বাইডেন-পুতিন শীর্ষ সম্মেলন: জেনেভা-সুইজারল্যান্ড কেন?

Published: 7 June 2021

সহিদুল আলম স্বপন, জেনেভা, সুইজারল্যান্ড :

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং রাশিয়ার প্রেসিড্ন্ট ভ্লাদিমির পুটিন বিশ্ব সংকটের কথা মাথায় রেখে ১৬ জুন সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় একটি সঙ্কট শীর্ষ সম্মেলনে বসতে যাচ্ছেন।কিন্তু জেনেভা সুইজারল্যান্ড কেন তাদের পছন্দ ?
 
১৯৮৫ সালের নভেম্বরে রিগান-গর্বাচেভ শীর্ষ সম্মেলনের পর জেনেভাতে এটি প্রথম শীর্ষ-মার্কিন-রাশিয়ার বৈঠক হবে। এটি সুইজারল্যান্ডের জন্য কূটনৈতিক সাফল্য এবং বিশ্বব্যাপি এর প্রশংসা করা হচ্ছে। এই জাতীয় সংবেদনশীল এবং উচ্চ-প্রোফাইল ইভেন্টের জন্য শীর্ষ সম্মেলনের স্থানটি বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে, তিনটি প্রধান মানদণ্ড কাজ করে ।
 
প্রথমত, অবকাঠামো: নিউইয়র্কের পরে জাতিসংঘের দ্বিতীয়-গুরুত্বপূর্ণ অবস্হান হিসেবে নিঃসন্দেহে জেনেভা এবং এখানে প্রয়োজনীয় সব সুযোগ সুবিধা রয়েছে। রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  জেনেভায় বিশাল মিশন পরিচালনা করে। দুটি দেশই প্রচুর অর্থায়নে সেক্রিটসার্ভিস বা গোপন সংস্থা নিয়ে এখানে বেশ তৎপর এবং অবশেষে, মস্কো এবং ওয়াশিংটনের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা স্থানীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে বেশ ভালোই জানেন, বিশেষকরে যখন এই দুই নেতাকে রক্ষা করার বিষয়টি আসে।
 
দ্বিতীয়ত, এটি যে সিগন্যালটি প্রেরণ করতে চায় তা হলো সুসম্পর্ক । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র  – রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট বাইডেন-পুতিনের মধ্যে একটি বৈঠক হবে এটা অনেকটা প্রশ্নের বাইরে ছিল। যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার  সম্পর্ক এতটাই বৈরী যে  একে অপরের পক্ষে আমন্ত্রণ গ্রহণ করার পক্ষে নয়।বিশ্বের বর্তমান পরিস্হিতিতে এই সময় কোনও ন্যাটোভুক্ত রাষ্ট্রও ট্রামকার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার মতো নেই। উদাহরণস্বরূপ, ২০১০ সালে বারাক ওবামা এবং দিমিত্রি মেদভেদেভের মধ্যে প্রাগের শীর্ষ সম্মেলনে প্রাগের যে অবস্হান ছিল, রাশিয়ানরা এবার হেলসিঙ্কিকে প্রত্যাখ্যান করেছে এই বলে যে ফিনল্যান্ড ন্যাটোর সাথে ক্রমবর্ধমানভাবে কাজ করে চলেছে এবং ন্যাটোর সাথে ফিনল্যান্ডের সম্পর্ক রাশিয়ানদের একেবারেই অপছন্দ। বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ সুইজারল্যান্ড তাই সুস্পষ্টভাবেই পছন্দ ।
 
তৃতীয়ত, শীর্ষ সম্মেলনের অংশগ্রহণকারী এবং স্বাগতিক দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক একটি ভূমিকা পালন করে। ক্রেমলিন সুইজারল্যান্ডকে বেশ পছন্দ করেছে, বিশেষত যেহেতু তারা রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় যোগ দেয় নি। এবং মার্কিন দৃষ্টিকোণ থেকে সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে কোনও কথা হয়নি। হলোকাস্টের তহবিল এবং ব্যাংকিংয়ের গোপনীয়তা বা বিরুপ জলবায়ুর বিষাক্ততা নিয়ে টেবিলটক সেই কঠিন সময়গুলি এখন অনেকটাই অন্তরালে।যেমন জর্জ ডব্লু বুশের আমলে ওয়াশিংটনের মনোভাব ছিল সুইস পররাষ্ট্রনীতি খুব বেশি ফিলিস্তিন এবং অনেক ইরানপন্থী, যা কিনা একেবারে অমূলকও ছিলনা। 
 
সংক্ষেপে, মস্কো বা ওয়াশিংটন উভয়েরই এবার জেনেভার বিপক্ষে কিছু বলার নেই। অতীতে প্রায়শই উদ্ধৃত “জেনেভা স্পিরিট” যদি কিছুটাও পুনরুত্থিত হতে পারে, তবে সবাই লাভবান হবে, অন্তত নূতন বাইডেন প্রশাসন তাই চাইছে।        
 
সুইজারল্যান্ডের জন্য দৃশ্যমানতা: 
সুইজারল্যান্ডের হয়ে সুইস কূটনৈতিকরা এই ধরনের কূটনৈতিক অভ্যুত্থানে বেশ পটু। তারা যে কেবল পর্দার আড়ালেই তা করেন শুধু তাই নয়, সময়ে সময়ে দৃশ্যমান হয় বিশ্বশান্তি এবং নিরাপত্তা রক্ষায়। সিরিয়া, ইয়েমেন, লিবিয়া এবং সম্প্রতি সাইপ্রাসের বিষয় ছাড়াও জাতিসংঘের সদর দফতরে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং প্রতিদিন জেনেভায় এখনও অনেক গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন হচ্ছে।  যাইহোক, এই আলোচনার সীমিত সাফল্য এবং সীমিত দৃশ্যমানতা থাকলেও  বড় বড় সভা হচ্ছেই।
সাম্প্রতিক দশকগুলিতে, রাশিয়ান-মার্কিন শীর্ষ সম্মেলন রিক্যাভিক, ওয়াশিংটন, মস্কো, ভ্যানকুভার, হেলসিঙ্কি (দু’বার), লুজুবলজানা, ব্র্যাটিস্লাভা এবং প্রাগে অনুষ্ঠিত হয়েছে, তবে জেনেভাতে  হয়নি ৩৫ বছর ধরে।  ২০১৫ সালে ভিয়েনায় ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তির অগ্রগতি হয়েছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প সিঙ্গাপুরে কিম জং-উনের সাথে সাক্ষাত করেছেন।
 
 
আন্তর্জাতিক জেনেভা দীর্ঘদিন ধরে একটি শীর্ষ-স্তরের বৈঠকের আশা করেছিল এবং সুইস সরকার এর পক্ষে কাজ করে চলেছিল।  কূটনৈতিক কেন্দ্র হিসাবে জেনেভার ভূমিকা শক্তিশালী, এটি এখন আবার প্রমান হয়েছে।সুইজারল্যান্ডের জন্য এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রতিযোগিতামূলক।
 
এই ধরনের শীর্ষ সম্মেলন অংশগ্রহণকারীদের সাথে মুখোমুখি বসার একটি সুযোগ তৈরী করে।  গি পার্মোলা, যিনি এই বছর সুইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি সুইস উদ্বেগগুলি উপস্থাপন করার সুযোগ পাবেন।  কেবল বাইডেন এবং পুতিনের সংস্পর্শ পাওয়া সুইজারল্যান্ডের মতো ছোট্ট একটি দেশের পক্ষে প্রতিদিনের ঘটনা নয়।