বড়লেখায় পানজুম দখলের ঘটনায় গ্রেপ্তার ২
বড়লেখা প্রতিনিধি :
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় উপজেলার দক্ষিণ শাহবাজপুর ইউনিয়নের বনাখলাপুঞ্জির পানজুম দখলের পর ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনায় জড়িত দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল বুধবার রাত তিনটার দিকে বড়লেখা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রতন দেবনাথের নেতৃত্বে একদল পুলিশ উপজেলার উত্তর ডিমাই গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মুখলেছ আলী (৪০) ও মহরম আলী ওরফে কুটুন মিয়া (২২)। তারা দুজন বড়লেখা সদর ইউপির উত্তর ডিমাই গ্রামের বাসিন্দা।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বড়লেখা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রতন দেবনাথ। তিনি বলেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এদিকে সাতদিন পেরিয়ে গেলেও গতকাল বৃহস্পতিবার (০৩ জুন) চারটায় এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত পানজুম দখলমুক্ত হয়নি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গতকাল বুধবার (০২ জুন) ২৪ ঘন্টার মধ্যে দখলদারদের সরিয়ে নেওয়ার সময় নিলেও তিনি তা দখলমুক্ত করতে পারেননি। এতে ভয়ে জুমে প্রবেশ করতে পারছে না খাসিয়ারা। জুম থেকে পান তুলতে না পেরে তারা কষ্টে দিন পার করছেন।
গত শুক্রবার (২৮ মে) সকালে বনাখলাপুঞ্জির জুম দখল করে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি। জুম দখলের পর সেখানে তারা একটি ঘরও নির্মাণ করেছে। একসপ্তাহের মধ্যে তাদের দাবিকৃত টাকা না দিলে খাসিয়াদের তারা জুমে প্রবেশ করতে দেবে না। এই ঘটনায় গত রোববার (৩০ মে) পুঞ্জির নারী মান্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) নরা ধার ও ছোটলেখা বাগানের প্রধান টিলা করণিক মো. দেওয়ান মাসুদ থানায় পৃথকভাবে দুটি মামলা করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, তারা দখল হওয়া বনাখলাপুঞ্জির পানজুম আইনি পক্রিয়ায় দখলমুক্তের পাশাপাশি জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। ইতোমধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া আগারপুঞ্জির খাসিয়াদের সহস্রাধিক পানগাছ কাটার ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বেরা করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
এদিকে পানজুম দখল ও পানগাছ কাটার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আদিবাসী নেতারা। তারা দ্রুত জুম দখলমুক্ত করে খাসিয়াদের বুঝিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
ছোটলেখা চা বাগানের ব্যবস্থাপক শাকিল আহমদ মুঠোফোনে বলেন, খাসিয়ারা আমাদের কাছ থেকে টিলাভূমি উপ-ইজারা নিয়ে পান চাষ করছে। তাদের পানজুম দখল ও পানগাছ কাটার ঘটনায় আমরা থানায় মামলা করেছি। আমরা খাসিয়াদের পাশে রয়েছি।
এদিকে পানজুম দখল ও পুঞ্জির সহস্রাধিক পানগাছ কেটে ফেলার ঘটনায় বুধবার (২ জুন) বিকেলে মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট ডাড্লী ডেরিক প্রেন্টিস, বৃহত্তর সিলেট আদিবাসি ফোরামের মহাসচিব ফিলা পতমী, বাসদ মৌলভীবাজার জেলা শাখা সদস্য অ্যাডভোকেট মো. আবুল হাসান বনাখলাপুঞ্জি ও আগারপুঞ্জি পরিদর্শন করেছেন। তারা পুঞ্জি দুটিতে ঘুরে মান্ত্রী (পুঞ্জি প্রধান) ও খাসিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। মৌলভীবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট ডাড্লী ডেরিক প্রেন্টিস বলেন, খাসিয়াদের পানজুম দখল ও পানগাছ কাটার ঘটনাগুলো ন্যাক্কারজনক ও দুঃখজনক।
বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার বৃহস্পতিবার (০৩ জুন) বিকেলে মুঠোফোনে বলেন, দখলদারদের অন্যত্র সরিয়ে নিতে স্থানীয় চেয়ারম্যান ২৪ ঘন্টা সময় নিয়েছিলেন। তিনি তাদের সরাতে পারেননি। এখন আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় তাদের (পানজুম দখলকারীদের) উচ্ছেদ করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই ঘটনায় দখলকারীদের মধ্যে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। খাসিয়াদের সর্বত্মক আইনি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আগারপুঞ্জি পুঞ্জির পানগাছ কাটার ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। জড়িতদের খুঁজে বেরা করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।