কেন চীনা সেনারা ইউক্রেনে যুদ্ধ করছে?

Published: 12 April 2025

পোস্ট ডেস্ক :


৮ই এপ্রিল ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক্স-এ একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করার সময় ইউক্রেনীয় বাহিনীর হাতে বন্দী দুই চীনা নাগরিকের একজনকে দেখানো হয়েছে। তিনি একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও বলেন, চীন এখন সামরিকভাবে রাশিয়াকে সমর্থন করছে এবং এ বিষয়ে ‘যুক্তরাষ্ট্রের মনোযোগ দেয়া উচিত’। পরের দিন তিনি ওই দুই ব্যক্তির দ্বিতীয় ভিডিও পোস্ট করেন। এতে তাদের নাম ঝাং রেনবো এবং ওয়াং গুয়াংজুন বলে জানানো হয়। তাদের চীনা পাসপোর্টের ছবি প্রকাশ করা হয়।

জেলেনস্কি দাবি করেন, রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধরত ১৫০ জনেরও বেশি চীনা নাগরিকের কথা জানে ইউক্রেন। এ খবর দিয়ে অনলাইন দ্য ইকোনমিস্ট আরও বলেছে, চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে- তারা ইউক্রেনীয়দের দাবি যাচাই করছে এবং ‘কোনও পক্ষের সামরিক অভিযানে’ তার নাগরিকদের অংশগ্রহণকে সমর্থন করে না। যদিও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য দ্বৈত-ব্যবহারের সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে চীন, জ্বালানি ক্রয়ের মাধ্যমে রাশিয়ার অর্থনীতিকে সচল রেখেছে এবং যুদ্ধের জন্য ইউক্রেন ও ন্যাটোকে দোষারোপ করে প্রচারণা চালিয়েছে , তবুও এর নেতারা ধারাবাহিকভাবে নিরপেক্ষতা দাবি করেছেন এবং সরাসরি সামরিক সম্পৃক্ততা এড়াতে সতর্ক রয়েছেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধরত চীনা নাগরিকদের রাষ্ট্র-সমর্থিত বলে কোনও প্রমাণ নেই। তবে, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, তারা সেখানে রয়েছে। চীনা যোদ্ধারা যুদ্ধের সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের কৃতিত্বের ভিডিও পোস্ট করে আসছে। যারা রাশিয়ার হয়ে লড়াই করে তারা বলেছে- তারা রোমাঞ্চ এবং নগদ অর্থের সন্ধানে সেখানে গিয়েছে। কেউ কেউ জাতীয়তাবাদের আদর্শে পরিচালিত হয়েছে।

গানসু প্রদেশের ২৩ বছর বয়সী এক যুবক চীনের বাইরে অবস্থিত একটি স্বাধীন সংবাদমাধ্যম ইনিটিয়ামকে বলেছেন, তিনি ২০২৩ সালে উচ্চ মজুরির প্রতিশ্রুতি দেখতে পান সোশ্যাল মিডিয়ার একটি ভিডিওতে। এর পর মস্কোতে উড়ে যান। তিনি একজন অগ্নিনির্বাপক কর্মী ছিলেন এবং মাসে ৩০০০ ইউয়ান উপার্জন করতেন। ভাড়াটে হিসেবে তিনি পাঁচগুণ বেশি উপার্জন করতে পারতেন। চীনের ডুয়িনে নিজেকে ‘রেড ম্যাকারন’ পরিচয় দিয়ে আরেক যোদ্ধা বলেন, তিনি যুদ্ধের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চান। কারণ তিনি উগ্রবাদী চীনা চলচ্চিত্র দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তিনি রাশিয়ান পক্ষের সাথে যোগ দিয়েছিলেন এ জন্য যে, ভিসা পাওয়া সহজ ছিল।

চংকিংয়ের ৩৮ বছর বয়সী ঝাও রুই যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। তিনি ইউক্রেনকে সাহায্যকারী যেকোনো জাপানিদের সাথে লড়াই করতে চেয়েছিলেন। ২০২৩ সালে একটি ইউক্রেনীয় ড্রোন তাকে হত্যা করে। অনুশোচনার কারণে বেশিরভাগ চীনা সেনা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। মৃত্যুর আগে ঝাও ডুয়িনে ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। সেখানে তিনি চীনাদের যুদ্ধে যেতে নিষেধ করেন। তিনি বলেন, চীনেই চাকরি খুঁজুন। আপনিও একই পরিমাণ আয় করতে পারবেন।

আরেকজন ভাড়াটে সেনা ঝৌ ঝিকিয়াং ডুয়িনে বলেন, রাশিয়ানরা ‘আমাদের সাথে মানুষের মতো আচরণ করে না’। নির্বাসিত চীনা সাংবাদিক চাই জিংয়ের সাথে সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে, ‘রেড ম্যাকারন’ বলেছেন- রাশিয়ানরা তাদেরকে ‘কামানের খাবার’ হিসাবে ব্যবহার করছে। দুর্বল সরঞ্জামের অভিযোগ করার পরে তাকে রাশিয়ান পলাতকদের সাথে একটি গর্তে আটকে রাখা হয়েছিল। এখন তিনি লড়াই করার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেছেন। তাকে চলে যেতে দেওয়া হয়নি। তিনি মনে করছেন তাকে চীনা দূতাবাস সাহায্য করবে।

কিছু স্বেচ্ছাসেবক ইউক্রেনের পক্ষেও যুদ্ধ করছেন। ২০২৩ সালে এক্সে রাশিয়াবিরোধী এবং ইউক্রেনপন্থি বার্তা পোস্ট করার পর ইউনান প্রদেশের পেং চেনলিয়াংকে সাত মাস ধরে চীনে আটক রাখা হয়। ২০২৪ সালে তিনি ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর বিদেশী শাখায় যোগ দেন। সেই বছরের শেষের দিকে তাকে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর আগে পেং তাইওয়ানের পতাকা ধরে একটি ভিডিও তৈরি করেন। সেখানে তিনি বলেন- তিনি ২০২২ সালে ইউক্রেনের পক্ষে যুদ্ধ করে মারা যাওয়া তাইওয়ানীয় স্বেচ্ছাসেবক সেং শেং-কুয়াং-এর সাথে স্মরণীয় হতে চান।

উভয় পক্ষের চীনা যোদ্ধাদের মৃত্যুর পর ইন্টারনেটে বিতর্কের সূত্রপাত হয় যে- তারা কি সাহসী বীর, নোংরা ভাড়াটে সেনা নাকি বিভ্রান্ত জাতীয়তাবাদী। চীনা সরকার সেই বিতর্কে এখনও হস্তক্ষেপ করেনি। এখন হয়তো তাদের তা করতেই হবে।