সফওয়ান (রা.) যেভাবে ইসলাম গ্রহণ করেন
মাইমুনা আক্তার
সফওয়ান (রা.) ছিলেন জাহেলি যুগে কুরাইশ-নেতাদের অন্যতম। বিশুদ্ধভাষী ও সাহিত্যিক। উদার মনের ব্যক্তি। জনসেবক ও আতিথ্যপরায়ণ।
কথিত আছে যে সফওয়ান, তাঁর পিতা উমাইয়া ও দাদা খালাফ এবং তাঁর পুত্র আব্দুল্লাহ ও নাতি আমর—এই পাঁচজনের সবাই মেহমানদারিতে ছিলেন সুখ্যাত। আরবসমাজে এ ধরনের আরেকটি পরিবার পাওয়া যায় না, যাতে পরপর পাঁচ ব্যক্তির জীবনে মেহমানদারির ধারা অব্যাহত রয়েছে। তবে খাযরাজ-নেতা সা’দ ইবনে উবাদাহ (রা.)-এর বংশেও এমন চার ব্যক্তি রয়েছেন। তাঁরা হলেন কাইস (রা.), ইবনে সা’দ (রা.), ইবনে উবাদাহ, ইবনে দুলাইম।
অর্থাৎ সা’দ (রা.) নিজে এবং তাঁর বাপ, দাদা ও পুত্র।
(আল-ইসতিআব : ২/৭২১পৃ., ক্র.১২১৪)
ইসলাম গ্রহণ ও তার পটভূমি
সফওয়ান ইবনে উমাইয়া (রা.) হুনাইন যুদ্ধের পর ইসলাম গ্রহণ করেন। মক্কা বিজয়ের সময় প্রথমে তিনি পালিয়ে যান। পরে তাঁর বন্ধু উমাইর ইবনে ওয়াহব আল-জুমাহির মাধ্যমে রাসুল (সা.) থেকে চার মাসের জন্য নিরাপত্তা মঞ্জুর করিয়ে নেন।
হুনাইন যুদ্ধের জন্য রাসুল (সা.) এই সফওয়ান থেকে কিছু অস্ত্র চেয়েছিলেন। তখন সফওয়ান বলেছিলেন, ‘তা কি কৌশলে হাতিয়ে নেওয়ার মানসে, না ধারস্বরূপ, যা ফিরিয়ে দেওয়া হবে? প্রতি উত্তরে রাসুল (সা.) ইরশাদ করলেন, তুমি নিশ্চিত থাকো! ধারস্বরূপ। তা অবশ্যই ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
অতঃপর তিনি রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে হুনাইন যুদ্ধে অংশ নেন কুফর অবস্থায়। হুনাইন যুদ্ধের পরপরই খাঁটি মনে ইসলাম গ্রহণ করেন।
হুনাইনের গনিমত থেকে রাসুল (সা.) তাঁকে ৫০টি উট দেন। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) আমার নিকট ছিলেন অত্যন্ত ঘৃণিত। তিনি আমাকে হুনাইনের গনিমত থেকে দিতে থাকলেন। এতে তাঁর প্রতি আমার ভক্তিশ্রদ্ধা বাড়তেই থাকল। একসময় তিনি আমার নিকট সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিতে পরিণত হলেন।
(আল-ইসতিআব : ২/৭১৯—৭২০পৃ.; আত-ত্বাবাক্বাতুল কুবরা : ৬/৭পৃ.;
আল-ইসাবাহ : ৩/৩৫০, ক্র.৪০৯৩)
ইসলাম গ্রহণকালে তাঁর ছিল ছয় স্ত্রী। রাসুল (সা.) তাঁকে যেকোনো চারজন রেখে বাকি দুজনকে ছেড়ে দিতে বললেন। তখন তিনি উম্মে ওয়াহাব নাম্নী বৃদ্ধা স্ত্রীকে ছেড়ে দেন। অপর এক স্ত্রী ফাখেতাহ বিনতে আসওয়াদ ইসলামী বিধি মোতাবেক বাদ পড়ে যায়। কারণ তাকে এর আগে তার পিতা উমাইয়া ইবনে খালাফ বিয়ে করেছিল।
হিজরত
ইসলাম গ্রহণের পর তিনি যথারীতি মক্কায় থাকতে লাগলেন। কেউ তাঁকে বলল, ‘যে ব্যক্তি হিজরত করল না, তার ধ্বংস অনিবার্য। যার জীবনে হিজরত নেই, তার ইসলামের কোনো মূল্য নেই।’ এ কথা শুনে সফওয়ান (রা.) দারুণভাবে হতাশ হয়ে পড়লেন। দেরি না করে হিজরত করলেন মদিনায়। সেখানে গিয়ে উঠলেন আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের বাড়িতে। অতঃপর তিনি বিষয়টি রাসুল (সা.)-এর খিদমতে উপস্থাপন করলেন। রাসুল (সা.) ইরশাদ করলেন, মক্কা বিজয়ের পর হিজরতের বিধান নেই। অতঃপর রাসুল (সা.) তাঁকে মক্কায় ফিরে যাওয়ার অনুমতি দিলেন। তিনি মক্কায় চলে গেলেন। পূর্বের ন্যায় মক্কায়ই বসবাস করলেন। (আল-ইসতিআব : ২/৭২০ পৃ.)
ইন্তেকাল
মদিনা থেকে ফিরে আসার পর মৃত্যু পর্যন্ত মক্কায়ই অবস্থান করেন। মুয়াবিয়া (রা.)-এর শাসনামলের শুরুর দিকে ৪২ হিজরি সনে ইন্তেকাল করেন।
(আল-ইসাবাহ : ৩/৩৫০ পৃ, ক্র.৪০৯৩, ৮/৪ পৃ., ক্র.১০৭৬৮, ৮/৩২ পৃ., ক্র.১০৮৫৮, ৮/২৩০—২৩১ পৃ.; আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৮/২৩ পৃ.;
আল-ইসতিআব ২/৭২২ পৃ., ক্র.১২১৪)