সুপার পাওয়ার হতে চাচ্ছে চীন, কিন্তু এখনো মধ্যম আয়ের দেশ

Published: 5 November 2020

।। মাইকেল শুম্যান ।। 

চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা এখন তুঙ্গে। এরমধ্যেই আগামীকাল ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। নির্বাচনের পর চীনের প্রতি মার্কিনিদের নীতির পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে এ নিয়ে অনেকেই বিতর্ক করছেন। কেউ বলছেন সম্পর্ক স্বাভাবিক করে আগের মতো ব্যবসায়িক সম্পর্ক ফিরিয়ে আনবে যুক্তরাষ্ট্র। আবার কেউ কেউ বলছেন আরো কঠোর পদক্ষেপ হাতে নেবে মার্কিন সরকার। তবে যাই হোক মার্কিনিদের সঙ্গে বিরোধিতার আগ থেকেই চীন বিশ্ব দরবারে একটি সুপার পাওয়ার হতে চাচ্ছে। কিন্তু সে লক্ষ্য এখনো অনেক দূরে বলে দাবি করছে মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গে প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়।

জানা যায়, সম্পাদকীয়তে চীনের ইতিহাস, পশ্চিমাদের সঙ্গে ব্যবসা ও রাজনীতি নিয়ে আলচোনা করেছে মার্কিন গণমাধ্যমটি।

এতে বলা হয়, নতুন মার্কিন সরকার চীনের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয় তা খুব গুরুত্ব বহন করে। কারণ করোনা ভাইরাসের মহামারীর কারণে মার্কিন অর্থনীতি খুব ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। অন্যদিকে চীন প্রাথমিক ক্ষতি কাটিয়ে অর্থনীতি সচল করতে সক্ষম হয়েছে। চীনা সরকারের দাবি, বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র যখন ভাইরাস মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছে সেখানে বছরের তৃতীয়াংশে আমরা ৪ দশমিক ৯ শতাংশ জিডিপি অর্জন করে দেখিয়েছি। যদিও করোনা ভাইরাসের কারণে দেশটির কতুটুকু ক্ষতি হয়েছে সে সম্পর্কে চীনা সরকার গোপনীয়তা অবলম্বন করেছে।

তাছাড়া, গত কয়েকমাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের বিরুদ্ধে যেসব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাতে চীনের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়েছে। যার কারণে বিশ্বের সুপার পাওয়ার হতে চীনা সরকার নতুন পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণের পদক্ষেপ নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতো প্রভাবশালী সংস্থার অপর প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে। পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে তারা তাইওয়ালন, হংকং ও ভারতের সঙ্গে বিরোধিতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে।

ব্লুমবার্গের সেই সম্পাদকীয় বলছে, হয়তো চীন যে পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ করেছে তাতে সফলতা পে্তেও পারে। এর কারণ তাদের আছে ঐতিহ্য ও লম্বা ইতিহাস। ১২শ শতাব্দিতে তারা বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছিল। যা স্থির ছিলো কয়েক শতাব্দি। তাছাড়া দেশটি প্রায় ২ হাজার বছর ধরেই বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির একটি। যুক্তরাজ্য ১৬শ শতাব্দিতে শিম্প বিপ্লবের আগেই চীনে হয়েছিল শিল্প বিপ্লব। সেইসময়ে চীনা সিল্ক ছিলো বর্তমান যুগের আইফোনের মতো। একবিংশ শতাব্দিতে ফের দেশটির উত্থান হতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে চীন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। উৎপাদন ও রপ্তানিতে অনেক দূর এগিয়েছে তারা। হয়তো তারা একটি সুপার পাওয়ারে পরিণত হতে পারে। যদি সেরকম কিছুই হয় তাহলে তা হবে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি।

তবে, চীন বিশ্ব দরবারে নিজেদের একটি শক্তি হিসেবে প্রমাণ করলেও সুপার পাওয়ার হতে চীনাদের অনেক দূর পথ পাড়ি দিতে হবে। এর আগে তারা সুপার পাওয়ার ছিলো আবার সেই পর্যায়ে পৌঁছে যাবে এমন বিশ্বাস করা বোকামী। কারণ, যুক্তিগত দিক দিয়ে চীন এখনো একটি মধ্যম আয়ের দেশ। সেইসঙ্গে দেশটিতে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যা অর্থনীতির জন্যে মোটেও ইতিবাচক কিছু নয়।