নিষিদ্ধ হিযবুতের মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড
পোস্ট ডেস্ক :
রাজধানীতে ‘মার্চ ফর খিলাফত’- কর্মসূচিতে মিছিল করেছে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীর। গতকাল পুলিশি বাধা অতিক্রম করে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের উত্তর গেট থেকে মিছিল নিয়ে পল্টন মোড় হয়ে বিজয় নগর পানির ট্যাঙ্কি এলাকা অভিমুখে যাত্রা করে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। পরে লাঠিচার্জ, টিআরশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এ সময় বেশক’জনকে আটক করা হয়েছে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় দুই সংবাদকর্মীসহ আহত হয়েছেন বেশক’জন।
গতকাল সকাল থেকেই নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের পূর্ব-ঘোষিত ‘মার্চ ফর খিলাফাত’- কর্মসূচি ঘিরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এলাকায় সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট হয়ে জুমার নামাজ পড়তে ঢোকা সকল মুসল্লিকেই তল্লাশি করা হয়। ব্যাগ হাতে নামাজ পড়তে আসা মুসল্লিদের সন্দেহ হলেই তল্লাশি চালায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা। উপস্থিত ছিল বিপুলসংখ্যক র্যাব সদস্যরাও। সাদা পোশাকে ছিল- গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা। জল কামান, এপিসি গাড়িও প্রস্তুত রাখা হয় পল্টন এলাকায়। নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের কর্মসূচি থেকে মুসল্লিদের বিরত থাকতে জুমার খুতবায় মসজিদের মাইকে পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধও করা হয়। তবে এতকিছুর পরও সরজমিন দেখা যায়, জুমার নামাজের সালাম ফেরানোর সঙ্গে সঙ্গেই বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেইটের সামনে থেকে মিছিল বের করেন হিযবুত তাহ্রীরের নেতাকর্মীরা। মিছিল নিয়ে মূল রাস্তায় নেমে ব্যানার ঠিক করাসহ নেতাকর্মীদের সুসজ্জিত করার জন্য বেশ কিছু সময় নিলেও কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে দেখা যায়নি।
এরপর তারা ব্যানার, ফেস্টুন সংবলিত মিছিল নিয়ে পল্টন মোড়ের দিকে অগ্রসর হন তখন হাতেগোনা কয়েকজন পুলিশ সদস্য গিয়ে তাদের বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। তবে বাধা পেরিয়ে হিযবুত তাহ্রীরের মিছিলটি পল্টন মোড়ের দিকে এগুতে থাকলে তাতে আবারো বাধা দেয় পুলিশ সদস্যরা। দ্বিতীয় দফার পুলিশি বাধা ভেঙে পল্টন মোড় হয়ে হিযবুত তাহ্রীরের মিছিল বিজয় নগরের দিকে চলে যায়। এ সময় পল্টন মোড়ের টার্নিংয়ে উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। র্যাব, ডিবি, সিটিটিসি সহ প্রায় সকল বাহিনীর সদস্যরাই ছিলেন। হিযবুত তাহ্রীরের নেতাকর্মীরা তাদের খেলাফতের মিছিল নিয়ে বিজয় নগর পানির ট্যাঙ্কি এলাকায় অগ্রসর হয়। এ সময় তারা নানা স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের মিছিল নির্ধারিত স্থান পানির ট্যাঙ্কি থেকে ঘুরে আবারো পল্টন মোড়ের দিকে রওনা হয়। তখন মিছিলটি লক্ষ্য করে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে পুলিশ। এ সময় হিযবুত তাহ্রীরের নেতাকর্মীরাও পুলিশকে ধাওয়া দেয়। শুরু হয় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এ সময় ইটপাটকেল, সাউন্ড গ্রেনেড ও লাঠিচার্জে দুই সংবাদকর্মীসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। বেশ কিছু সময় ধাওয়া-পাল্টার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মিলিত তোপের মুখে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় হিযবুত তাহ্রীরের নেতাকর্মীরা। মিছিলকারীরা অলিগলিতে ঢুকে পড়লে লাঠি হাতে পুলিশ তাদের তাড়া করে কয়েকজনকে আটক করে। কিছুক্ষণ পরে তারা আবার সংগঠিত হয়ে পল্টন মোড়ের দিকে মিছিল নিয়ে আসার চেষ্টা করে। পুলিশকে রুখে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে তারা। এ সময় পুলিশ বিক্ষোভকারীদের উপর সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে মিছিলটি আবারো ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে হিযবুত তাহ্রীরের কয়েক সদস্যকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্থানীয় কিছু দোকানিও ককেজনকে আটক করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেন। পরে তাদের শাহ্বাগ, রমনাসহ বিভিন্ন থানায় পাঠানো হয়। আর একজনকে সোপর্দ করা হয় সিটিটিসি সদস্যদের কাছে।
মিছিলে যোগ দেয়া দনিয়া কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সায়েম বলেন, আমরা এখানে এসেছি খেলাফতের জন্য। আমার সঙ্গে আরও অনেকে এই জায়গায় এসেছেন মিছিলে যোগ দিতে। ঢাকার বিভিন্ন এলাকাসহ ঢাকার আশেপাশের অনেক এলাকা থেকেও বিপুলসংখ্যক লোক এই মিছিলে যোগ দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। তবে কীসের খেলাফত, কেনই বা তারা খেলাফতের ডাক দিচ্ছেন এই বিষয়ে তেমন কিছুই বলতে পারেননি মিছিলে যোগ দেয়া এই শিক্ষার্থী। প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল আলিম নামে এক মুসল্লি বলেন, আসলে এই খেলাফতের মিছিলে বায়তুল মোকাররমে নামাজ পড়তে আসা অনেক সাধারণ মুসল্লি না জেনেই যোগ দিয়েছিলেন। পরে পুলিশের বাধার মুখে তারা নিষিদ্ধ সংগঠনের কথা জানতে পেরে চলে যান। তিনি বলেন, হিযবুত তাহ্রীর এই মিছিলে যোগ দেয়া অনেকের হাতেই সাদা ও কালো পতাকা ছিল। সাদা রঙের পতাকায় কালো হরফে ও কালো রঙের পতাকায় সাদা হরফে আরবি ভাষায় বিভিন্ন কিছু লেখা ছিল। তাদের অনেকের হাতে আবার গেরুয়া রঙের ব্যানার ও পতাকা ছিল। যার বেশির ভাগই বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি ভাষায় লেখা ছিল- ‘ডিমান্ড দ্য ম্যাথোড অফ প্রফেটহুড মার্চ ফর খিলাফাহ্’। যার বাংলা-‘নবুয়তের আদলে খিলাফত প্রতিষ্ঠার দাবিতে মার্চ ফর খিলাফত’। অন্য ব্যানারে লেখা ছিল- মুক্তির এক পথ, খেলাফত খেলাফত।
এসব বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. খালিদ মনসুর বলেন, পল্টনের ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আটক করে বিভিন্ন থানায় পাঠানো হয়। সেই প্রেক্ষিতে আমাদের থানাতেও কয়েকজনকে পাঠানো হয়েছিল। পরে আমরা তাদেরকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরামর্শে ডিবি অফিসে পাঠিয়ে দিয়েছি।
এসব বিষয়ে ডিএমপি’র রমনা জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, আমরা পল্টন মোড় এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহ্রীরের ১২ জনকে আটক করেছি। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ ও যাচাই-বাছাই চলছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিযবুত তাহ্রীর সমর্থকদের মিছিল নিয়ে পল্টন হয়ে বিজয়নগরের দিকে এগোতে থাকলে পুলিশ টিয়ারশেল ছুড়ে ও লাঠিচার্জ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ওই সময় পুলিশের পাশাপাশি লুঙ্গি পরা এক ব্যক্তিকেও হিযবুত তাহ্রীর সদস্যকে পেটাতে দেখা যায়। পরে ওই ব্যক্তিকে আটক করে যৌথ বাহিনী। পরে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। ওই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে যান উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। পরে সেই ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে ডিবি কার্যালয়ের ফটক দিয়ে হেঁটে বের হয়ে রাস্তায় অপেক্ষমাণ গাড়িতে করে ওই ব্যক্তিকে নিয়ে যান। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ছাড়া পাওয়া ওই ব্যক্তি বায়তুল মোকাররম এলাকায় পানি সরবরাহ করে থাকেন।