরের দৃশ্যপট। এক সময়ের বিচ্ছিন্ন ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলা যুক্ত হয়েছে পরস্পরের সঙ্গে। দৃষ্টিনন্দন অল ওয়েদার সড়কটি দেখতে পর্যটকরা দলে দলে ভিড় করছে হাওরে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, পর্যটন সম্ভাবনার পাশাপাশি সারাদেশের সাথে সড়কপথে হাওরের যোগাযোগের ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে এই সড়ক।
জানা গেছে, গত অর্থ বছরে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অল ওয়েদার সড়কটি নির্মাণ করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সংশ্লিষ্টরা বলছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর পর্যন্ত বাড়ানো হবে সড়কটি। এ কাজটি শেষ হলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হবে কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চল। কেবল বর্ষায় নয়, শুকনো মৌসুমেও হাওরে চলাচলের জন্য নির্মিত হয়েছে ৩৬ কিলোমিটার সাব-মার্সেবল সড়ক। নদ-নদীতে বসানো হয়েছে বেশকিছু ফেরি।
কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল আলম জানান, সড়কটি আরো দৃষ্টিনন্দন করতে দুইপাশে গাছপালা লাগানোর পৃথক আরেকটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এজন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে।
এ প্রসঙ্গে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, সারা বছর চলাচল উপযোগী ‘আবুরা’ সড়কটি নির্মিত হওয়ায় স্থানীয় লোকজনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি উন্মুক্ত হয়েছে পর্যটন খাতের বিপুল সম্ভাবনার দুয়ার। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো গেলে বিশ্বে অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র হতে পারে এই হাওর।
জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী বলেন, ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম সড়কটি এরই মধ্যে পরিচিতি পেয়েছে হাওরের বিস্ময় হিসেবে। সড়কটি নির্মিত হওয়ায় অনুন্নত হাওর এলাকায় আর্থ সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক পরিবর্তন সূচিত হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, দৃষ্টিনন্দন অলওয়েদার সড়কে জীববৈচিত্রে ভরপুর হাওরের হাওরের চিরকালীন সৌন্দর্য আরো বহুগুণ বেড়ে গেছে। এখন সারাদেশের সঙ্গে সারা বছর চলাচলের জন্য হাওরে উড়ালসড়ক নির্মাণ হলে হাওরবাসীর দাবি পূর্ণ বাস্তবায়ন হবে।