বড়লেখায় সোনাই নদী তীরে পাউবো’র প্রতিরক্ষা কাজে অনিয়মের অভিযোগ
আব্দুর রব, বড়লেখা : বড়লেখার বর্ণি ইউনিয়নের মুদৎপুর ও মনাদী গ্রামে সোনাই নদীর তীরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৬৫ লাখ টাকার অস্থায়ী প্রতিরক্ষামুলক কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
তাদের আশংকা ঠিকাদারের নিম্নমানের কাজের জন্য বরাদ্দের সিংহভাগ অর্থ আসন্ন বর্ষায় পানির স্রোতে নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাবে। কাজের অনিয়মে একই এলাকায় ২ বছর আগের অর্ধকোটি টাকার প্রতিরক্ষা কাজ ইতিমধ্যে নদীতে ধসে পড়েছে।
জানা গেছে, উপজেলার বর্ণি ইউনিয়নের মুদৎপুর গ্রামের সোনাই নদীর দক্ষিণ তীরবর্তী ও মনাদী গ্রামের পশ্চিম তীরবর্তী রাস্তা, বাড়িঘর ও ফসলের মাঠ রক্ষার প্রতিরক্ষামুলক ব্যবস্থা নিতে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে আবেদন নিবেদন করেছেন। ইতিপূর্বে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সোনাই প্রকল্প নামে মুদৎপুরে আবুল হকের বাড়ির উত্তরাংশে সোনাই নদীর দক্ষিণ তীরে ৫৯ মিটার স্থানের অস্থায়ী প্রতিরক্ষামুলক কাজে ৩৯ লাখ ৯০ হাজার ৯২৮ টাকা এবং মনাদী গ্রামে ফারুক মিয়ার বাড়ির পাশের সোনাই নদীর পশ্চিম তীরে ৫৫ মিটার স্থানে অস্থায়ী প্রতিরক্ষামুলক কাজে ২৪ লাখ ৯৯ হাজার ১০ টাকা বরাদ্দ প্রদান করে। এ কাজের দায়িত্ব পায় মো. কামরুজ্জামান কনষ্ট্রাকশন কোং লিমিটেড নামক মৌলভীবাজারের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ওয়ার্ক অর্ডার পেয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার চলিত বছরের ১০ জানুয়ারী সোনাই নদী তীরবর্তী ভাঙ্গনে প্রতিরক্ষামুলক কাজ শুরু করেন। আগামী ৩০ এপ্রিল কাজ সম্পন্নের চুক্তি রয়েছে। কিন্তু কাজের শুরুতেই নিম্নমানের বল্লি ও দুর্বল বাঁশ ব্যবহারসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতর অভিযোগ উঠে।
রোববার বিকেলে সরেজিমেন গেলে স্থানীয় বাসিন্দা সিরাজ উদ্দিন, রুনু মিয়া, আবুল হোসেন, হারুন মিয়া, মহরম আলী, ফারুক মিয়া, জিয়া উদ্দিন, কামিল উদ্দিন, কবির আহমদ প্রমুখ অভিযোগ করেন, আমাদের বাড়িঘর, চলাচলের পাকা-কাঁচা রাস্তা, ক্ষেত খামার রক্ষার জন্য সরকার নদী ভাঙ্গন রোধে বরাদ্দ দিয়েছে, ঠিকাদারের কাজের অনিয়মের কারণে তা ভেস্তে যাবে। অনেক আবেদন-নিবেদনের পর সরকার বরাদ্দ দিলো। কিন্তু ঠিকাদারের নিম্নমানের কাঠের বল্লি ও বাঁশ ব্যবহারের কারণে চলিত বছরই প্রতিরক্ষা কাজ ধসে নদীগর্ভে বিলীনের আশংকা রয়েছে। খরস্রোতা নদীর প্রতিরক্ষা কাজে বাঁশের বল্লি ব্যবহার হাস্যকর। মাত্র দুই বছর আগের আরো প্রায় অর্ধকোটি টাকার প্রতিরক্ষা কাজ ইতিমধ্যে নদীতে ধসে পড়েছে। অথচ বরাদ্দের সঠিক ব্যবহার হলে এলাকাবাসী অনেক উপকৃত হতেন।
প্রতিরক্ষামুলক কাজের তদারকি কর্মকর্তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. সরওয়ার আলম চৌধুরী জানান, নদী তীরের প্রতিরক্ষামুলক কাজের জিও ব্যাগই আসল। ১টি কাঠের বল্লির অন্তর অন্তর ১টি বাঁশের বল্লি দেয়া যায়। বল্লির কারণে প্রতিরক্ষামুলক কাজের ক্ষতির আশংকা নেই। তবুও সরেজমিনে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।
লন্ডনে বিটিএ কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন
গত বুধবার লন্ডনের স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় বাংলাদেশী টিচার্স এসোসিয়েশন ইউ কে (বিটিএ) বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে এক ভার্চুয়্যাল অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সংগঠনের সভাপতি মোঃ আবু হোসেনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল বাসিত চৌধুরীর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এ কে আব্দুল মোমেন এম পি এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় পরিকল্পনামন্ত্রী মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান এম পি।
জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরিবেশনায় ছিলেন মোস্তফা কামাল মিলন। সভাপতি আবু হোসেন অনুষ্ঠানে সংযুক্ত সবাইকে স্বাগত জানান। এ সময় তিনি নিজের ও বিটিএ-র পক্ষ থেকে রাজনীতির মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং জাতীয় চার নেতাসহ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও প্রায় তিন লক্ষ বীরাঙ্গনার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং এই দীর্ঘ সংগ্রামে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা পালনকারী সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।
প্রধান অতিথি ডঃ এ কে আব্দুল মোমেন তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের একটি নাতিদীর্ঘ চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, পঞ্চাশ বছর আগে যে সব পন্ডিত বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন আর রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ বেশীদিন টিকে থাকতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছিলেন, আজকের বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তাদের কথাকে ভুল বলে প্রমাণ করেছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জিডিপি ছিল চার বিলিয়ন ডলার আর এখন তা তিনশ কুড়ি বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সময় বিরাশি শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নীচে ছিল, কিন্তু সেটা এখন কুড়ি শতাংশে নেমে এসেছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক প্রয়াসেই দেশে দারিদ্র মোচন ধারাবাহিকভাবে দ্রুত তরান্বিত হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, দেশের প্রথম বার্ষিক আর্থিক বাজেটের পরিমাণ ছিল পাঁচশ সাত কোটি টাকা আজ এর পরিমাণ গিয়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লক্ষ আটষট্টি হাজার কোটি টাকায়। অনুরূপভাবে মাথাপিছু আয় তিরানব্বই ডলার থেকে বাধীনতার অর্ধশত বছরে বেড়ে দু হাজার চৌষট্টিতে উপনীত হয়েছে। প্রধান অতিথি আরও বলেন, বাংলাদেশ কৃষি খাত ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। খাদ্য উৎপাদনে হয়েছে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিদ্যুৎ উৎপাদন তিন হাজার মেগাওয়াট থেকে বিশ হাজার চারশ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। মি. মোমেন মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে, ওই সময়ে ব্রিটেনে বসবাসকারী বাঙ্গালীদের অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সহযোগিতাসহ অন্যান্য সব ধরণের সহযোগিতার কথা শ্রদ্ধাভরে ও কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান বলেন, সব কিছুই শুরু হয়েছে আমাদের ভাষা আন্দোলন থেকে। গ্রামের সাধারণ মানুষের সাথে বঙ্গবন্ধুর আত্মার সম্পর্ক তাঁকে পৌঁছে দিয়েছিল স্বাধীনতা আন্দোলনের একক নেতৃত্ব। আজ গ্রামেগঞ্জে এমনকি অজপাড়াগাঁয়ে পর্যন্ত বিদ্যুতের আলো পৌঁছে গেছে। কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করায় গ্রামের মানুষের মাঝে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, একশ্রেণীর মানুষ যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করেছিল, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে তারাই আবার বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে অন্ধকার যুগে নিয়ে যাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নে আন্তরিক, সংকল্পবদ্ধ এবং সদাসচেষ্ট। বিশেষ করে বৃদ্ধ মানুষের অবস্থার পরিবর্তন, মহিলাদের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড এবং ছেলেমেয়েদের শিক্ষার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারসহ সাধারণ মানুষের সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
বিলেতে বসবাসকারী প্রবীণ রাজনীতিবিদ সুলতান মোহাম্মদ শরীফ তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশ সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন যে, দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশ অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। বিটিএ-র সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন ও ডক্টর রোয়াব উদ্দীন নির্ধারিত বিষয় ভিত্তিক বক্তৃতা দান করেন। তাঁদের আলোচনার বিষয় যথাক্রমে ছিল “মুক্তিযুদ্ধে জাতীয় চার নেতার অবদান” এবং “আমাদের স্বাধীনতা ও অর্জন”। বিটিএ-র সদস্যবৃন্দ ও তাদের পরিবারের সদস্যবর্গ এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কমিউনিটির সর্বস্তরের নেতৃবৃন্দ ও শুভাকাঙ্খীর দীর্ঘ সময়ের উপস্থিতিতে অন্যান্য সম্মানিত বক্তাগণ বাঙ্গালীর ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ আপামর জনসাধারণের আত্মবলিদান ও আত্মত্যাগের কথা সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেন এবং বাংলাদেশের অব্যাহত অগ্রযাত্রায় সবাইকে নিজ নিজ অবস্খান থেকে যথাযত ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান আর এ ক্ষেত্রে স্বীয় প্রতিশ্রুতির কথা ব্যক্ত করেন।
সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন,
দেওয়ান গৌস সুলতান (বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই ইন দ্যা ইউ কে), বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু মুসা হাসান (সাংবাদিক), বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা তোফাজ্জল করিম (আবু তাঈব, যুক্তরাষ্ট্র)। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন, কাউন্সিলর আহবাব হোসেন (স্পীকার, লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটস), কাউন্সিলর জোসনা ইসলাম (ডেপুটি মেয়র, লন্ডন বারা অব রেডব্রীজ), কাউন্সিলর আব্দুল জব্বার এম বি ই (ডেপুটি লীডার, ওল্ডহ্যাম), কাউন্সিলর হুমায়ুন কবির (ক্রয়ডন), কাউন্সিলর আয়েশা চৌধুরী (নিউহ্যাম), কাউন্সিলর আতিকুল হক (উইল্টশায়ার), মুহাম্মদ আব্দুর রাকীব (সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই ইন দ্যা ইউ কে), আব্দুল মুনিম (সভাপতি, বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন), আলিমুজ্জামান (যুক্তরাজ্য বঙ্গবন্ধু পরিষদ), আব্দুর রাজ্জাক (সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জাসদ ইউ কে), শাহিন আজমল (সাবেক ছাত্রনেতা যুক্তরাষ্ট্), প্রশান্ত পুরকায়স্থ (সভাপতি, হিন্দু পরিষদ), সালেহ আহমেদ (কোষাধ্যক্ষ, গ্রেটার সিলেট কাউন্সিল) ও নতুন প্রজন্মের একজন আর্লিন জেনসন।
শিক্ষকদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন, মিসবাহ আহমেদ (কোষাধ্যক্ষ), আশিদ আলী (প্রিন্সিপাল, লন্ডন এন্টারপ্রাইজ একাডেমী), মনজুর রেজা চৌধুরী (সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি), এ্যাডভোকেট শাহ ফারুক আহমেদ, জামাল আহমেদ (সাবেক সাধারণ সম্পাদক) রেহানা খানম রহমান, মমিনুল ইসলাম ফারুকী, মুনজেরিন রশিদ, রাজিয়া বেগম, এ কে এম ইয়াহিয়া, সৈয়দ আব্দুর রকিব, রেহেল চৌধুরী, আব্দুল হান্নান, শফি আহমেদ। অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বে কবিতা আবৃত্তি করেন শিশু শিল্পী এনায়া আহমেদ ও নাবহান রশীদ আদি, আফিফা রহমান, কবি গোলাম কবির, দেওয়ান গৌস সুলতান ও মুজিবুল হক মনি (তিনি জারিগানও গেয়েছেন)। স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন মিসবাহ আহমেদ, রেহানা খানম রহমান ও সাওদা মুমিন। নৃত্যে ছিলেন ইউসরা আশাবরী রশীদ। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গানসহ দেশাত্ববোধক গান গেয়ে শোনান শিশু শিল্পী প্রিয়ম পুরকায়স্থ, মোস্তফা কামাল মিলন, স্যামুয়েল চৌধুরী এবং তারেক সাঈদ (বাংলাদেশ থেকে)। সঞ্চালনায় ছিলেন মোস্তফা কামাল মিলন। সবশেষে সভাপতি মোঃ আবু হোসেন, দীর্ঘক্ষণ যাবত অনুষ্ঠানে যু্ক্ত থাকার মাধ্যমে উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যোগানোর জন্য মাননীয় মন্ত্রীদ্বয়সহ সংশ্লিষ্ট ও সংযুক্ত সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। প্রেস বিজ্ঞপ্তি-