মূল্যস্ফীতি ৫-৬ মাসের মধ্যে সহনীয় হবে: গভর্নর
বিশেষ সংবাদদাতা :
আগামী পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে বলে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নবনিযুক্ত গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি কমানো, চাঁদাবাজি কমিয়ে আনা এবং উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হলে ধীরে ধীরে পাঁচ থেকে ছয় মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতিকে আমরা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারবো। এটাই আমরা আশা করছি। এজন্য আমাদের কাজ করতে হবে, সময় দিতে হবে।
বুধবার (১৪ আগস্ট) সচিবালয়ে এক পর্যালোচনা বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাজারে তিনটা অ্যাঙ্গেলে কাজ করার সম্ভাবনা আছে। একটি হলো সরবরাহ ব্যবস্থা। অর্থাৎ কীভাবে উৎপাদন বাড়িয়ে আমরা সরবরাহ বাড়াতে পারি এবং তার মাধ্যমে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব আনা। দ্বিতীয়ত চাঁদাবাজির মতো কিছু বিষয় উঠে এসেছে। এই জায়গাগুলোতে কাজ করতে হবে। তৃতীয়ত চাহিদার দিক নিয়ে কাজ করা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এই কাজটা করছে এবং আমরা আরেকটু পর্যালোচনা করে দেখব আরও কিছু করার আছে কি না।
তিনি বলেন, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি আছে, এটা অস্বীকার করে লাভ নেই। এজন্য আমরা যতটুকু আমদানি করতে পারতাম, ততটুকু পারছি না। সেটার একটা প্রভাব তো বাজারে থাকবেই।
দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অগ্রাধিকার হবে জানিয়ে তিনি বলেন, বাজারে তিনটা অ্যাঙ্গেলে কাজ করার সম্ভাবনা আছে। একটি হলো, সরবরাহ ব্যবস্থা। অর্থাৎ কীভাবে উৎপাদন বাড়িয়ে আমরা সরবরাহ বাড়াতে পারি এবং তার মাধ্যমে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব আনা যায়। দ্বিতীয়ত, চাঁদাবাজির মতো কিছু বিষয় উঠে এসেছে। এই জায়গাগুলোতে কাজ করতে হবে। তৃতীয়ত, চাহিদার দিক নিয়ে কাজ করা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক এই কাজটা করছে। আমরা আরেকটু পর্যালোচনা করে দেখব আরও কিছু করার আছে কিনা।
রিজার্ভ নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের রিজার্ভের সংকট আছে। রিজার্ভ সংকট রাতারাতি যাবে না, আমাদের হিসাব করতে হবে বাজারে কতটুকু সরবরাহ দিতে পারি। তবে যেটুকু মিনিমাম তা রাখতে হবে, অযৌক্তিক লেভেলে কমিয়ে দেওয়া যাবে না। তাহলে বাজারে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দেবে। সেটাকে রেখে আমদানিতে কোথায় কতটুকু ডলার দেওয়া যায়, তা দেখতে হবে।
অর্থ পাচারকারীদের শান্তিতে থাকতে দেওয়া হবে না মন্তব্য করে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, তারা যেন টাকার বালিশে না ঘুমাতে পারে। দরকার হলে আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগ করে পাচারকারীদের দৌড়ের ওপর রাখা হবে।
তিনি বলেন, আমার প্রথম কাজ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনা। এক্ষেত্রে সুদ হারে নতুন করে হাত দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। দ্বিতীয় পদক্ষেপ, ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। সরকার পরিবর্তনের কারণে কিছু অরাজকতা হতে পারে। এখানে অনেকে জোর করে মালিকানা বদল করেছে। এ জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলো আইনগতভাবে সমস্যার সমাধান করতে হবে। আইনগতভাবে যেটা সম্ভব সেটা করা হবে। অনেকের অনেক দাবি থাকতে পারে।
খারাপ ব্যাংকগুলোর প্রকৃত চিত্র উদঘাটন করতে চান জানিয়ে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আগে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত চিত্র কী, দেখা দরকার। শুধু দুর্বলই নয়, কতটুকু দুর্বল তা নির্ণয় করতে হবে। সেগুলোর দেখার পর মালিকানা বা বোর্ড পরিবর্তন করতে হতে পারে। সেখানে একীভূত করা লাগতে পারে। কোনো কোনো ব্যাংককে সরকারের মূলধনও দিতে হতে পারে। কেস বাই কেস পদক্ষেপ নিতে হতে পারে। তারপর ট্রাস্ট বা কমিশন করা লাগতে পারে।
তিনি বলেন, সাপোর্ট লাগলে বাংলাদেশ ব্যাংক দেবে। এক্ষেত্রে পাঁচ ছয় মাস লাগবে। তারপর রোডম্যাপ করতে হতে পারে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ লাগতে পারে। লুটপাট হয়েছে, বড় ধরনের। অনেক ব্যাংককে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব নাও হতে পারে।
গভর্নর বলেন, অর্থ পাচারকারীদের শান্তিতে থাকতে দেওয়া হবে না। তারা যেন টাকার বালিশে না ঘুমাতে পারে। দরকার হলে আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগ করে পাচারকারীদের দৌড়ের ওপর রাখা হবে। ব্যাংক খাত থেকে টাকা বের করে নেওয়ায় অনেকগুলো ব্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত ছিল তারা চিহ্নিত হলে শাস্তির আওতায় আনা হবে।
তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কাজই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা। সুতরাং এই দায়িত্ব আমরা চাই বা না চাই আমাদের ঘাড়ে আসবেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সফলতা বা ব্যর্থতা আন্তর্জাতিকভাবে দুটো বিষয়ের ওপর নির্ধারণ করা হয়। প্রথমটি হচ্ছে মূল্যস্ফীতির নিয়ন্ত্রণ এবং দ্বিতীয়টি রিজার্ভের অবস্থান। এগুলো গুরুত্ব দিতে হবে। যেহেতু এখন মূল্যস্ফীতি ঊর্ধ্বমুখী অপরদিকে রিজার্ভ নিম্নমুখী অবস্থায় আছে, তাই এই দুটোকে সমন্বয় করে আমাদের নীতি নির্ধারণ করতে হবে। যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে এই সূচক দুটিকে মাঝামাঝি অবস্থায় আনতে পারি। তবে রিজার্ভ বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমদানির বিষয়ও নজর দিতে হবে। আমদানি-রপ্তানি সমন্বয় করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
আর্থিক খাতের দুর্বলতার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক দায়ী উল্লেখ করে নতুন গভর্নর বলেন, বর্তমানে আর্থিক খাত খুব বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। এর মধ্যে ব্যাংক খাত অন্যতম। বেশিরভাগ ব্যাংক ভালো থাকলেও কয়েকটি ব্যাংক খারাপ অবস্থায় আছে, তাদের বিষয় বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হবে। এটি করতে গেলে সরকাররের সহায়তা লাগবে। কারণ দুর্বল ব্যাংকগুলোর মূলধন প্রয়োজন হবে। এই অর্থ সরকার দেবে নাকি বেসরকারি খাত থেকে আসবে এটা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয় রয়েছে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, ব্যাংকের খেলাপি ঋণের তথ্য একত্রিত করতে হবে। কারণ বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে খেলাপি ঋণ কমিয়ে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি আদালতে অনেক টাকা আটকে আছে। সব মিলে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরো বাড়বে।