অমানবিক
বাবার পরিচয় না থাকায় কবরস্থানেও ঠাঁই হচ্ছে না শিশু কন্যার
বিশেষ সংবাদদাতা : ঢাকার ধামরাইয়ের আমতা ইউনিয়নে বাবার পরিচয় না থাকায় কবরস্থানেও ঠাঁই হচ্ছে না নবজাতক কন্যাশিশুর।
তিন দিন আগে (বুধবার) ওই কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। শুক্রবার দুপুরে ওই শিশুটি মৃত্যুবরণ করে। সামাজিক সার্বজনীন কবরস্থানে দাফন করতে গিয়ে সমাজপতিদের বাধার মুখে পড়তে হয় মৃত ওই শিশুর পরিবারকে।
কবরস্থানে দাফন করার জন্য দুপুর থেকে এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত (রাত ৮টা) দেনদরবার করেও মাতুব্বরদের অনুমতি মেলেনি। ফলে মরদেহটি দীর্ঘ সময় ধরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে রয়েছে। এ নিয়ে শোকসন্তপ্ত ওই পরিবারের সদস্যদের মাঝে বিরাজ করছে গভীর শোকের মাতম।
এলাকাবাসী জানান, তিন কন্যাসন্তান রেখে খুন হন ওই গৃহবধূর স্বামী। তাই সন্তানদের মুখে দু’মুঠো অন্ন তুলে দিতে ওই বিধবা স্থানীয় একটি ইটভাটায় কাজ নেন। ১০ মাস আগে ওই ইটভাটায় জিন্নাত আলী নামে এক ধর্ষক ওই বিধবাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করলে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন। তিন দিন আগে তিনি যমজ কন্যাসন্তানের জন্ম দেন।
শুক্রবার দুপুরে তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়। পরিবারের লোকজন ওই অবুঝ শিশুকে গোসল করিয়ে ও কাফন পরিয়ে সার্বজনীন কবরস্থানে কবর দেয়ার জন্য অনুমতি নিতে কবরস্থান পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিএনপি নেতা মো. নুরুল ইসলাম খানের (নুরু কেরানি) কাছে যান।
তিনি তাদের দাফনের অনুমতি না দিয়ে বলেন, ওই শিশু জারজ সন্তান। তার কোনো পিতৃপরিচয় নেই। তাই তাকে কবরস্থানে দাফন করার অনুমতি দেয়া হবে না।
এ ব্যাপারে পরিবারের লোকজন কবরস্থান পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য মো. আবু সাইয়িদের কাছে গিয়েও অনুমতি মেলেনি ওই অবুঝ শিশুর মরদেহ দাফনের।
সভাপতি বলেছেন- যেখানে আমার সেক্রেটারি অনুমতি দেয়নি সেখানে আমি কী করে ওই বেওয়ারিশ মরদেহ দাফনের অনুমতি দেই।
এ ব্যাপারে কবরস্থান পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল ইসলাম খান ওরফে নুরু কেরানি বলেন, ওই শিশুটির কোনো জন্ম পরিচয় নেই। ওর মা ধর্ষণের শিকার হয়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়। তাই ওরা জারজ সন্তান। পিতৃপরিচয়হীন ওই বেওয়ারিশ লাশ কবরস্থানে দাফন করলে কবরবাসী কষ্ট পাবে। তাই দাফনের অনুমতি দেয়া হয়নি।
আমতা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মো. দুলাল হোসেন বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। নিষ্পাপ এক শিশু মৃত্যুর পর তার মরদেহ দাফন নিয়ে এমন নির্মমতা ঠিক না। অপরাধ করলে মা-বাবা করেছে। ওই শিশুটি তো নিষ্পাপ। তার তো কোনো অপরাধ নেই।
কাওয়ালিপাড়া বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক মো. রাসেল মোল্লা বলেন, এ ব্যাপারে কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।