হাকালুকির জলমহালের লীজ বাতিলের রায় বহাল : ২০ কোটি টাকার মাছ লুটের অভিযোগ

Published: 27 February 2021

বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : হাকালুকি হাওরের সর্ববৃহৎ জলমহালের লীজ বাতিলের রায় সুপ্রীমকোর্টের আপিল বিভাগ বহাল রেখেছেন।

গত বৃহস্পতিবার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসাইন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিক ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের গঠিত বেঞ্চ মাধবকুণ্ড মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সিভিল পিটিশন (৩৯০৪/২০১৯) খারিজ করে দিয়েছেন। তবে ইতিমধ্যে বাতিল ঘোষিত এ মৎস্যজীবি সমিতি জলমহালটি থেকে অন্তত ২০ কোটি টাকা মাছ লুট করেছে এবং অদ্যাবধি অবৈধভাবে মাছ ধরা অব্যাহত রেখেছে।

জানা গেছে, গুটাউরা হাওরখাল (বদ্ধ) জলমহালটি ১৪২২ বাংলা হতে ১৪২৭ বাংলা পর্যন্ত বন্দোবস্ত নিতে ৪টি মৎস্যজীবি সমিতি আবেদন করে। ২০ একরের উর্ধ্বের জলমহাল ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক সর্বোচ্চ দরদাতাদের লীজ দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু রহস্যজনকভাবে ভূমি মন্ত্রণালয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে সর্বোচ্চ দরদাতা বানিয়ে পানকৌড়ি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতিকে ইজারা দেয়। সর্বনিম্ন দরদাতা সমিতিকে ইজারা দেয়ায় সর্বোচ্চ দরদাতা সোনার বাংলা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি মহামান্য হাইকোর্টে রীট মামলা দায়ের করে (নং-৮০৩৪/২০১৫)। ভোলারকান্দি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি আরেকটি রীট মামলা (নং-৮০৭৮/২০১৫) করে। মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশন ৮০৩৪/১৫ ও ৮০৭৮/২০১৫ মামলা দু’টির বিচারে পানকৌড়ি মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির বেআইনী লীজ বাতিল করেন। রায়ের বিরুদ্ধে পানকৌড়ি ‘লীভটু আপীল’ করে (নং-৩৬১৬/২০১৫)। এ সংক্রান্ত মামলাগুলো একত্রিত করে আপীল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে আদেশ দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে পানকৌড়ি পুনরায় রিভিউ করে (নং-৪৩৫/২০১৬ ও ৪৩৬/২০১৬)।

এদিকে হাওরখাল জলমহালটি নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান অবস্থায় মাধবকুন্ড মৎস্যজীবি সমবায় সমিতি ১৪২৪ বাংলা হতে ১৪২৯ বাংলা পর্যন্ত উক্ত বিল বন্দোবস্তের আবেদন করে। প্রভাবশালীরা ভূমি মন্ত্রণালয়ের যোগসাজশে ১৪২৪ বাংলা হতে ১৪২৯ বাংলা পর্যন্ত মাধবকুণ্ড সমিতির নামে বন্দোবস্তের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি প্রেরণ করেন। ওই মৎস্যজীবি সমিতি আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে বেআইনিভাবে গত বছরের অক্টোবরে জলমহালের রাজস্ব পরিশোধ করে।

মাধবকুন্ড মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির ইজারার বিরুদ্ধে সোনার বাংলা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মৎস্যজীবি সমবায় সমিতির সভাপতি-সম্পাদকের হাইকোর্টের ১৫৬১/২০১৮ রীট মামলার রায়ে বলা হয় ভুমি মন্ত্রণালয়ের লীজ প্রদানে আইনগত কার্যকারীতা নেই বিধায় মাধবকুন্ড সমবায় সমিতির লীজ বাতিল করা হল। উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে মাধবকুন্ড সমিতি সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগে ৯৬৩/২০১৯ ও ৯৬৬/২০১৯ নম্বরে দুটি মামলা করে। উক্ত মামলায় জলমহালের উপর পক্ষগণকে নিজ নিজ অবস্থায় থাকার জন্য স্থিতাবস্থা জারী করা হয়। স্থিতাবস্থা জারীর পর মাধবকুন্ড সমবায় সমিতি আপীল বিভাগে লীভ টু আপীল দায়ের করে (নং-৩৯০৪/২০১৯ ও ১৯/২০২০)। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত উক্ত লীভটু আপিলের শুনানী শেষে সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগ সিভিল পিটিশন ডিসমিস করে দেন। এতে হাইকোর্টের ইজারা বাতিলের রায় বহাল থাকলো।

ইজারা বাতিল ও আপিল মামলায় উচ্চ আদালত কর্তৃক স্থিতাবস্থা জারির পরও হাকালুকির জলদস্যু নুরুল বাহিনীর ছত্রছায়ায় গত ১ জানুয়ারী থেকে অবৈধভাবে মাছ শিকার করছে মাধবকুণ্ড মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। প্রায় ২ মাসে সমিতিটি এ জলমহাল থেকে কয়েক কোটি টাকার মাছ বিক্রি করেছে। এখনও মাছ ধরা অব্যাহত রেখেছে।

বড়লেখা সোনারবাংলা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন জানান, আদালতে বাতিল ঘোষিত লীজি সমিতিটি হাওরখাল বিল থেকে ইতিমধ্যে অন্তত ২০ কোটি টাকার মাছ লুট করেছে। সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগে সিভিল পিটিশন ডিসমিসের মাধ্যমে প্রমাণ হলো মাধবকুণ্ড মৎস্যজীবি সমিতি অবৈধভাবে মাছ ধরেছে। তাদের লীভ টু আপিল পিটিশন খারিজের বিষয়ে পিটিশনারসহ বিভিন্ন দপ্তরে জাস্টিস ডিমান্ড নোটিশ পাঠানো হয়েছে।