মসজিদ কমিটি নিয়ে বিরোধের জের
বড়লেখায় যুবককে কুপিয়ে আহত করলো প্রতিপক্ষ

Published: 27 April 2021

বড়লেখা প্রতিনিধি :

বড়লেখায় মসজিদ কমিটির পদ-পদবি নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের লোকজন হিনাইনগর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা পুত্র তাজ উদ্দিনকে (৪৫) কুপিয়ে আহত করেছে। তিনি ৪ দিন ধরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার হিনাইনগর গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় আহত তাজ উদ্দিনের বড় ভাই ইমান উদ্দিন প্রতিপক্ষের ১০ জনের নামোল্লেখ করে থানায় মামলা (নং-১১) করেছেন। প্রতিপক্ষও থানায় পালটা মামলা করেছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার হিনাইনগর শাহজালাল নুতন জামে মসজিদের কমিটির পদ-পদবি নিয়ে হিনাইনগর এলাকার মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা মুস্তকিন আলীর ছেলে মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাজ উদ্দিনের সঙ্গে একই এলাকার জব্বার আলীর ছেলে মসজিদ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনের বিরোধ চলছে। শুক্রবার (২৩ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। দেলোয়ার হোসেনের বাড়ির সামনে আসা মাত্র তার বাবা জব্বারের নেতৃত্বে তার ওপর হামলা চালানো হয়। হামলাকারিরা তাজের মাথায় দা দিয়ে কোপ মেরে তাকে গুরুতর আহত করে। তাজকে মারধরের খবর পেয়ে তার ভাই আপ্তাব আলী, চাচাতো ভাই মঈন উদ্দিন এবং ভাতিজা সাইদুল ইসলাম ও এনু মিয়া এগিয়ে এলে হামলাকারীরা তাদেরও মারধর করে। আহত তাজকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

হামলার শিকার তাজ উদ্দিন মঙ্গলবার মুঠোফোনে জানান, ‘এখনও হাসপাতালে রয়েছি। পুরোপুরি সুস্থ হতে আরও কিছুদিন লাগবে। আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে হামলাকারিরা আঘাত করেছে। তারা আমার মাথায় দা দিয়ে কুপ দিয়েছে। এলাকার কয়েকজন মিলে আমরা মসজিদটি তৈরি করেছি। আমি মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক। দেলোয়ার হোসেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সে মসজিদের কমিটিতে থাকলেও সক্রিয় নয়। মসজিদ নিয়ে হে বিভিন্ন সময় বাজে মন্তব্য করেছে। যা এলাকার সবাই জানে। এছাড়া তার বাবা জব্বার আলী মাদাকাসক্ত। তিনি প্রায় রাতে তার বাড়িতে মদের আসর বসান। এসব নিয়ে আমি প্রতিবাদ করেছি। এতে তারা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ঘটনার রাতে তাদের বাড়ির সামনে একা পেয়ে জব্বার আলী ও তার ছেলে দোলোয়ার হোসেনসহ কয়েকজন মিলে মারধর শুরু করে। দা দিয়ে আমার মাথায় ও হাতে কোপ দিয়েছে। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করেছে। পরে ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন ছাত্রলীগের সেক্রেটারি জুনেদকে ফোন দিয়ে আনে। জুনেদের নেতৃত্বে কয়েকজন আমার বাড়িতে হামলা করেছে।’

মসজিদ কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কলেজ ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন জানান, ‘তাজ উদ্দিনের সঙ্গে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। এলাকার শিবিরকর্মী জাকারিয়া আহমদ সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ফেসবুকে লেখেছে। তাকে এসব বিষয় লেখালেখি না করতে বলেছি। এটা বলাই কি আমার অপরাধ? ঘটনার রাতে আমি তারাবি নামাজ পড়ে একটি দোকানে বসেছিলাম। এরইমধ্যে শিবিরকর্মী জাকারিয়া এলাকার ছাত্রদল নেতা জালাল আহমদকে নিয়ে আমাকে গালাগালি করে। পরে তারা আমাকে মারতে জড়ো হয়ে আমার বাড়ির সামনে আসে। বিষয়টি আমি উপজেলা যুবলীগের সেক্রেটারি কামাল ভাই ও উপজেলা ছাত্রলীগ সেক্রেটারি জুনেদ ভাইকে বলি। পরে তারা এসে পরিস্থিতি খারাপ দেখে পুলিশে খবর দেয়। তখন মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক তাজ উদ্দিন আমার বাড়ির সামনে এসে বলেন আমরা নাকি তার সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করেছি। একপর্যায়ে শিবিরকর্মী জাকারিয়া ও ছাত্রদল নেতা জালাল আহমদের নেতৃত্বে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এসময় কে বা কারা তাজ উদ্দিনের মাথা ফাটিয়েছে তা জানি না।’

উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুনেদ আহমদ জানান, ‘ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে তাজ উদ্দিনের কোনো বিরোধ নেই। মূলত এলাকার শিবিরকর্মী জাকারিয়া ফেসবুকে সরকার বিরোধী উস্কানিমূলক পোস্ট শেয়ার করে। এসব বিষয় লেখালেখি না করতে ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার তাকে নিষেধ করে। একারণে শুক্রবার রাতে দেলোয়ারকে মারধরের জন্য শিবিরকর্মী জাকারিয়া ও ছাত্রদল নেতা জালালসহ কয়েকজন জড়ো হতে থাকেন। খবর পেয়ে উপজেলা যুবলীগের সেক্রেটারি কামাল ভাইসহ বেশ কয়েকজন সেখানে যান। আমিও সেখানে যাই। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় পুলিশ আসে। এসময় শিবিরকর্মী জাকারিয়া ও ছাত্রদল নেতা জালাল আহমদের নেতৃত্বে আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এসময় হয়তো তাজ চাচা মাথায় আঘাত পেয়েছেন।’

থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার জানান, ‘হিনাইনগর এলাকায় দুইপক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। উভয়পক্ষই থানায় মামলা করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’