মিথ্যা মামলা কি জুলাই অভ্যুত্থানের বিজয়কে ভূলুণ্ঠিত করছে?

Published: 8 December 2024

ড. মো: মাহবুবুল আলম

 

গত মাসের বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের খবর অনুযায়ী, ২৩ জুলাই বিএনপি কর্মী হিসেবে আটক আজাদকে ৫ আগস্টের একটি মার্ডার কেসে আসামি করা হয়। আজাদ এখানে রূপক মাত্র। সত্যটা হলো এরকম আরো শত শত মামলা সারা বাংলাদেশ জুড়ে দেয়া হচ্ছে। আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এক সেমিনারে বলেছিলেন, আগে পুলিশ কর্তৃক ফলস্ (মিথ্যা) কেইস দেয়া হতো, এখন দিচ্ছেন সাধারণ জনগণ। স্বরাষ্ট্র ও আইন উপদেষ্টা বারংবার বলছেন, ভুয়া মামলায় বাদীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার কোন লক্ষণ দেখা যায় নি।

আইন উপদেষ্টা কিছু বক্তব্যে বলেছেন, ব্যক্তি বিশেষের কারো বিরুদ্ধে মামলা করার অধিকার হস্তক্ষেপ করাটা উচিত হবে না, বিশেষ করে এই পরিস্থিতিতে যখন মানুষ ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পেতো। কিন্তু এই অধিকারের সুযোগ নিয়ে বর্তমানে মামলার নামে যা চলছে, তা একরকম নৈরাজ্য।

পুলিশি ব্যবস্থার পূর্ণগঠন, স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে পুলিশের দায়িত্ব পালন এই সমস্যার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। কিন্তু বিগত চার মাসে দেশের প্রধানতম আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়মের মধ্যে না আনতে পারা, অনধিকার চর্চা বলে সুযোগসন্ধানী কাউকে ঢালাওভাবে মামলা করার সুযোগ বা মামলা-বাণিজ্য পথ করে দেয়ার দায় এড়ানো কঠিন। ৫/১০ টি মামলা হলে চলতো কিন্তু যেখানে শ’য়ে শ’য়ে মামলা হচ্ছে যেখানে বাদী আসামিকে চেনে না-এরকম অন্যয্যতা এবং বিশৃঙ্খলা জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী। মধ্য-নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২৫০০ মামলা এটাই প্রমাণ করে, সুশাসনের যে উদ্দেশ্যে এই আন্দোলন তা অর্জন অনেকটাই সুদূরপ্রসারী।

মিথ্যা মামলার আরেকটি বড় দিক হলো, এটি প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত এবং তার অপরাধের মাত্রা কমিয়ে সাজা থেকে মুক্তি পাবার পথ সহজ করে দেয়। এটি কোনো অংশেই প্রকৃত পাপীকে রক্ষা করার চেষ্ঠার সমার্থক ছাড়া আর কিছুই নয়। বেশ কিছু মামলায় এমন কিছু মানুষকে আসামি করা হয়েছে বা হচ্ছে, যাতে প্রকৃত অপরাধীরা এই মামলাগুলোকে রাজনৈতিক ও অন্যায্য মামলা হিসাবে দেখানোর সুযোগ পাচ্ছে। সেক্ষেত্রে বিগত সরকারের বিরোধীদের দমনে ঢালাওভাবে দেয়া মামলাগুলোর সাথে এই মামলাগুলোর কোনো পার্থক্য থাকলো না। সুতরাং আইন ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এই মামলাগুলোতে শুধুমাত্র ‘বিব্রত’ হয়ে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করে আর চলছে না। জুলাই অভ্যুত্থানের প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধন ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় প্রকৃত অপরাধী শনাক্ত, সাজা নিশ্চিতকরণ, একইসাথে নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি বন্ধে উদ্যোগী হতে হবে। জুলাই অভুত্থানের মর্যাদা সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে হবে।