ভয়াবহ সহিংসতায় কলঙ্কিত দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল

Published: 22 August 2025

পোস্ট ডেস্ক :


ভয়াবহ সহিংসতায় আরেকবার কলঙ্কিত হলো দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল। এ অঞ্চলের দ্বিতীয় শীর্ষ প্রতিযোগিতা কোপা সুদারেমিকানার শেষ ষোলোর ম্যাচে মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনার ক্লাব ইন্দিপেনদিয়েন্তে ও চিলির ক্লাব ইউনিভার্সিদাদ দে চিলির। বুয়েনস আয়ার্সের আভেয়ানেদা স্টেডিয়ামে দু’পক্ষের সমর্থকরা রীতিমত রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়ান। ছুড়ি, লাঠি এমনকি সাউন্ড গ্রেনেডের ব্যবহারে অন্তত ১৯ জন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর। এ ঘটনায় একে অপরের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন দু’দেশের ফুটবলপ্রেমীরা।

মর্মান্তিক এ ঘটনায় স্টেডিয়াম থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে শতাধিক সমর্থককে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবলে এটিই সবচেয়ে বাজে ঘটনা। বার্তা সংস্থা এএফপির খবর, বুধবার ম্যাচ চলাকালীন বিরতির সময় স্থানীয় সমর্থকদের দিকে হাতের কাছে যা পান, লাঠি, বোতল, পাথর ছুঁড়ে মারেন চিলির সমর্থকরা। সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো স্টেডিয়ামে। ইন্দিপেনদিয়েন্তে সমর্থকরা এর জবাবে প্রতিপক্ষ গ্যালারিতে ঢুকে পড়ে ও দর্শকদের বেড়ধক মারধর করে। তাদের শারীরিকভাবে আহত করার পাশাপাশি বেশ কয়েকজনের কাপড়চোপড়ও জোর করে খুলে রাখা হয়। অনেকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এমন সময় আতঙ্কে অনেকে গ্যালারি থেকে ঝাঁপ দিলেও, অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান। এ সময় পুলিশ ও বেসরকারি নিরাপত্তাকর্মীরাও আক্রমণের শিকার হন।

পুলিশের আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদনে বলা হয়, তারা ‘আরও বড় ক্ষতি প্রতিরোধ’ করেছে। শেষ পর্যন্ত ৪৮তম মিনিটে ১-১ সমতায় ম্যাচ স্থগিত করা হয় এবং পরে ম্যাচটি বাতিল করা হয়। ঘটনাটির তদন্ত করছে দক্ষিণ আমেরিকার ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা কনমেবল। এ বিষয়ে ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বলেন, ‘ইন্দিপেনদিয়েন্তে ও ইউনিভার্সিদাদের মধ্যে ম্যাচটি সহিংসতার কারণে বাতিল হওয়ার তীব্র নিন্দা জানাই। ফুটবলে সহিংসতার জায়গা নেই।’

চিলির কনসাল জেনারেল আন্দ্রেয়া কনচা হেরেরা জানান, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাদের ৯৮ জন সমর্থক আটক রয়েছেন। চিলি সরকার জানায়, তাদের ১৯ জন নাগরিক হাসপাতালে ভর্তি, যাদের একজন ছুরিকাহত। দেশটির প্রেসিডেন্ট গ্যাব্রিয়েল বোরিচ তার দেশের মানুষের ওপর ‘বিচারবহির্ভূত’ আক্রমণের এ ঘটনায় সুবিচার প্রত্যাশা করেছেন। আহতদের পাশে দাঁড়াতে ও তদন্ত তদারকি করতে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বুয়েনস আয়ার্সে পাঠিয়েছেন। এদিকে ইন্দিপেনদিয়েন্তের সভাপতি নেস্টর গ্রিন্দেত্তির অভিযোগ, চিলির সমর্থকরা টয়লেট খুলে গ্যালারিতে মেরেছে। ২৯ বছর বয়সী এক স্থানীয় সমর্থক ফাকুন্দো মানেন্ত এএফপিকে জানান, চিলির সমর্থকরা পাথর, সিট এমনকি মলমূত্র… হাতের কাছে যা পেয়েছে। তা-ই ছুঁড়ে মেরেছে। চিলির ইউনিভার্সিদাদ সভাপতি মাইকেল ক্লার্ক এ ঘটনার পর মন্তব্য করেন, ‘এটি অলৌকিক যে কেউ মারা যায়নি।’

দু’দলের খেলোয়াড়দের অভিযোগ, পুলিশ দেরিতে হস্তক্ষেপ করে। অন্যদিকে চিলির ফুটবল সংস্থা (এএনএফপি) ইন্দিপেনদিয়েন্তেকে নিষ্ক্রিয় থাকার অভিযোগ তোলে। আর আর্জেন্টাইন ক্লাবটির দাবি, তারা সব নিয়ম মেনেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছিল। কনমেবলও জানিয়েছে, এ ঘটনায় তারা সর্বোচ্চ কঠোর পদক্ষেপ নেবে। ক্লাব দু’টির জরিমানা থেকে শুরু করে টুর্নামেন্ট থেকে নিষিদ্ধ হওয়ার মতো শাস্তিও হতে পারে।