পাচারের টাকা ফেরাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৌশল

Published: 9 August 2022

বিশেষ সংবাদদাতা :


দেশ থেকে পাচার হওয়া টাকা ফিরিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোকে প্রচারে নামার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গতকাল সোমবার এসংক্রান্ত একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। আয়কর অধ্যাদেশ অনুসারে অফশোর ট্যাক্স অ্যামনেস্টি বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ ও প্রচারের নির্দেশনা দেশের সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীর কাছে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ‘অর্থ আইন, ২০২২-এর মাধ্যমে আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ধারা-১৯ ঋ অনুসারে চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়সীমার মধ্যে ৭ শতাংশ কর প্রদান করে বাংলাদেশের বাইরে যেকোনোরূপে গচ্ছিত অপ্রদর্শিত অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে বৈধভাবে দেশে এনে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করা যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এসংক্রান্ত এফই সার্কুলার চিঠি নম্বর ২৬, তারিখ : ১৮ জুলাই, ২০২২ এরই মধ্যে জারি করা হয়েছে। অফশোর ট্যাক্স অ্যামনেস্টি বিধানসংক্রান্ত বর্ণিত বিষয়টি শাখা পর্যায়ে বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রদর্শনসহ গ্রাহকদের মধ্যে বহুল প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পরামর্শ জ্ঞাপন করা হলো।

এক বছরে ১৬৬৩ কোটি কালো টাকা সাদা হয়েছে

২০২১-২২ অর্থবছরে মাত্র দুই হাজার ৩১১ জন করদাতা ঘোষণা দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বৈধ করেছেন। ২০২০-২১ অর্থবছরে এ সংখ্যা ছিল মাত্র দুই হাজার ২৫১ জন। সে হিসাবে এক অর্থবছরের ব্যবধানে কালো টাকা সাদা করা ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে মাত্র ৬০ জন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এমন তথ্যই জানিয়েছে।

সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে প্রায় এক হাজার ৬৬৩ কোটি কালো টাকা বৈধ হয়েছে। এর মাধ্যমে ১১৬ কোটি ২৭ লাখ টাকা কর অর্জন করেছে এনবিআর। অথচ ২০২০-২১ অর্থবছরে রেকর্ড প্রায় ২০ হাজার ৬৫০ কোটি অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বৈধ বা সাদা করা হয়েছিল।

বিগত বছরগুলোতে সরকার দেশের মধ্যে থাকা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আসছিল। গাড়ি-বাড়ি কিনেও অবৈধ টাকা বৈধ করার সুযোগ ছিল, কিন্তু এবারই প্রথম (চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে) বিদেশে পাচার করা অর্থ বা সম্পদের ঘোষণা দিয়ে তা সাদা করার সুযোগও দেয় সরকার। নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এ ঘোষণা দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

এনবিআরের পরিসংখ্যান বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি টাকা সাদা হয়েছে নগদ অর্থ, ব্যাংকে গচ্ছিত অর্থ ও সঞ্চয়পত্রে। এসব খাতে দুই হাজার ২৫১ জন কালো টাকা সাদা করার ঘোষণা দেন। এর বিপরীতে কর আহরণ হয় প্রায় ১১৩ কোটি টাকা।

ওই অর্থবছরে পুঁজিবাজারে টাকা সাদা করেছেন শুধু ৫১ জন। এ খাত থেকে কর আহরণ হয়েছে তিন কোটি ৩১ লাখ টাকা। আর ৯ জন উদ্যোক্তা নতুন শিল্প স্থাপনে সাড়া দেন। এর বিপরীতে কর পরিশোধ করেন ৯ লাখ টাকা।

২০২০-২১ অর্থবছরে রেকর্ড প্রায় ২০ হাজার ৬৫০ কোটি অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বৈধ বা সাদা করা হয়। এর মধ্যে নগদ টাকাই সাদা করা হয়েছিল ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাকি অর্থ বিনিয়োগ হয় জমি বা ফ্ল্যাট কেনা ও পুঁজিবাজারে। ১১ হাজার ৮৫৯ জন করদাতা এই পরিমাণ কালো টাকা সাদা করেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন চিকিৎসক, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ীসহ নানা পেশাজীবী করদাতা। দেশের ইতিহাসে স্বাধীনতা-উত্তর কোনো এক অর্থবছরে যা ছিল সর্বোচ্চ।