ফিরে দেখা-২০২০
বড়লেখায় আলোচিত ৫ সিরিজ খুন, ৬ নৃশংস হত্যা ও রহস্যজনক মৃত্যু
আব্দুর রব, বড়লেখা : বড়লেখা উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউপির সীমান্তবর্তী পাল্লাথল চা বাগানে স্ত্রী-শ্বাশুড়ীসহ অবিশ্বাস্য ৫ সিরিজ খুন ও পরে খুনির আত্মহত্যার ঘটনাটি ছিল বিদায়ী ২০২০ সালের বড়লেখার সবচেয়ে আলোচিত হৃদয় বিদাকর ও বর্বরোচিত ঘটনা।
এ ঘটনায় শোকে স্তব্ধ ছিলেন মানুষজন। এছাড়াও আরো ৬টি নৃশংস্য হত্যাকান্ড ও রহস্যজনক মৃত্যু সর্বমহলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। বেশিরভাগ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের পুলিশ গ্রেফতার করেছে। বাকি ঘটনাগুলোর রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
১৯ জানুয়ারি ভোরে উপজেলার উত্তর শাহবাজপুর ইউনিয়নের পাল্লাথল চা-বাগানে পারিবারিক কলহের জের ধরে নির্মল কর্মকার তার স্ত্রী জলি বুনার্জিকে দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করে। জলিকে বাঁচাতে তার মা লক্ষ্মী বুনার্জি, পাশের ঘরের বসন্ত ভৌমিক, স্ত্রী কাননবালা এবং বসন্তের মেয়ে শিউলী ভৌমিক এগিয়ে এলে নির্মল তাদেরও কুপিয়ে হত্যা করে। ঘাতক নির্মল পালিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। হৃদয় বিদাকর ও বর্বরোচিত এ ঘটনায় শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েন সকল শ্রেণীর মানুষজন।
২৬ ফেব্রুয়ারী বড়লেখায় ধনাঢ্য লন্ডন প্রবাসী জয়নাল চৌধুরীর বাংলা বাড়িতে সাহিদা আক্তার নামে নবীগঞ্জের এক রূপসী তরুণীর রহস্যজনক মৃত্যু শুধু ‘টক অব দি বড়লেখা’ই ছিল না। ঘটনাটি ‘টক অব দি লল্ডনে’ পরিণত হয়েছিল। বিদায়ী বছর জুড়েই সুন্দরী এ তরুণীর মৃত্যুর রহস্য জানার জন্য বিভিন্ন মহল বেশ কৌতুহলী থাকতে দেখা গেছে।
১৯ মে নিখোঁজের পরদিন রহমানীয়া চা বাগানের একটি পরিত্যক্ত ঘর থেকে পুলিশ মৎস্য খামার মালিক সমছ উদ্দিনের জবাই করা লাশ উদ্ধার করে। তিনি গ্রামতলা গ্রামের আমির উদ্দিনের ছেলে। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডে জড়িত ৫ আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার ও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ৩টি দা উদ্ধার করে।
২১ মে রাতে উপজেলার আরেঙ্গাবাদ গ্রামের মুদি ব্যবসায়ী সালাহ উদ্দিনের ছেলে এসএসসি’র ফলপ্রার্থী জাকারিয়া হোসেন প্রতিবেশী প্রবাস ফেরত যুবক আজিম উদ্দিনের চুরিকাঘাতে নির্মমভাবে খুন হয়। ছেলে খুনের ঘটনায় সালাহ উদ্দিন ঘাতক আজিম উদ্দিনকে প্রধান আসামী করে থানায় মামলা করেন। মামলার ৬ মাস পর পলাতক আসামী আজিম উদ্দিন গত ১৮ নভেম্বর আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে বিজ্ঞ বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন।
২৩ জুলাই উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউপির চন্ডিনগর (হরিনগর) গ্রামে প্রকাশ্যে বন্ধু প্রবাসফেরৎ মাতাব উদ্দিনের দায়ের কোপে ব্যবসায়ী আব্দুল আহাদ (৩৫) নির্মমভাবে খুন হন। তিনি গ্রামের শফিক উদ্দিনের ছেলে। পওে পুলিশ ঘাতক বন্ধু মাতাব উদ্দিনকে গ্রেফতার করে।
৩১ জুলাই উপজেলার আহমদপুর গ্রামের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার সাইফুর রহমানকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর ঘাতকরা তার বাড়ির মেঝেতে তাকে শুইয়ে রাখে। ঘটনাটি আড়াল করতে সাপের কামড়ে তার মৃত্যু হয় বলে ঘাতকরা প্রচার করে। রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় সর্বত্র তোলপাড় শুরু হয়। অবশেষে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে হত্যার তথ্য উঠে আসে। এরপর প্রকৌশলী হত্যার অভিযোগে পুলিশ আহমদপুর গ্রামের আনছার আলীর ছেলে বাবলু আহমদ, জবলু হোসেন ও কামাল হোসেনকে গ্রেফতার করে।
৯ সেপ্টেম্বর রাতে উপজেলার বাউরিলখাল এলাকায় অস্থায়ী বসতঘরে দিনমজুর আমির উদ্দিন ও তার স্ত্রী বিলকিছ বেগমের ওপর স্থানীয় সন্ত্রাসীরা অতর্কিত হামলা চালায়। পাষন্ডরা বৃদ্ধ আমির উদ্দিনের মাথা, হাত ও পা তেথলে দেয়। কানের ভেতর সিক ঢুকিয়ে অপর কান দিয়ে বের করে। তাদের নির্যাতন মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানায়। সিলেট ওসমানী মেডিকেলে ৭ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় নিহত আমির উদ্দিনের মেয়ে জেনেফা বেগম জেবার হত্যা মামলায় পুলিশ এজাহার নামীয় আসামি আব্দুল্লাহ (২৬) ও হোসেন আহমদকে (৩৫) গ্রেফতার করে।