কেমন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করলো ইরান!
পোস্ট ডেস্ক :
জটিল এক পরিস্থিতিতে ইরানে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ইব্রাহিম রাইসি। তার প্রতি সমর্থন রয়েছে দেশের রক্ষণশীল, কট্টরপন্থি বিপ্লবীদের পক্ষ থেকে। তিনি দেশটির সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির অনুগত ও ঘনিষ্ঠ। বর্তমানে দেশের প্রধান বিচারপতি। আগামী আগস্টে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেবেন। আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির মতোই তিনি মাথায় কালো পাগড়ি পরেন। এর অর্থ তিনি একজন সাঈদ। হযরত মোহাম্মদ (স.)-এর বংশধর বোঝাতে এ পোশাকটি পরে থাকেন তারা।
আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি (৮২) যখন মারা যাবেন তখন তার উত্তরসুরি হিসেবে দেশের সুপ্রিম নেতা হবেন ইব্রাহিম রাইসি- এমনটা বলা হয়। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।
ইব্রাহিম রাইসির জন্ম ইরানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি বড় শহর মাশহাদে। এ শহরটিকে শিয়া মতাবলম্বী মুসলিমদের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে দেখা হয়। এই শহরেই আছে অষ্টম ইমাম- ইমাম রেজার সমাধিক্ষেত্র। ধর্মীয় একটি পরিবারে বড় হয়েছেন রাইসি। পেয়েছেন ধর্মীয় শিক্ষা। ১৫ বছর বয়সে কোম নগরীতে শিক্ষালয়ে যাওয়া শুরু করেন তিনি। খামেনিসহ বিখ্যাত কিছু প-িতজনের অধীনে শিক্ষালাভ করেছেন। প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের সময় যখন তার শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তখন তিনি মাত্র ৬ষ্ঠ গ্রেডের ক্লাসিক্যাল পড়াশোনা করেছেন, এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। দাবি করেছেন, তিনি শিক্ষায় পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন আইনশাস্ত্রে। ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের কয়েক বছর আগে তিনি কোম নগরীতে একটি প্রভাবশালী শিক্ষালয়ে প্রবেশ করেন। ওই সময় মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভির শাসন নিয়ে ইরানের বহু মানুষের অসন্তোষ ছিল। পরে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। রেজা শাহ পাহলভিকে নির্বাসনে পাঠাতে বাধ্য করেছিল যেসব ইভেন্ট তাতে অংশ নিয়েছিলেন রাইসি। এরপর গঠন করা হয় সুপ্রিম নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খামেনির অধীনে ধর্মীয় শাসন।
ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইরানের মাসজেদ সুলাইমানে প্রসিকিউটর অফিসে যোগ দেন। পরের ৬ বছরে তিনি অন্যসব বিচারকাজে প্রসিকিউটর হিসেবে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন। ডেপুটি প্রকিকিউটর হিসেবে নিয়োগ করার পর ১৯৮৫ সালে তিনি ইরানের রাজধানী তেহরানে চলে যান।
তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলোর। তারা বলেছে, ইরান ও ইরাকের মধ্যে আট বছরের ভয়াবহ যুদ্ধ শেষ হওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে ইরানে হাজার হাজার রাজনৈতিক বন্দিকে গোপনে ফাঁসি ও জোরপূর্বক গুম করে দেয়া হয়। এ সময় ‘ডেথ কমিশনে’র অংশ ছিলেন তিনি। ২০১৯ সালে ইরানের যে কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র অবরোধ দিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম ইব্রাহিম রাইসি। তিনি হতে যাচ্ছেন এমন টার্গেটেড প্রথম ইরানি প্রেসিডেন্ট। গণমৃত্যুদন্ড এবং জনবিক্ষোভকে দমন করায় তার ভূমিকার জন্য এসব ব্যবস্থা নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য ইরানে যে গণ মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে, জনবিক্ষোভ যেভাবে দমিয়ে রাখা হয়েছে, তার জন্য এই নেতার বিরুদ্ধে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের আহ্বান জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
১৯৮৯ সালে খামেনির সুপ্রিম নেতৃত্ব পাওয়ার পর ইরানের বিচার বিভাগে উত্থান ঘটে রাইসির। পরে তিনি তেহরানের প্রসিকিউটরের পদে আসীন হন। তারপর হন জেনারেল ইন্সপেকশন অর্গানাইজেশনের প্রধান। এরপর ২০১৪ সাল পর্যন্ত উপপ্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ের মধ্যেই ইরানে গণতন্ত্রপন্থি গ্রিন মুভমেন্ট বিক্ষোভ হয়।
উপপ্রধান বিচারপতি থাকা অবস্থায় তিনি দক্ষিণ খোরাসান থেকে এসেম্বলি অব এক্সপার্ট হিসেবে নির্বাচিত হন। এসেম্বলি অব এক্সপার্ট হলো এমন একটি পরিষদ, যার দায়িত্ব হলো সুপ্রিম নেতার মৃত্যুর পর তার উত্তরসূরি কে হবেন তা বাছাই করা। এখনও ওই পরিষদের নির্বাচিত পদে আছেন ইব্রাহিম রাইসি।
২০১৪ সালে ইরানের এটর্নি জেনারেল হিসেবে পদোন্নতি পান রাইসি। এই পদে দায়িত্ব পালন করেন ২০১৬ সাল পর্যন্ত। এ সময় তাকে সুপ্রিম নেতা আস্তানে কুদস রাজাভি নামের একটি দাতব্য ট্রাস্টের রক্ষক নিয়োগ করেন। এই ট্রাস্ট ইমাম রেজা সমাধিক্ষেত্র এবং সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনের ব্যবস্থাপনা করে থাকে। এই পদে থেকে তিনি শত শত কোটি ডলারের সম্পদ বিলিবন্টন করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি মাশহাদ শহরের ধর্মীয় এবং ব্যবসায়ী অভিজাতদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন।
ইব্রাহিম রাইসি দুটি মেয়ে আছেন। তাদের একজনকে বিয়ে দিয়েছেন আহমাদ আলামোল হোদা’র কাছে। তিনি মাশহাদে শুক্রবারে জুমার নামাজের সময় দীর্ঘদিন ধরে বয়ান দিয়ে আসছেন। তিনি অতি রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত।
২০১৭ সালে প্রথমবার প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ইব্রাহিম রাইসি। হাসান রুহানির বিরুদ্ধে তিনি হয়ে ওঠেন প্রধান প্রতিদ্বিন্দ্বী। কিন্তু নির্বাচনে অধিক উদার হাসান রুহানি বিজয়ী হন। ২০১৯ সালে প্রধান বিচারপতি হিসেবে ইব্রাহিম রুহানিকে নিয়োগ দেন সুপ্রিম নেতা। এই পদ ব্যবহার করে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেন। সরকারের ঘনিষ্ঠ এবং বিচার বিভাগের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদেরও তিনি প্রকাশ্য বিচার করেছেন। এরপরই তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নেমে পড়েন।