রংপুরে সংঘর্ষে আওয়ামী লীগ নেতাসহ নিহত ৪
বিশেষ সংবাদদাতা :
রংপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচীতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে একজন আওয়ামী লীগ নেতাসহ চারজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া উভয় পক্ষের শতাধিক আহত হয়েছেন। এসময় রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে।
রোববার (৪ আগস্ট) দুপুরের দিকে নগরীর সিটি করপোরেশনের সামনে, সুপার মার্কেট, জাহাজ কোম্পানি ও পায়রা চত্বরে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকেই রংপুর মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয় ঘিরে লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। অন্যদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন নগরীর টাউন হল চত্বরে। সেই সাথে নগরীর বিভিন্ন পাড়া মহল্লার অলিগলিতে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন।
নিহতদের মধ্যে একজন সিটি কর্পোরেশনের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হারাধন হারা। বাকি তিনজনের নাম পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গের সরদার মিজানুর রহমান মিজান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আন্দোলন ঘোষিত এক দফা দাবিতে রংপুরের রাজপথে দখলে নিয়েছে আন্দোলনকারীরা। নগরীর কয়েক স্থানে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। তাদের যোগ দিয়েছেন সরকারবিরোধী সংগঠনগুলো। তাদের মিছিল স্লোগানে প্রকম্পিত হয়ে উঠছে পুরো রংপুর মহানগর।
রোববার সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে খন্ড খন্ড মিছিল এসে রংপুর টাউন হল সংলগ্ন সড়কে জমায়েত হতে থাকে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে চারপাশ। এতে বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা সমবেত হন। তাদের এই জমায়েতে সরকারবিরোধী ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতাকর্মীদের দেখা গেছে। এসময় আন্দোলনকারীরা প্রধান সড়ক অবরোধ করে সেখানে বিক্ষোভ করেন।
এদিকে অসহযোগ আন্দোলনের কারণে নগরীর দোকানপাট, শপিং মলসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। সীমিত আকারে রিকশা, অটোরিকশা চলাচল করছে।
এদিকে, দুপুর পৌনে ১২টার থেকে জাহাজ কোম্পানি মোড় এলাকায় অবস্থান নেয়া সরকারদলীয় সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তারা মিছিল নিয়ে টাউন হল অভিমুখে রওনা দেন। সিটি বাজার এলাকার কাছাকাছি মিছিলটি পৌঁছলে সেখানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে নগরীর অলিগলিতে অবস্থান নিয়ে আন্দোলরত শিক্ষার্থী খণ্ড খণ্ড মিছিল করে।
তবে বড় ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়।
শিক্ষার্থী মৌমিতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের এখন আলোচনায় বসতে বলতেছেন। তার বাবা তো আলোচনায় বসেননি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমার ভাইয়ের লাশের ওপর দিয়ে আলোচনায় বসতে পারব না। তাই আর কোন আলোচনা নয়, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ চাই।’
শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান সরকার পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবির ওপর ভর করে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করছে। আমি প্রশাসনের ভাইদের বলব আপনার নিরপেক্ষ থাকেন। কারণ যারা আন্দোলনে রয়েছে তারা আপনার ভাই-বোন। তাদের ওপর গুলি করবেন না।’
এ ব্যাপারে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে আমরাই অনেকটা অবরুদ্ধ রয়েছি। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।